অনুভবের যৎসামান্য (১৫)

ক্রুশ বহনের দায়

মানুষের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি, যুগে যুগে এমন কিছু মানুষ এসেছেন যারা কেবল নিজেদের জীবন নিয়েই ব্যস্ত থাকেননি, বরং তাদের চিন্তা বিস্তৃত হয়েছে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য। সমকালেই তারা চিন্তার নতুনত্ব দিয়ে তাদের চারপাশের অনড়-অবিচল সমাজকে বড়সড় ধাক্কা দিতে পেরেছিলেন, যদিও তৎকালীন মানুষ তাদেরকে খুব একটা গ্রহণ করেনি। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁদের চিন্তা এবং চিন্তার ব্যাখ্যা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। অজস্র মানুষ সেসব চিন্তার ভেতরে নিজেদের জীবনের জন্য দিকনির্দেশনা খুঁজে পেয়েছেন, সান্ত্বনা ও স্বস্তি পেয়েছেন।

এই ধরনের মানুষদেরকে ঈশ্বরের নির্বাচিত মহামানব হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে পরবর্তীকালের পৃথিবী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে তাদের গল্পগুলো হয়ে উঠেছে মিথ। এই লেখায় তেমনই একজনের কথা বলবো, বুঝতে চেষ্টা করবো তাঁর জীবন ও মৃত্যু বিষয়ক মিথগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য। তিনি যীশু খৃষ্ট।  

যীশুও ছিলেন ঈশ্বরের নির্বাচিত এবং প্রিয়তম একজন মানুষ। তবু তাকে কেন ক্রুশবিদ্ধ হতে হলো? এই মিথ আমাদের কী ইশারা দেয়? মিথ হলো এমনই এক বিষয় যেখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নই নেই, বরং আছে ইশারা ও ইঙ্গিত। আপনি মিথের গল্পগুলো বিশ্বাস করতেও পারেন, নাও পারেন, কিংবা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝখানে সংশয়ের দোলাচলে দুলতে দুলতে অসংখ্য প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু ইশারা এবং ইঙ্গিতগুলো বোঝার চেষ্টা করলে আপনার লাভ বৈ ক্ষতি হবে না কিছু। কারণ, হাজার হাজার বছর ধরে কিছু গল্প বা কাহিনি মানুষের মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে একেকটা মিথ তৈরি হয়। প্রকৃত ঘটনা জানার সুযোগ না থাকলেও বিভিন্ন সময়ের বহু মানুষের বিচ্ছিন্ন অথচ সম্মিলিত অংশগ্রহণে মিথ তৈরির ব্যাপারটা ঘটে এবং তাদের অনেকেই ঘটনাটিতে কিছু না কিছু তাৎপর্য সংযোজন করেন। কেন করেন? করেন এইজন্য যে, তারা ভবিষ্যতের মানুষের কাছে কিছু বার্তা রেখে যেতে চান। সরাসরি নয়, ইশারা এবং ইঙ্গিতে সেসব বার্তা পৌঁছে যায় ভাবিকালের মানুষের কাছে। মিথের ইশারা যদি বুঝতে পারি তাহলে আমরা আমাদের পূর্বসুরিদের সেই বার্তাগুলোও বুঝে উঠতে পারবো।

যীশুর জীবন এবং ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মিথ আমাদের কী বার্তা দেয়? তাঁর জীবন সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার সুযোগ নেই, ভরসা করতে হয় চারজনের লেখা গসপেল বা সুসমাচারের ওপর। বাইবেলেও খুব বাড়তি কিছু নেই। কিন্তু যতটুকু আছে তা পড়ে একটা বিষয় খুব চোখে পড়ে। তাঁর ৩৩ বছরের স্বল্প-দৈর্ঘ্য জীবনে তিনি যেসব বাণী প্রচার করেছেন, যা পরিশেষে পরিণত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মে, সেখানে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণার কথা নেই। তিনি কেবল ভালোবাসার কথা বলেছেন। অনুতাপ, ক্ষমা আর ভালোবাসা - তার বিবেচনায় এই তিনটিই ছিল মানুষের আত্মিক মুক্তি আর ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর মূলমন্ত্র।

তার জন্ম হয়েছিল ইহুদি সমাজে। ভীষণ রক্ষণশীল এবং আচারসর্বস্ব এই জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন প্রেমময়, উদার এবং সহজ এক জীবনপ্রণালীর বার্তা। লোক-দেখানো ধর্মচর্চা, আচারসর্বস্বতা, ধর্মের মর্মবানী না বুঝতে পারার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ঈশ্বরকে প্রভু বা সম্রাট নয়, পিতার আসনে বসিয়েছিলেন। সেই পিতৃসম ঈশ্বর নৈবেদ্য চান না, চান হৃদয়ের প্রীতি, প্রাণের ভালোবাসা - এইসব কথা বলে বেড়াতেন মানুষকে। সামাজিক জীবনে মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও ছিল তাঁর নিজস্ব প্রেমময় অভিমত। বলতেন- 'তোমরা অপরের কাছ থেকে যে ব্যবহার প্রত্যাশা কর, অপরের প্রতি ঠিক সেই ব্যবহারই করবে।' কথাটি কী সুন্দর, দেখুন! আমরা সকলেই তো অপরের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করি, প্রত্যাশা করি সম্মান ও মর্যাদা। কিন্তু সেটি পাওয়ার জন্য আমাদেরকেও অপরকে সম্মান করার কথা বলা হচ্ছে এখানে, অপরের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে।

ইহুদি সমাজের একটা বিধান ছিল এরকম যে, কেউ কারো অঙ্গহানি করলে তারও সেই অঙ্গটি নষ্ট করে দিয়ে বদলা নেওয়া হতো। যীশু এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন : 'তোমরা তো জানো, অনুশাসন আছে, যে অন্যের চোখ নেবে সে তার বদলে নিজেরও চোখ দেবে। যে অন্যের দাঁত ভাঙবে, সে নিজের দাঁত ভেঙে তার দণ্ড দেবে। কিন্তু আমি তোমাদের বলি, তোমরা প্রতিশোধ নেবার কথা আদৌ ভাববে না। প্রতিহিংসায় কোনো লাভ নেই। বরং কেউ যদি তোমাদের এক গালে চড় মারে, তাহলে আরেকটি গালও তার দিকে বাড়িয়ে দাও। কেউ যদি মামলা করে তোমার গায়ের জামাটা কেড়ে নিতে চায়, তাহলে তাকে জামার সঙ্গে তোমার উড়নিটাও দিয়ে দাও। যে তোমাকে বেগার খাটিয়ে এক মাইল পথ বোঝা বইয়ে নিয়ে যাবে তার সঙ্গে তুমি দু'মাইল পথ হেঁটে যেও। প্রার্থীকে কখনো বিমুখ করো না। ধার চাইলে খালি হাতে কখনো ফিরিয়ে দিও না।'

বাস্তব জীবনে এই ধরনের উপদেশ মেনে চলা অত্যন্ত কঠিন। সমস্ত ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে না উঠলে এরকম আচরণ করা কীভাবে সম্ভব? সম্ভব হোক আর না হোক, মানুষের সহনশীলতা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন, এই উপদেশের মাধ্যমে যীশু সেটিই বুঝিয়েছেন। আর যে মানুষ এরকম সহনশীল হতে পারবেন, তার হৃদয় যে প্রেম-মমতা-ভালোবাসা-করুণায় পূর্ণ হয়ে উঠবে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?

ভালোবাসার বিস্তার সম্বন্ধে তার অভিমতও ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। বলেছিলেন: 'তোমরা শত্রুকেও ভালোবাসবে। যারা তোমাদের নির্যাতন করবে, তোমরা তাদেরও কল্যাণ কামনা করবে। তাহলেই তোমরা অমৃতের সন্তান হতে পারবে। দেখ, ঈশ্বরের সূর্য যখন ওঠে সে কি ভালোমন্দ বিচার করে তার কিরণ বিতরণ করে নাকি সকলের জন্য সমানভাবে উদয় হয়? ঈশ্বরের বৃষ্টি সকলের ওপরে কি সমানভাবে জলবর্ষণ করে না? যারা তোমাদের স্নেহ করে, তোমরা শুধু তাদেরকেই ভালোবাসলে এমন কী আর  করলে? ওটুকু তো সবাই করে। শুধু আত্মীয়স্বজনকে সমাদর করে বসালে এমন বেশি কী আর করলে?'

এই ধরনের সর্বব্যাপি ভালোবাসার কথা বলে মানুষকে যে-পথের সন্ধান তিনি দিলেন, সত্যিই যদি তেমন হওয়া যায়, কেমন হবে সেই রূপ? হবে শিশুর মতো সরল, নির্মল, খুঁতহীন।  একটি শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে তিনি তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন : 'তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এই শিশুর মতো সরল হতে পারো, তাহলে সে-ই হবে ঈশ্বরের সবচেয়ে প্রিয় পাত্র। এর মতো একটি শিশুকে যে পরিচর্যা করবে, সে আসলে ঈশ্বরের সেবা করবে। তোমরা কখনো এই শিশুদেরকে ক্ষুদ্র মনে করে অবজ্ঞা করো না। কারণ এরাই সবসময় ঈশ্বরের মুখ দর্শন করে থাকে। ঈশ্বর যে-কথা মহা মহা জ্ঞানী পণ্ডিতদের কাছেও গোপন রেখেছেন তা এই ছোট্ট শিশুদের কাছে বিনা আয়াসেই ব্যক্ত হয়ে পড়ে। মনে রেখ, সবচেয়ে ক্ষুদ্র জীবের জন্যও ঈশ্বর সর্বদা উন্মুখ হয়ে আছেন।'

অথচ সারাজীবন যিনি এরকম বিস্তীর্ণ-সর্বব্যাপী ভালোবাসার কথা বললেন, তার মৃত্যুটা হলো করুণ-মর্মান্তিক-ভয়াবহভাবে। ক্রুশ বহন করে নিয়ে যেতে হলো বধ্যভূমিতে; অপমানিত-লাঞ্চিত-নিপীড়িত এক মানুষ তিনি তখন, খোদার পয়গম্বর আর নন। সেমেটিক ধর্মগুলোতে যাদেরকে পয়গম্বর হিসেবে মানা হয়, তাদের আর কারোরই এরকম নিষ্ঠুর-করুণ-অপমানজনক মৃত্যু হয়নি। কেন এমন হলো? সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় যে পয়গম্বর, যাঁর অন্তর ভালোবাসায় পূর্ণ, কেবল মানুষই নয়, সকল পশুপাখি-কীটপতঙ্গের জন্যও তার প্রাণ কেঁদে ওঠে, সেই মানুষটিকে এভাবে মরতে হলো কেন?

যে সর্বশক্তিমান, নিখুঁত ঈশ্বরের কল্পনা আমরা করি, তার জন্য অসম্ভব বলে তো কিছু নেই। তিনি কি পারতেন না তাঁর প্রিয়তম পয়গম্বরকে এরকম বীভৎস মৃত্যু থেকে বাঁচাতে? নিশ্চয়ই পারতেন, নইলে তিনি আর সর্বশক্তিমান কেন? তাহলে বাঁচালেন না কেন? এর মধ্যে কী ইঙ্গিত আছে? তিনি যে বলেন, ইহাতে বিশ্বাসীদের মধ্যে আছে নিদর্শন, সেই নিদর্শনটা কী? কী সেই ইশারা?

পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না, তবে আমার মনে হয়, তিনি বলতে চেয়েছেন : দেখ, আমার নির্বাচিত অতিপ্রিয়ি মানুষটিকেও এরকম ভয়ংকর যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। অতএব নিশ্চিত থাকো, তোমাদের সবাইকেই ক্রুশ বহন করতে হবে। সবার কাঁধেই চাপিয়ে দেয়া হবে ক্রুশ বহনের দায়। সবার ক্রুশ একরকম হবে না। কারোটা ভারী, কারোটা হয়েতো ততটা ভারী নয়। প্রিয়জনের মৃত্যুশোক, জটিল-দুরারোগ্য বা নিরাময়ের অযোগ্য অসুখবিসুখ, অভাব-দারিদ্র, গ্লানি-অপমান এসবই একেকেটা ক্রুশ।

ভেবে দেখুন, আপনার জীবনের সবচেয়ে গভীর অপমানের কথা আপনি কাউকে বলতে পারেন না, ভুলতেও পারেন না। হয়তো সেই অপমান আপনার প্রাপ্য ছিল না, কোনো দোষ করা ছাড়াই হয়তো সেই অপমানের শিকার হতে হয়েছিল আপনাকে, তবু আপনি মন থেকে সেটা মুছে দিতে পারেন না, আজীবন আপনাকে বহন করে যেতে হয়। কিংবা ধরুন, আপনার জীবনের সবচেয়ে তীব্র গ্লানির কথা। হয়তো আপনার কোনো কাজ বা কথার জন্য অন্য কারো জীবন মারাত্নকভাবে ব্যাহত হয়েছিল, হয়তো কেউ আত্মহত্যা করেছিল, কিংবা ভয়ানক দুর্যোগ নেমে এসেছিল তার জীবনে, আপনি সেই গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছেন আমৃত্যু, কাউকে বলতেও পারছেন না, ভুলতেও পারছেন না। কিংবা ধরুন, আপনি আরোগ্যাতীত কোনো রোগে ভুগছেন, যেমন দুর্লভ স্নায়ুরোগ বা ক্যান্সার বা কিডনি বিকল; প্রতিমুহূর্তে আপনার মনে পড়ে যায় যে, আপনার জীবন আর দশজন মানুষের মতো স্বাভাবিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আপনাকে চলতে হয়। অনেক কিছু খেতে পারেন না, অনেক কিছু করতে পারেন না, অনেক জায়গায় যেতে পারেন না, যেগুলো অন্যরা সহজেই পারে। অনিবার্য মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আপনার আর কিছুই করার নেই। মরতে সবাইকেই হবে, কিন্তু যাদের এই ধরনের অসুখ-বিসুখ থাকে, মৃত্যুর আনুমানিক একটা সময়ও জানা হয়ে যায়, সেটা যেন মৃত্যুদণ্ডের মতো এক ব্যাপার। আবার ধরুন, আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে প্রিয়জনদের হারাতে থাকি। তাতে আমাদের জীবন থেমে যায় না বটে, কিন্তু শোক ও শূন্যতা বয়ে বেড়াই আমৃত্যু। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো, সন্তান হারানোর অবর্ণনীয় বেদনা। 

নবীজি যেমনটি বলেছিলেন: 'পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ।' সন্তানের এই মরদেহের সৎকার করা হয় ঠিকই কিন্তু পিতার কাঁধ থেকে এবং মায়ের বুক থেকে সেই শোকের ভার আর নামে না কখনো। এতক্ষণ ধরে যা কিছু বললাম, আপনি তার সঙ্গে যোগ করে নিতে পারেন আরো অনেক কিছু। এগুলো আসলে আর কিছু নয়, একেকটা ক্রুশ। আমাদের সবাইকেই এইসব ক্রুশ বহন করে নিতে হচ্ছে জীবনভর।

যীশুর জীবনও দুঃখ-গ্লানি-অপমানে ভরপুর ছিল। তিনি জন্মেছিলেন কুমারী মায়ের গর্ভে। প্রবল রক্ষণশীল ইহুদি সমাজ নিশ্চয়ই পিতৃপরিচয়হীন সেই শিশুকে মেনে নেয়নি। পৃথিবী তো অনেক এগিয়েছে, নানা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে সভ্যতা একটা যৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে, তবু, এখনো কি পিতৃপরিচয়হীন কোনো শিশুকে পৃথিবীর কোনো সমাজ সহজভাবে গ্রহণ করে? যীশু এবং তার মা মেরিকে কী পরিমাণ লাঞ্চনা-গঞ্জনা-উপহাস-কটুক্তি সইতে হয়েছে তা আসলে আন্দাজ করাও কঠিন। যীশু যখন মাতৃগর্ভে তখনই তাঁর বিয়ে হয়েছিল যোসেফের সঙ্গে। তিনি নিশ্চয়ই মহৎপ্রাণ মানুষ ছিলেন, নিজের সন্তান নয় জেনেও যীশুকে নিজ গৃহে বড় করে তুলেছিলেন। কিন্তু একটু বড় হবার পরই যীশুর বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার ঘটনা থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ওই সমাজে ঠিক স্বস্তিতে ছিলেন না। গভীর বেদনা-অপমান-লাঞ্চনা আর ভোগান্তির এই ক্রুশ কাঁধে নিয়েই তিনি খুঁজতে বেরিয়েছিলেন জীবন ও জগতের ভিন্ন কোনো অর্থ ও তাৎপর্য। ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করেছিলেন নিজেকে এবং আবিষ্কার করেছিলেন, ঈশ্বর শাস্তি দেবার জন্য উদ্যত কোনো প্রভু নন, শাসক তো ননই, বরং পিতার মতোই কোমল এক সত্তা, যিনি কেবল ভালোবাসতে জানেন, আর কিছু নয়। উপলব্ধি করেছিলেন, জগতের সকলেই তাঁর সন্তান, কিন্তু মানুষ সে-কথা ভুলে গেছে।

যীশু তার সারাজীবনের সাধনা ত্যাগ তিতিক্ষা ধ্যান আর অবর্ণনীয় ভোগান্তির বিনিময়ে অর্জন করেছিলেন মানুষের আত্মিক মুক্তির তিন সূত্র: অনুতাপ, ক্ষমা এবং ভালোবাসা। যদি কোনো মানুষ তার ভুলত্রুটির জন্য অনুতাপদগ্ধ হয়, যদি সে নিজের জন্য অন্তর থেকে ক্ষমা চায় এবং যারা তাকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে তাদেরকে আন্তরিকভাবে ক্ষমা করে, যদি জগতের সকল মানুষ এবং অন্যান্য জীবের জন্য তার হৃদয় ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে ওঠে, তখনই সে হয়ে উঠবে অমৃতের সন্তান।

যীশুও সেটিই হয়ে উঠেছিলেন। আর তাই, ক্রুশবিদ্ধ হবার আগে তিনি তাই বলতে পেরেছিলেন: আমি কেবল তাই করেছি, যা তুমি করাতে চেয়েছ। আমি ভোগান্তি পোহায়েছি কারণ তুমি তাই চেয়েছিলে: I did what you asked me to do, I suffered Because you desired me to suffer.' কজন মানুষই বা এভাবে বলতে পারে?

যীশুর জীবন এবং ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর এই মিথ তাই আমাদের শেখায়, আমাদের সবাইকেই যেমন কোনো না কোনো ক্রুশ বহন করে নিয়ে যেতে হবে জীবনভর, তেমনই এর জন্য কোনো অভিযোগ জানাবারও প্রয়োজন নেই। বরং মৃত্যুর সময়ও যেন আমরা বলতে পারি- I suffered Because you desired me to suffer.

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago