‘৫ বছর ধরে বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করছি, প্রশাসন খালি টালবাহানা করে’

কৃষি জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ
বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে বাগদা ফার্মের ফসলি জমির আইলে প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

কৃষি জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিরা।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের কাটার মোড়ে বিক্ষোভ করেন শতাধিক স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালি নারী-পুরুষ। এরপরে বাগদা ফার্মের ফসলি জমির আইলে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।

স্থানীয় কৃষকের অভিযোগ, গত ৫ বছর ধরে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন তারা কিন্তু ইউএনও, ডিসি, বিদ্যুৎ অফিস 'শুধু ঘুরায়', 'টালবাহানা করে'—বিদ্যুৎ দেয় না।

কৃষি জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ
গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের কাটার মোড়ে স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিদের বিক্ষোভ র‌্যালি। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

তারা বলেন, ফসল উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে। তেল-সার-চাষের খরচ বেড়ে গেছে। কৃষক এখন অসহায়। বিদ্যুৎ সংযোগ না দিলে কৃষক আর ফসল ফলাতে পারবে না।

সাঁওতাল-বাঙালি কৃষক বলেন, 'বাগদা ফার্মের মাটি লাল। পানির স্তর অনেক নিচে চলে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে খরচ হয় ৬ লিটার তেল, যার দাম প্রায় ৭০০ টাকা। এত টাকা খরচ করে কীভাবে ফসল ফলাব!'

সাঁওতাল নেতা প্রিসিলা মুর্মু বলেন, 'এবার ধান রোপণের সময় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধানের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করেছি ১০ বিঘা জমিতে। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তেল দিয়ে আর সেচ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে তবেই আমরা এই লাল মাটিতে ফসল ফলাতে পারব-না হলে পারব না।'

সাঁওতাল কৃষক দিলীপ সরেন বলেন, 'গত ৪-৫ বছর ধরে ফার্মের ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ একর জমিতে আমরা বহু কষ্টে ফসল ফলাচ্ছি। সারা দেশে আমাদের উৎপাদিত গম, ভুট্টা, ধান যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।'

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, 'আমরা গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে আবেদন দেই। একই দিনে রংপুর বিভাগের কমিশনার, গাইবান্ধা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। ওই সময় তারা আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।'

তিনি বলেন, 'অচিরেই যদি প্রশাসন আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়, তাহলে আরও কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।'

কৃষক থমাস হেমব্রম বলেন, 'গত ৫ বছর ধরে ফার্মের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য আমরা ইউএনওর কাছে ধর্না দিচ্ছি। তিনি বলেছেন, সংযোগ দেবেন, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু সংযোগ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা করছেন না। বারবার শুধু ঘুরাচ্ছেন। সম্প্রতি ইউএনও বলছেন, তিনি আমাদের জন্য আর কিছু করতে পারবেন না।'

গাইবান্ধা জেলা আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, 'জেলা প্রশাসক মৌখিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বললেও স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা টালবাহানা করে। বিদ্যুৎ দেয় না।'

কৃষি জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ
বাগদা ফার্মের ফসলি জমির আইলে দাঁড়িয়ে স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিদের বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, ১ ইঞ্চি ফসলি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সেই অনুযায়ী আমাদের স্থানীয় সাঁওতাল ও আদিবাসী ভাই-বোনেরা উচ্চ খরচেও ফলস ফলাচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে তারা আরও বেশি ফসল ফলাতে পারবে। ফার্ম এলাকার ১ হাজার ৮৪২ একর জমিই চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না।'

যোগাযোগ করা হলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফ হোসাইন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাঁওতালদের আবেদন আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠিয়েছি। ঢাকা থেকে ওকে করে দিলেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেবো।'

বারবার আশ্বাস দিয়েও কেন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে বাগদা ফার্মের জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছে। জমিগুলো রংপুর সুগার মিলের নাম রেকর্ডকৃত। তাই সাঁওতালদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে বিদ্যুৎ বিল আসে রংপুর সুগার মিলের নাম। সুগার মিল কর্তৃপক্ষ আপত্তি করে। ফলে সংযোগ দেওয়া সহজ হচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'তবে আমরা রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষকে বলেছি, জমি যাদের নামেই থাক, কোনো ফসলি জমি অনাবাদি রাখা যাবে না। তাদেরকে বলেছি বাগদা ফার্মের চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করে যেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করে। যাতে করে আমরা দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারি।'

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

10h ago