কেবল স্মৃতিকথা নয়, সময়ের দলিল
স্মৃতিকথা নিয়ে রিভিউ সহজ না। কারণ স্মৃতিকথায় সেই অর্থে কেন্দ্র থাকে না গল্প, উপন্যাসের মতো; পুরোটাই লেখকের জীবনকে কেন্দ্র করে চলে। ফলে অন্য বইয়ের মতো নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্রকে বিন্দু ধরে চিত্র আঁকা যায় না। সেজন্য আমরা 'রিভিউ'র দিকে না গিয়ে আলোচনা করবো এই স্মৃতিকথার কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে। প্রসঙ্গত আনিসুজ্জামান স্মৃতিকথা লিখেছেন তিনটি: ১. আমার একাত্তর (১৯৯৭) ; ২. কাল নিরবধি (২০০৩) ; ৩. বিপুলা পৃথিবী (২০১৫)। লেখাটি 'কাল নিরবধি'।
আত্মপরিচয়ের খোঁজে
একজন সমাজ-সচেতন গবেষক হিসেবে আত্মপরিচয়ের গুরুত্বটা আনিসুজ্জামান বুঝতেন। বুঝতেন বলেই শুরুতেই পাঠকদের টাইম-মেশিনে কয়েকশ' বছর পেছনে নিয়ে গেছেন। পূর্বপুরুষের ঠিকানা চব্বিশ পরগনার গৌরবদীপ্ত ইতিহাস বর্ণনার পাশপাশি কিভাবে তার প্রপিতামহ (দাদার দাদা) শেখ নাসিরুদ্দীন এই এলাকায় বসতি গেঁড়েছিলেন তা বলতেও ভুলেননি। ব্যাপক পরিসরে বলেছেন দাদা শেখ আবদুর রহিমের কথা। বিখ্যাত 'মিহির' ও 'সুধাকর' পত্রিকার সম্পাদক, বাঙালি মুসলমানের মধ্যে প্রথম নবী-জীবনীকার দাদার কথা বলার মাধ্যমে যেন তিনি গর্বিত পৌত্রের সোৎসাহী ভূমিকাটাই ফুটিয়ে তুলেছেন। নবী-জীবনীকার হিসেবে দাদার যুক্তিবাদী ভূমিকায় উল্লসিত হবার পাশাপাশি শেষ জীবনের 'রক্ষণশীল ভূমিকা'র জন্য তিনি ব্যথিতও হয়েছেন। অর্থাৎ, পূর্বপুরুষের মাঝে নিজেকেই খুঁজেছেন তিনি।
নিজেকে কিভাবে পূর্বপুরুষের সঙ্গে মিলিয়েছেন তিনি, তার পূর্ণাঙ্গ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে একটি ঘটনায়। আনিসুজ্জামান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন তার বাবার কাছে একজন অভিযোগ করেছেন যে, শেখ আবদুর রহিমের মতো ব্যক্তির নাতি হয়েও তিনি বিপরীত পথে অগ্রসর হচ্ছেন। তখন তার বাবা জবাব দিয়েছেন: "দেখেন, আমার বাপ ব্রাহ্ম পরিবারে মানুষ হয়ে ইসলাম-বিষয়ে লিখতে পেরেছিলেন এবং নিজের বিবেক অনুযায়ী চলেছিলেন। তার পৌত্র হয়ে আমার ছেলে যদি নিজের বিচারবুদ্ধি অনুসারে চলতে চায়, তাহলে আমি তাকে বারণ করতে পারি না।" কোনো রাখঢাক ছাড়াই বলা যায়, পূর্বপুরুষের 'নিজের বিবেক অনুযায়ী' চলার সিলসিলায় আনিসুজ্জামান ছিলেন শতভাগ দিলখোলা। তিনি অন্ধ অনুকরণ না করে, পূর্বপুরুষকে যে ঔন করা যায় তার একটি দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তিনি।
প্রসঙ্গের ডালপালা ছড়ানো
যখন যে কথা এসেছে, সে প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান কেবল নিজের অভিজ্ঞতা বলেই ক্ষান্ত হননি, বরং যত তথ্য তার জানা সব বর্ণনা করেছেন। যেমন: তিনি যখন তার বাবার নাম রাখার পেছনে 'আব্জদ' প্রণালী ব্যবহারের কথা বলেছেন তখন সাথে সাথে 'আব্জদ' ব্যাপারটা আসলে কী তাও বিস্তারিত বলে দিয়েছেন, ফলে পাঠকের সুবিধা হয়েছে। তিনি যখন তার বাবার হোমিওপ্যাথি পড়ার কথা বর্ণনা করছেন, তখন সে সূত্রে কলকাতার তৎকালীন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও চিকিৎসকের ব্যাপারেও কথা বলেছেন।
তিনি যখন বেনজীর আহ্মদের কথা বলছেন তখন শুধু বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পর্কে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং বেনজীর আহমদের জীবনের একটা ছোটখাটো সারাংশ প্রস্তুত করে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। ফলে, পাঠক শুধু স্মৃতিকথায় আঁটকে থাকবেন না, অনেক তথ্য পাবেন যেগুলো কারো না কারো লাগবে। এবং এই কারণে বইটি পাঠকের বড় হলেও বিরক্ত লাগার সম্ভাবনা কম। স্মৃতিকথায় এতো বৈচিত্র আলাপ বাংলায় দুর্লভ।
স্মৃতিতে চরিতাভিধান
'চরিতাভিধান' সম্পর্কে যাদের ধারনা আছে তারা যদি আনিসুজ্জামানের এই স্মৃতিকথাটি পড়েন তাহলে তার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, স্মৃতির আদলে কি একটি চরিতাভিধান প্রকাশিত হলো? সাহিত্য শাখায় নিশ্চয়ই নতুন কিছু!
আনিসুজ্জামান এলাকার প্রতিবেশীদের পরিচয় দিচ্ছেন। ১০ নং বাড়িতে থাকতেন আবদুল হাকিম, তার কোন্ বন্ধু কি নামে পরিচিত ছিল, পরবর্তীতে তিনি কোন ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তার মেয়ে এখন কী করছে সবকিছুর বর্ণনা দিচ্ছেন। ৮ নং বাড়িতে যে আবদুল হামিদ থাকতেন তার পুত্র কী করতেন, এখন কী করেন, আবার তার বৈমাত্রেয় ভাই কে, তিনি সোনালী ব্যাংকের কোন পদে আছেন সব বিস্তারিত জানিয়েছেন। তার পাশের বাড়িতে যিনি থাকেন তিনি কিভাবে হুমায়ুন কবিরের আত্মীয়, আবার তার কথা যে আবু রুশদের আত্মজীবনীতে আছে সেটা বলতেও ভুলেননি কিন্তু। কলকাতায় বনি নামে এক বন্ধু ছিল তার। বন্ধুর মায়ের পারিবারিক সূত্র ধরে বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বিলেতে যাওয়া মীর্জা ইতিসামউদ্দিনের জীবনকাহিনী বলে দিচ্ছেন তিনি। বনির নানার বংশ থেকে কে কোথায় গিয়েছে, কে কোন সরকারি পদে আছে, কে ব্যবসা করছে সব বলছেন। স্কুলে তার সহপাঠী মোহাম্মদ নেয়ামাল বাসির প্রসঙ্গে তিনি নেয়ামাল বাসিররা কয় ভাই ছিলেন, তাদের প্রত্যেকের পুরো নাম, কিভাবে একজন নাম বদলে বিখ্যাত সাহিত্যিক হয়েছিলেন সবকিছু বলেছেন।
তিনি একটা পরিবারের পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে: "দাস ভবনের অপর ফ্ল্যাটে বাস করতেন তিন ভাই—নাসিরউদ্দীন, আনিস চৌধুরী ও জামিল চৌধুরী, তিন বোন— শামীমা চৌধুরী, নাজমা চৌধুরী (এখন সিদ্দিকী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) ও সালমা চৌধুরী (এখন খান ও জাতিসংঘের সিডো কমিটির নির্বাচিত চেয়ারপার্সন) এবং তাদের মা।"
আরেকটি পরিবারের পরিচয় দিচ্ছেন: "ওদিকেই বোধহয় আহমেদ শামসুল ইসলাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক—তাকে সবাই বড়ো ভাই বলে ডাকতো) এবং তার ভাইয়েরা থাকতেন। এদের মধ্যে হামেদ শফিউল ইসলাম (খোকা ভাই—এককালে সাংবাদিক, পরে বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব) আমাদের দু-এক ক্লাস ওপরে পড়তেন, পরে তাঁর সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব হয়েছিল।"
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পরিবারের সাথে খুলনায় এসে খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। জেলা স্কুলে থাকাবস্থায় তার বন্ধুদের সাথে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন: "স্কুলে আমার একদল বন্ধু জুটেছিল। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হালিম চৌধুরীর মঞ্জু আমার সহপাঠী। আমার এক ক্লাস নিচে এস ডি ও আবু আহমদ ফয়জুল মহীর ছেলে তসলিম, আমাদের হেডমাস্টারের ছেলে মোরশেদ এবং অবসরপ্রাপ্ত মুনসিফ আবদুল ওয়াহাবের ছেলে লাবলু—শামসুল মোরশেদ (আমার সঙ্গে পার্ক সার্কাস হাই স্কুলে পড়তো)।
মুনীর চৌধুরীর অনুজ মনজুর এলাহী বড়ো কোম্পানির নির্বাহী হয়েছিল, অল্পকাল হলো মারা গেছে। ইতিহাসবিদ সালাহউদ্দীন আহমদের অনুজ তসলিমউদ্দীন আহমদ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক। মোরশেদ চৌধুরী সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদ থেকে অবসর নিয়েছে, তবে অধিক পরিচিত হয়েছে টেলিভিশনের নাট্যকার হিসেবে। শামসুল মোরশেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আইন) পদ থেকে অবসর নিয়েছে, তার ছোট বোন অকালমৃত ফরিদা রহমান বিএনপিতে সক্রিয় এবং পঞ্চম জাতীয় সংসদে এমপি ছিল। আমার আরেক সহপাঠী ছিল কামাল সাইদ—সেও বিমানের পরিচালক পদ থেকে অবসরপ্রাপ্ত।"
এভাবেই তিনি প্রসঙ্গে যতটা জানেন সবটাই পাঠকের সামনে মেলে ধরেছেন। যার পরিচয় যেভাবে দিলে পাঠক চিনবেন সেভাবেই দিয়েছেন। লক্ষ্য করার বিষয়, কার বাবা কে ছিলেন এবং কোন পদে ছিলেন, তারা পরবর্তীতে কী করেছেন সবকিছুই তিনি জানেন এবং পাঠককেও জানাচ্ছেন। ফলে, স্মৃতিকথার ভেতরেই গড়ে উঠেছে এক চরিতাভিধান। কোনো গবেষকের পক্ষেই এর গুরুত্ব যথার্থভাবে অনুধাবন করা সম্ভব আর গবেষক হিসেবে এর গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বলেই আনিসুজ্জামান ব্যক্তিগত জায়গায় এতো খোলামেলা হতে পেরেছেন।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ
পারিবারিকভাবে তুখোড় বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশে আনিসুজ্জামান বেড়ে উঠেছেন। তার দাদা ও বাবার সূত্রে বহু সাংবাদিক ও লেখকের যাতায়াত ছিল বাড়িতে। বাবার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রথম রোগী ছিলেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বড় ছেলে। বেনজীর আহমদের মতো বিপ্লবী, কবি ও সাংবাদিক তাদের বাড়িতে থেকেছেন। 'ইত্তেহাদ' পত্রিকার সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদ প্রতিদিন তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছেন। যে জয়নুল আবেদীনের দুর্ভিক্ষের ছবি দেখে তিনি মুগ্ধ হচ্ছেন, সে জয়নুল পরদিনই তাদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন তার বাবার সাথে দেখা করতে। আজাদ পত্রিকার বিশিষ্ট সাংবাদিক মোদাব্বের হোসেনের তো নিত্য যাতায়াত তাদের বাড়িতে। একটা হাতে লেখা পত্রিকা বের করতে চাইলেন আর সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে গেলেন সুফিয়া কামাল, জসীম উদ্দীনের মতো কবিদের লেখা। প্রচ্ছদ এঁকে দিচ্ছেন কামরুল ইসলাম। ঢাকায় আসবেন না কলকাতায় থাকবেন তা নিয়ে পরামর্শ করতে বাবা চলে যাচ্ছেন শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হকের বাসায়।
ঢাকায় আসার পরও পেয়েছেন এমন পরিবেশ। শান্তিনগরে তারা যে বাড়িতে থাকতেন তার কাছেই কবি গোলাম মোস্তফার বাড়ি। ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর মতো বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ থাকতেন একই এলাকায়। অদূরেই থাকতেন কাইয়ুম চৌধুরী, শিল্পী আমিনুল ইসলাম। অর্থাৎ, এমন এক পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছেন যেখানে থেকে আনিসুজ্জামান না হয়ে উঠাই তার পক্ষে অসম্ভব ছিল। স্মৃতিকথায় তার বেড়ে ওঠার পরিবেশটা এতো বর্ণাঢ্যভাবে তিনি সাজিয়েছেন এবং চারদিকে এতো বিখ্যাত চরিত্রের আনাগোনা যে, আনিসুজ্জামান নিজেই সেখানে গৌণ হয়ে গিয়েছেন। পরিবেশ বর্ণনায় নৈর্ব্যক্তিক হতে পারা খুবই কঠিন। এই কঠিন কাজটা তিনি সম্পন্ন করেছেন।
বিব্রতকর বিষয়ের বিবৃতি
স্মৃতিকথায় মানুষ সমস্ত স্মৃতি বলতে পারে? মনে হয় না। কিছু বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক হওয়া যে কোনো মানুষের পক্ষে কঠিন আর শেয়ার করা ততোধিক। ফলে, যে কোনো স্মৃতিকথায় এমন কিছু কথা, ঘটনা অনুপস্থিত থাকে যা পাঠক কখনোই জানতে পারে না। এই জায়গায় আনিসুজ্জামানকে কিছুটা ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। কারণ এমন কিছু অপ্রিয়, বিব্রতকর বিষয়েও তিনি স্বতস্ফূর্তভাবে কথা বলেছেন যা না বললেও এই স্মৃতিকথার কোনো ক্ষতি বা বৃদ্ধি হতো না, তবুও তিনি বলেছেন। যেমন: বড়বোন, মেজবোন ও ছোটবোন— তিনজনের বিয়ে হবার পর, আনিসুজ্জামানের বয়স তখন দশ, এমতাবস্থায় তার পুনরায় মা গর্ভবতী হয়েছিলেন। এ নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। এমন স্পর্শকাতর বিষয়েও আনিসুজ্জামান এতো সরল ছিলেন যে, আশ্চর্য হতে হয়!
কথাগুলো মোটেই বাড়াবাড়ি হবে না যে, স্মৃতিকথায় আনিসুজ্জামান অস্বাভাবিক সৎ ছিলেন। আর ছিলেন বলেই তার বাবার 'বাঙালদের সম্পর্কে মনের মধ্যে একটা অবজ্ঞা বা অশ্রদ্ধার ভাব' যে ছিল তাও গোপন করেননি। নিজের মা-বাবার বিষয়েও অপ্রিয় কথা যিনি বলতে পারেন তার সততা নিয়ে প্রশ্ন অমূলক!
রসিকতা
একজন গবেষক বলে ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে কেবল বর্ণনা করছেন সবকিছু সেরকম কিছু নয়। প্রসঙ্গক্রমে রসিকতা করতে কার্পণ্য করেননি। যেমন: শেরে বাংলাকে নিয়ে আবদুল ওহাব সিদ্দিকী একটি শিশুতোষ বই লিখেছিলেন। সে বইতে তার শিশুসুলভ আঁকাআঁকি করা প্রসঙ্গে বলেন: "বইয়ের সূচনায় সিপিয়া রঙে ছাপা ডোরাকাটা গলাবন্ধ শার্ট-পরা ফজলুল হকের একটি প্রতিকৃতি ছিল। সেটা যথেষ্ট রঙিন হয়নি বিবেচনা করে আমি তার ওপর যথেচ্ছ লাল-নীল পেন্সিল চালিয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত তাতে তাঁর জামার যতো ক্ষতি হয়েছিল, মুখশ্রীর ততো হয়নি।"
আরেকবার তার ছোটবু'র শশুর ছিপ ও বড়শির ইংরেজি জিজ্ঞেস করেছিলেন কিন্তু তিনি পারেননি। তারপরের ঘটনা এমন: "আমি কোনোটাই বলতে না পারায় বিরক্তমুখে আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে তিনি বললেন: 'তোমার কিসসু হবে না।' তার ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ হয় নি।" অর্থাৎ, একজন গবেষকের স্মৃতিকথা হিসেবে 'কাল নিরবধি' পুরোপুরি বেরসিক নয়।
স্মৃতিকথায় আমরা বেশিরভাগ দেখি আত্মকেন্দ্রিকতা, এটি মোটেও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আনিসুজ্জামানের 'কাল নিরবধি' আক্ষরিক অর্থেই নৈর্ব্যক্তিক হয়ে উঠেছে। স্মৃতিকথা হিসেবে এই বইয়ের সার্থকতা হচ্ছে, লেখক স্মৃতির বৈয়াম উপুড় করে ঢেলে দিয়েছেন, বাদ রাখেননি কিছুই। বর্ণনার ধরণ দেখে চট করে বলে দেওয়া যায়, তিনি আবছা আবছা বলছেন না স্মৃতি থেকে, বরং সবটা বলেছেন। সতর্ক ছিলেন সদা, কোনো কিছুই যেন বাদ না পড়ে।
এতে নিজের পরিবেশ এমনভাবে সাজিয়েছেন তিনি, যেখানে তার নিজের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। গবেষক হিসেবে খুঁটিনাটি বর্ণনা করেছেন। যখন তিনি লিখছেন তার অবশ্যই এই খেয়াল আছে যে, প্রতিটি ঘটনাই আগামীর গবেষকের কাছে একেকটি উপাদান। উপাদান তুলে দিতে কোথাও কোনো গাফিলতি দেখা যায় না। বরং উৎসাহী ছিলেন। একবাক্যে 'কাল নিরবধি' কেবল আনিসুজ্জামানের স্মৃতিকথা নয়, সময় ও স্বদেশের দুর্লভ দলিল।
Comments