সরেজমিন সেন্টমার্টিন: সাংবাদিকের ডায়েরি

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের পর বিধ্বস্ত সেন্টমার্টিন। ইনসেটে দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ।

ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার পরদিন কোস্টগার্ডের সি-বোটে গতকাল সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পৌঁছাই। দ্বীপে পা রেখেই দেখি, এ যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ!

খাবার সংকট, সুপেয় পানির সংকট, বিদ্যুৎ নেই—দ্বীপবাসীর হাহাকার মনের ভেতর কষ্ট জাগাল। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পযর্টনসমৃদ্ধ এই দ্বীপের হোটেল-রেস্তোরাঁ-দোকানপাট সবই বন্ধ। কোথাও খাবার পেলাম না।

একটি রিসোর্টে অনুরোধ করলে তারা থাকার জন্য ২-৩টি কক্ষ খুলে দেয়। বিদ্যুৎ না থাকায় সবখানেই অন্ধকার। রান্না করা খাবারেরও চরম সংকট প্রত্যক্ষ করছিলাম।

একদিকে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ, অপর দিকে ঝড়ের আঘাতে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় তারা নিজেরাও রান্না করতে পারছেন না।

কেউ কেউ জানালেন, কী রান্না করবেন, ঘরে তো খাবারই নেই। আবার কেউ জানালেন, কিছু চাল-ডাল থাকলেও ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার রান্না করার কোনো উপায় নেই।

বিদ্যুৎ না থাকায় গতকাল রাতে ঘুমাতে পারিনি। শুয়ে-বসেই রাতটা কাটিয়ে দিই।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের আজ সকালের চিত্র। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

আজ ভোর ৬টায় বেরিয়ে পড়ি দ্বীপের অবস্থা দেখতে। গতরাতে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাগুলোয় পানি জমে ছিল। একটু একটু করে বেলা বাড়লেও দোকান খোলার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছিল না।

সেন্টমার্টিনের জেটিঘাটে এসে দেখি, প্রায় সব দোকানই বন্ধ। দুয়েকটা দোকান খুললেও স্থানীয়দের ভিড় দেখা গেল না। ঘূর্ণিঝড়টির পর থেকেই তাদের জীবন যেন স্থবির হয়ে আছে।

কথা হলো স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল ইসলামের সঙ্গে। বললেন, 'যেহেতু টেকনাফের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ এখনো চালু হয়নি, তাই সেখান থেকে কোনো জিনিসপত্র আনা যাচ্ছে না। দোকানে থাকা জিনিসপত্রও প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে।'

সংবাদ পেলাম আজও কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসকের যৌথ উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। তা দেখতে গেলাম মাঝের পাড়ায়।

গতকাল প্রায় প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আজ প্রায় ৮০০ জনকে দেওয়ার কথা জানা গেল।

স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রয়োজনের তুলনায় এই ত্রাণ অপ্রতুল। আবার যেহেতু চাল দেওয়া হয়েছে, তা রান্নার অবস্থা নেই। এখন তাদের প্রয়োজন রান্না করা খাবার। তার কোনো ব্যবস্থা নেই।

ত্রাণের জন্য লাইনে আছেন দ্বীপবাসীর অনেকে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

মাঝের পাড়াতেই কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমানের সঙ্গে। জানালেন, 'পরিবারে আমরা ৭ জন। যে পরিমাণ ত্রাণ পেয়েছি, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।'

গতকাল বিকেলে পৌঁছানোর পর থেকে রাত পর্যন্ত কিছু শুকনো খাবার খেতে পারলেও রান্না করা কোনো খাবার পাওয়া যায়নি। রাতটা পার করে ভোরে কাজে বের হওয়ার পরও একই অবস্থা। নিজের ক্ষুধার কষ্ট তীব্র, তার চেয়েও আরও তীব্র স্থানীয়দের কষ্ট। তাদের এই চরম দুর্ভোগের কথা ভেবে নিজের কষ্ট ভুলে পেশাগত কাজেই মনোনিবেশ করলাম।

নিজের পেটে ক্ষুধা নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কোস্টগার্ডের সি-বোটে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দিলাম। টেকনাফে খাবার পাব। সেন্টমার্টিনের ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর কথা ভেবে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আমার মতো সাংবাদিকের আর কিছু করার থাকল না!

Comments

The Daily Star  | English

Govt to scale back foreign loan reliance

The government plans to scale back its dependence on foreign loans as it seeks to mitigate threats to external debt sustainability.

12h ago