পটুয়াখালীর বেড়িবাঁধের ১৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ: পাউবো

পটুয়াখালীর ১৮ কি.মি. বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ, ১০ কি.মি. অধিক ঝুঁকিপূর্ণ: পাউবো
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় গত বছরের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের বেশিরভাগই এখনো মেরামত হয়নি। এছাড়া কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধও নেই। তাই ঘূর্ণিঝড় 'মোখা'র খবরে স্থানীয়দের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে স্থানীয়রা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

পায়রা নদীর তীরবর্তী পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পিঁপড়াখালী গ্রামটি অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীনের পথে। এলাকার বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ কয়েক দফায় স্থানান্তর করা হয়েছে। নদী ভাঙনে এই এলাকার শত শত একর জমি, বসতবাড়ি, বাজার, কবরস্থান, মসজিদসহ বিলীন হয়েছে একাধিক বেড়িবাঁধ।

২০০৭ সালের প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় সিডরে এ উপজেলায় ১১৭ জন মানুষ নিহত হয়। উপজেলার পিপড়াখালী ও রামপুর এলাকায় এখনো বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে। 

পিপড়াখালী এলাকার আব্দুর রহমান (৭৫) বলেন, আমাদের বাড়ির মুরুব্বিদের কবরসহ ঘরবাড়ি, কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা যে একটু কবর জিয়ারত করব তারও সুযোগ নাই। আবার শুনছি ঘূর্ণিঝড় আসতেছে। এবার ভয়াবহ বন্যা, জলোচ্ছ্বাস হলে কোথায় যাব? সরকারের দাবি আমাদের গ্রাম রক্ষায় যেন একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেয়।

তিন সন্তান, স্ত্রী আর নিজেকে নিয়ে জেলে জাহাঙ্গীর শিকদার পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ নদীর পাড়ের আধা বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধেই বসতি গড়েছিলেন। গতবছর ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁধটির প্রায় ৫০০ ফুট ভেসে গেছে। জাহাঙ্গীর আবার ঘরের আসবাবপত্র মালামাল নিয়ে অন্য বাঁধে ঠাঁই নিয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি দিশেহারা। আবার যদি বন্যায় ঘর ভেসে যায় তাহলে কোথায় থাকবেন এমন দুশ্চিন্তায় দিশেহারা তিনি।

জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, 'বেড়িবাঁধের অভাবে নদীর ভাঙনে অনেক আগেই ভূমিহীন হয়েছি। তাই সরকারের কাছে আবেদন আমাদের ঘরবাড়ি রক্ষায় যেন স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে।'

জেলার মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, বাউফল, দুমকিসহ কয়েকটি উপজেলার বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেসব এলাকার মানুষের মধ্যেও ভয় এবং আতঙ্ক কাজ করছে। কিছু এলাকায় বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলেও অনেক এলাকা এখনো অরক্ষিত।

পাউবো'র পটুয়াখালী সার্কেলের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, পটুয়াখালী জেলায় ৩৬ পোল্ডারে ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে এর মধ্যে ১৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ১০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে যা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গোলখালী ও পিঁপড়াখালীতে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকাগুলোতেও কাজ শুরু করা হবে।

পাউবো'র কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৗশলী খালিদ বিন ওয়ালিদ জানান, কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৫২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সাড়ে ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ৫০০ মিটার বা আধা কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।

ঘূর্ণিঝড় মোখা'র বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঝড়ের বিষয়ে তারা খোঁজ খবর রাখছেন। ইতোমধ্যে তারা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুত করে রেখেছেন। যাতে কোন এলাকার বাঁধ ভেঙে গেলে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ করা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

3h ago