হারানো কাসিদার খোঁজে
'আল্লাহকে বান্দে কো
হাম আয়ে জাগানে কো
লো আই হে রাহমাত কা
এ কি যামপে লা নে কো….'
সুললিত কণ্ঠে গাইতে গাইতে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে মজিউল হকের। যেন ফিরে যান সুদূর কোন অতীতে। স্মৃতিমধুর শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের পুরান ঢাকা তার চোখে এসে ভিড় করে মুহূর্তেই। সেই স্মৃতিস্মরণ করতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি বলে উঠেন, '২০ বছর বয়স থেইকা কাসিদা গাইতাম, গাইছি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধইরা। এখন তো কাসিদা নাই। ৭-৮ বছর ধইরা বন্ধ হইয়া গেছে।'
পাশ থেকে তারই সাগরেদ মোখলেস মিয়া বললেন, 'কাসিদা গাইতে গিয়া বহুত পবিত্র লাগত। ওইটা আসলে বুঝান যাইব না। এখন তো মাইক হইছে, মসজিদ থেইকা ডাইকা দেয়, ঘড়ি হইছে, মোবাইল আছে। কাসিদার দিন গেছেগা।'
মোখলেস মিয়ার কথায় রেশ টানতে গিয়ে ফিরে যাই পুরান ঢাকার এক বর্ণিল অধ্যায়ে। সে অধ্যায়টির নাম 'কাসিদা'।
'ওঠ ওঠ মমিন সেহরির সময় নাই।
আমরা কাসিদাওয়ালা
যাই ডেকে যাই…।'
এমনই সুরে সুরে পুরান ঢাকার প্রায় সব মহল্লাতেই রমজানে সেহরির সময় দেখা মিলত এক বিশেষ গায়েন দলের। গলায় পেঁচানো গামছায় ঝুলন্ত হারমোনিয়াম, কারো হাতে হ্যাজাক বাতি, কারো হাতে ডুগডুগি, কারো হাতে করতাল। সুললিত কণ্ঠে ছন্দময় গলায় বিশেষ এক সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে মহল্লাবাসীকে ঘুম থেকে উঠে সেহরি খাওয়ার আহ্বান জানাতেন তারা।
এই বিশেষ সঙ্গীতটির নাম কাসিদা। কাসিদা শব্দটি ফার্সি। যার অর্থ কবিতার ছন্দে প্রিয়জনের প্রশংসা করা। মূলত আরবি 'ক্বাসাদ' শব্দ থেকেই এসেছিল ফার্সির কাসিদা।
কাসিদার ঐতিহ্য সুদীর্ঘকালের। ইসলাম প্রচারেরও দেড়শ বছর আগেও পাওয়া যায় কাসিদার খোঁজ। আরব ঐতিহাসিক ইবনে কুতাইবাহ লিখিত 'কিতাব আল-শির ওয়া-আল-শুয়ারা'তে পাওয়া যায় কাসিদার ইতিবৃত্ত।
ঢাকায় কাসিদার প্রথম প্রচলন হয় মোঘল আমলে। মোঘল আমলে দরবার ও প্রশাসনিক ভাষা ফার্সি হওয়ায় ঢাকায় কাসিদা পরিবেশিত হতো ফার্সি ভাষায়।
১৬০৮ সালে বাংলার গভর্নর ইসলাম খান চিশতীর সঙ্গে মোঘল নৌবহরের সেনাপতি মীর বাহর হিসেবে নিযুক্ত হয়ে বঙ্গে এসেছিলেন মীর্জা নাথান। মীর্জা নাথানের লিখিত 'বাহারিস্তান-ই-গায়বী'তে পাওয়া যায় তৎকালে ঢাকায় কাসিদার প্রচলন এবং পরিবেশনের বিস্তারিত নমুনা।
'মোঘল আমলে ঢাকার নায়েব নাজিমদের পৃষ্ঠপোষকতায় জাঁকজমকের সঙ্গে পরিবেশিত হতো কাসিদা। কিন্তু তা ছিল সাধারণের ত্রিসীমানার বাইরে। কারণ কাসিদা তখন আবদ্ধ ছিল অভিজাতদের মহলেই। '
ইংরেজ আমলে সে ধারা কিছুটা হলেও ভাঙে। তখন কাসিদার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন ঢাকার নবাব পরিবার। এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত 'ঢাকা কোষ' গ্রন্থে বলা হয়েছে, 'নবাব আহসান উল্লাহর সময় কাসিদা গাওয়া এবং রচনা ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল। কারণ নবাব আহসানউল্লাহ নিজেও কাসিদা রচনা করতেন।'
নবাবদের নির্বাচিত বিভিন্ন মহল্লার সর্দারদের হাতে গড়ে উঠেছিল পঞ্চায়েত কমিটি। এই পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমেই কাসিদার পৃষ্ঠপোষকতা বা আয়োজন করা হতো। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করা হলে বিলুপ্ত হয় সর্দারি প্রথাও। কিন্তু প্রভাব থেকে যায় পুরান ঢাকার সর্দারদের। এরইমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন মহল্লার পঞ্চায়েতের মধ্য দিয়ে কাসিদা সর্বমহলে হয়ে উঠে তুমুল জনপ্রিয়।
একসময় পুরান ঢাকার রমজানের একটি সমার্থকই ছিল যেন কাসিদা। কাসিদাকে ঘিরে পুরান ঢাকায় গড়ে উঠেছিল অসংখ্য গায়েন দল। কিন্তু কালের বিবর্তনে কাসিদা আজ বিলুপ্ত। পুরান ঢাকার পাড়া-মহল্লার অলি গলিতে আজ আর ভেসে আসে না সুরেলা সেহরি খাওয়ার আহ্বান। বর্তমানে কাসিদা যেন পুরোপুরি ঠাঁই নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
হারিয়ে যাওয়া সেই কাসিদার খোঁজে এই প্রতিবেদক সম্প্রতি কথা বলেছেন পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লার একাধিক কাসিদা গায়ক, বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা এবং পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে। সেই সূত্রেই সন্ধান মিলেছে হারিয়ে যাওয়া কাসিদার রত্ন ভাণ্ডারের।
পুরান ঢাকায় কাসিদা যেভাবে পরিবেশিত হতো
পুরান ঢাকার কসাইটুলি এক সময় ছিল কাসিদা পরিবেশনার প্রধান স্থান। সম্প্রতি কসাইটুলি মহল্লার পঞ্চায়েত ঘরে গিয়ে দেখা মেলে আড্ডারত বয়োজ্যেষ্ঠদের। তাদের কাছে কাসিদা সম্পর্কে জানতে চাইলে কেউ কেউ ফিরে যান হারানো সোনালী দিনগুলোতে। এদেরই একজন ৫৫ বছর বয়সী আকিল আহমেদ।
আকিল আহমেদ বললেন, 'কাসিদার একটি দলে থাকত ৮ থেকে ১০ জন করে সদস্য। আমরা রাত ২টা থেকে আমাদের মহল্লায় কাসিদা গাওয়া শুরু করতাম। পুরো মহল্লায় সেহরির আগ পর্যন্ত কাসিদা গেয়ে মহল্লাবাসীকে ঘুম থেকে তুলে দিতাম। অবশ্য রাত ১২টা থেকেই আমাদের কাসিদা গাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হতো।'
তিনি আরও বলেন 'রমজানে কাসিদা মূলত ৩টি ধাপে হতো। রমজানের প্রথম ১০ দিনের কাসিদার নাম 'আমাদি কাসিদা'। দ্বিতীয় ১০ দিনের নাম 'ফাজায়েলি কাসিদা' এবং শেষ ১০ দিনের কাসিদার নাম 'রোখসাতি কাসিদা বা বিদায়ী কাসিদা।'
এক সময় পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লার মতো কসাইটুলীতেও আয়োজিত হতো কাসিদা প্রতিযোগিতার। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিত ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা থেকে আগত প্রতিযোগীর দল।
আকিল আহমেদ বললেন, 'আমাদের এই পঞ্চায়েত ঘরের সামনের রাস্তাতেই কাসিদা প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো। মহল্লার সর্দার জুম্মন সাহেব ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। বিভিন্ন মহল্লা থেকে কাসিদার দল আমাদের মহল্লার প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। তখন বংশী বাজার, হোসেনি দালান, সুত্রাপুর, লালকুঠি, উর্দুরোড, বংশালসহ বিভিন্ন মহল্লায় কাসিদা প্রতিযোগিতা হতো। আমরাও সেসব মহল্লার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম।'
রমজানে সেহরির সময় আহ্বানের জন্য ব্যবহার করা হলেও কাসিদার ব্যবহার কিন্তু এতেই সীমাবদ্ধ নয়। সেহরি ছাড়াও মিলাদ, মাহফিল, ঈদ উৎসবসহ প্রায় সব ধরনের ধর্মীয় উৎসবেই গাওয়া হতো কাসিদা। কাসিদার লিখিত রূপে দেখা মেলে দর্শনতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, প্রশস্তিমূলক বাক্যের আধিক্য। এগুলো সাধারণত ৬০ থেকে ১০০ বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা ২০০ বাক্যেরও বেশি দীর্ঘ হয়।
পরিবেশনের বিভিন্ন রকম চল
পুরান ঢাকায় কাসিদা পরিবেশনেও রয়েছে বিভিন্ন রকম চল। কোনো কোনো মহল্লায় কাসিদার সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হতো, আবার কোনো মহল্লায় কাসিদা গাওয়া হতো খালি গলায়।
বকশীবাজারের হোসেনি দালান মহল্লা ছিল কাসিদার প্রধান প্রাণকেন্দ্র। হোসেনী দালান মহল্লায় গিয়ে পাওয়া যায় কাসিদা পরিবেশনের ভিন্ন আরেক সংস্কৃতি। এক সময় প্রতি বছরই হোসেনি দালান মহল্লা পঞ্চায়েতের উদ্যোগে রমজানের শেষভাগে কাসিদা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হতো।
সেখানে ছিল কাসিদা গাওয়ার ও পরিবেশনের একাধিক দল। তেমনই একটি দলের দলনেতা ছিলেন সাজ্জাদ হোসেন। সম্প্রতি হোসেনি দালান মহল্লা পঞ্চায়েত ঘরে বসে কথা হয় তার সঙ্গে।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'অন্য এলাকায় সেহরির সময় কাসিদা গেয়ে ঘুম থেকে উঠানোর চল থাকলেও আমাদের মহল্লায় সেই চল ছিল না। যদি কেউ আমাদের কাসিদা গাওয়ার দাওয়াত দিত তবেই আমরা সেখানে গিয়ে কাসিদা পরিবেশন করতাম। আমরা কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই খালি গলায় গাইতাম।'
কাসিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোসেনি দালান মহল্লার একাধিক প্রবীণ বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোসেনি দালান মহল্লায় কাসিদা কেবল রমজান মাসেই গাওয়া হতো। তাও আবার দাওয়াতের ভিত্তিতে। তারা অপেক্ষা করত রমজানের শেষভাগের জন্য। কারণ শেষ ১০ দিনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায় আয়োজিত হতো কাসিদা প্রতিযোগিতা। হোসেনি দালান মহল্লার কাসিদা প্রতিযোগিতা ছিল ঢাকার সবচেয়ে বড় কাসিদা প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগীদের মান কীভাবে নির্ধারিত হতো জানতে চাইলে হোসেনি মহল্লার কাসিদা গায়ক মনোয়ার হোসেন বলেন, 'কাসিদা প্রতিযোগিতায় ৪ জন বিচারক থাকতেন। মূলত মসজিদের ইমাম এবং আলেমরাই বিচারক হতেন। প্রতিযোগীদের ৪টি বিষয় বিশেষভাবে দেখা হতো। এর ভিত্তিতেই বিজয়ী নির্ধারিত হতো।
ওই ৪টি বিষয় ছিল— আদাবে মাহফিল বা মাহফিলে তাদের নিয়ম-শৃঙ্খলার সৌন্দর্য, মায়ারে কালাম বা যে কাসিদা পড়া হচ্ছে সেটির শুদ্ধতা, তারান্নুম বা কাসিদার সুর এবং তালাবফুস বা কাসিদার উচ্চারণ। এক্ষেত্রে গোটা পুরান ঢাকায় আমাদের মহল্লার কাসিদা দলই সবচেয়ে সফল ছিল।'
হোসেনি দালান পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে থরে থরে সাজানো অসংখ্য ট্রফি। এর বেশিরভাগই বিভিন্ন মহল্লায় আয়োজিত কাসিদা প্রতিযোগিতায় বিজয়ের স্মারক।
মনোয়ার হোসেন পরম যত্নে আলমারি থেকে ফাইলসহ বের করেন কাসিদার পাণ্ডুলিপি। উর্দুতে লেখা কাসিদার পাণ্ডুলিপিতে চোখ বুলিয়ে নিই একবার। পরক্ষণেই মনোয়ার হোসেন বললেন, 'এটি কিন্তু টাইপ করা লেখা না, হাতে লেখা।' শুনে খানিকটা বিস্মিত হতে হয়। কারণ মুক্তোর মতো ঝরঝরে সে লেখা দেখা প্রথমে সেটি মনেই হচ্ছিল না।
কাসিদার রচয়িতা কারা
মোঘল আমলে ফার্সিতে কাসিদা লেখা এবং পড়ার চল থাকলেও ইংরেজ এবং পাকিস্তান আমলে পুরান ঢাকায় কাসিদা লেখা হতো উর্দুতে। বাংলাতেও লেখা হয়েছিল কিছু। কাসিদা যারা লিখতেন তারা কাওয়াল নামে পরিচিত ছিলেন।
কাসিদা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে পুরান ঢাকার কাসিদা রচয়িতাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পের তালিব আহমেদ, নওয়াব মুস্তাকিম কাওয়াল, পুরান ঢাকার বংশী বাজারের বাসিন্দা এজাজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দুর অধ্যাপক সাইদানী।
হোসেনী দালান মহল্লার প্রবীণ বাসিন্দা ফারুক হোসেন বললেন, 'কাসিদা যারা লিখতেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন তালিব সাহেব। আমরা মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গিয়ে তার থেকে কাসিদা লিখিয়ে আনতাম। তার এমন অবিশ্বাস্য মেধা ছিল যে, হয়তো দেখা গেল ৫টি মহল্লা থেকে ৫ জন কাসিদা লেখার ফরমায়েশ নিয়ে এসেছে। তিনি এক বসাতেই ৫ জনকে কাসিদা লিখে দিতেন। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় ছিল, তার লেখা একটি কাসিদা কিন্তু আরেকটি থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। আমরা এমনও দেখেছি, তিনি আমাদের মহল্লায় এসে সারাদিনে ২০ থেকে ২৫টি কাসিদা লিখেছেন। এর বিনিময়ে আমরা হয়তো তাকে কিছু টাকা সম্মানী দিতাম।'
ঈদের মিছিল ও কাসিদা
পুরান ঢাকায় ঈদের নামাজের পর মিছিলের চল ছিল। মিছিলে শামিল হতেন সর্বস্তরের মানুষ। মোঘল আমলে নিমতলি প্রসাদের ফটক থেকে ঈদ মিছিল বের হলেও পরে তা বের হতো পুরান ঢাকার চকবাজারের মসজিদের সামনে থেকে, যা পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে চকবাজারে গিয়েই শেষ হতো। ঈদ উপলক্ষেও কাসিদা পড়া হতো।
ফারুক হোসেন বলেন, 'ঈদের কাসিদাকে আমরা বলতাম ঈদ মোবারক। ঈদের মিছিলের শুরুতে কাসিদার দলনেতা মিছিলের সামনে চলে যেতেন। তার হাতের কাগজে কাসিদা লেখা থাকত। মিছিল শুরু হলে তিনি কাসিদা পড়তে পড়তে এগিয়ে যেতেন।'
যে কারণে হারিয়ে গেল কাসিদা
কাসিদা হারিয়ে যাওয়ার পেছনে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবকেই প্রধানত দায়ী করছেন পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লার বয়োজ্যেষ্ঠ মহল্লাবাসীরা। তারা বলছেন, আগে বিভিন্ন মহল্লার যেসব সর্দার, কাউন্সিলর এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিরা কাসিদার প্রতিযোগিতার জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করতেন তাদের সবাই মারা গেছেন। বর্তমানে যারা আছেন তারা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না। সবশেষ ৮ বছর আগে ২০১৫ সালে হোসেনি দালান মহল্লায় কাসিদা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। তরুণরাও এখন আগ্রহ পান না কাসিদার বিষয়ে।
পুরান ঢাকার উর্দু রোডের বাসিন্দা জুম্মন হোসেন বলেন, 'বর্তমান তরুণদের মধ্যে কাসিদার বিষয়ে আর কোনো আগ্রহ দেখি না। আমরা স্থানীয়রা চেয়েছি ছোট পরিসরেও যেন এর আয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অনাগ্রহের কারণেই পিছু হটতে হয়েছিল। আসলে আমাদের বয়সকালেই কাসিদা ছিল, এখন সে দিন শেষ। এখন কাসিদা কেবল আমাদের স্মৃতিতেই আছে।'
জুম্মন হোসেনের কথাসূত্রেই বলাই যায়, কাসিদা যেন ঢাকার সেই প্রাচীন অধ্যায়, যা সময়ের সঙ্গে হারিয়েছে তার আভিজাত্য, হারিয়েছে গুরুত্ব। কিন্তু রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায় আর পুরান ঢাকার মানুষের বর্ণিল স্মৃতিতে।
আজও পুরান ঢাকার ইতিহাসের পাতায় কান পাতলে ভেসে আসে রমজানের শেষের কোনো এক সেহরির আগ মুহূর্তের আহ্বান—
'জা ফির আনা
বাহারো কো লে কার
আল বিদা এ নিসাতে মানোয়ার
আয় মুসাররাত কে রঙ্গীনি পাইকার।'
Comments