যে একাকিত্বের কথা আমরা বলি না

ছবি: এএফপি

মানুষের অন্যতম মানসিক চাহিদা হচ্ছে অন্যের সঙ্গ। সাধারণত সঙ্গের অভাবকেই বলে নিঃসঙ্গতা। কিন্তু এই ধারণার বাইরেও অনেক মানুষ একা হতে পারে। একাকিত্বের কিছু রূপ আছে, যেগুলোর কথা আমরা বলি না।

এমন একা মানুষের জীবনে প্রায় সব ধরনের সামাজিক সম্পর্কই বিদ্যমান থাকে। তাদের সামাজিক জীবন, মেলামেশা, বন্ধুত্ব, প্রেম, পরিবার ইত্যাদি ধারণাগত সব সম্পর্কের চর্চাই নিয়মিত। সামাজিক বা আবেগীয়ভাবে একাকিত্ব তাদেরকে স্পর্শ করে না ঠিকই– তবু তারা একা।

কেন, এবং কীভাবে? ২০২০ সালে এ নিয়ে একটি গবেষণা করা হয় নিউইয়র্ক শহরে। ২০ থেকে ৮৬ বছর বয়সী মোট ৫৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে নিবিড় সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এরিক ক্লাইনবার্গ ও জেনি কে. লেই গবেষণাটি করেছিলেন।

নতুন ধরনের এসব একাকিত্ব নিয়েই আলাপ হবে আজকের এ লেখায়।

সমাজবিচ্যুতি

এ ধরনের একাকীত্বে বন্ধুবান্ধব বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের নয় বরং গঠনগত শাসনব্যবস্থার অভাব বোধ হয়। অর্থনৈতিক বাধা-বিপত্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চলমান গোষ্ঠীগত দুরবস্থার ফলে নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্নতা অনুভূত হয়। মনে হয় যেন সমাজ থেকে কোনো ধরনের মনোযোগ বা যত্ন ছাড়াই একা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের একাকিত্ব যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বা জাতীয় দুর্যোগের সময়ে বেশি হয়ে থাকে। নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে এই একাকিত্ব বা বিচ্ছিন্নতার জন্ম। যদিও তার ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোনো ফাটল ধরে না, তবু ব্যক্তি তখন নিজেকে সমাজবিচ্যুত মনে করতে থাকেন।

অচেনাদের থেকে দূরে

কফিশপ, পাবলিক বাস, হেঁটে যাওয়া ফুটপাত–এসব জনপরিসরে প্রতিদিন আমরা শত মানুষের ভিড় ছুঁয়ে যাই। তাদের অধিকাংশকেই আমরা চিনি না। একে অপরের কাছে আমরা পেরিয়ে যাওয়া কিছু অবয়ব আর অস্পষ্ট চেহারা, বেশি হলে কিছুটা বিরক্তির উদ্রেক–এ ছাড়া আর কী? অদ্ভুত বিষয় হলো, করোনাকালে পরিচালিত এই গবেষণা থেকে দেখা যায়, মানুষ ভিড়কেও 'মিস' করে। ব্যক্তিগত পরিসরে একটানা বহুদিন বাস করার পর তাদের মনে পড়ে সেইসব নাম না জানা, চেহারা না চেনা পরিচিত আগন্তুকদের।

শরীরী একাকিত্ব

শরীর ও মন– এই দুই নিয়েই মানুষ। মানসিকভাবে যতই সংযুক্ত থাকা হোক ভিডিও কলে কিংবা টেক্সটিংয়ে, মানুষ একটানা অনেকদিন শরীরী সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠে। ডিজিটাল মাধ্যম যতই আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়ে উঠুক না কেন, মানবস্পর্শের বিকল্প হতে পারেনি। হ্যাঁ, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে মানবস্পর্শকেও হাতের মুঠোয় এনে দেবার কথা দিচ্ছে– কিন্তু সেটি কখনো প্রকৃত স্পর্শের বিকল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। অন্তত বর্তমানে তো নয়ই। মানুষ এখনো মানুষের স্পর্শের অভাবে ভোগে, জন্ম নেয় শরীরী একাকিত্ব।

একাকিত্বকে সবসময় নেতিবাচকভাবে দেখারও কিছু নেই। বরং একা থাকাকে কাজে লাগিয়ে বহু সৃজনশীলতার চর্চা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। নিজের যেকোনো ধরনের একাকিত্বকে দুর্বলতায় পরিণত না করে এর সবল দিকগুলোতে নজর দিলে জীবন অনেকটাই সহজ মনে হবে।

নিজেকে যোগ্য সঙ্গের কাছাকাছি রাখবার প্রবণতা আমাদের সহজাত। তবে সবসময় সেই সঙ্গকে নিজের কিংবা পরিস্থিতির জন্য যোগ্য না হলে আমাদের ধরে রাখতে হয় একাকিত্বকে।

Comments

The Daily Star  | English

Banks see sluggish deposit growth as high inflation weighs on savers

Banks have registered sluggish growth in deposits throughout the current fiscal year as elevated inflation and an economic slowdown have squeezed the scope for many to save, even though the interest rate has risen.

14h ago