ভিক্টোরিয়ান ফ্যাশনে যেভাবে প্রভাব ফেলেছিল যক্ষ্মা
নানা ধরনের বিজ্ঞাপন ও ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের আবির্ভাবের আগেও প্রতিনিয়ত ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিবর্তন ঘটতো। সেগুলোও নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করতো, এমনকি মরণঘাতী রোগও ছিল এ তালিকায়।
ভিক্টোরিয়ান যুগেও তেমনি সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে হানা দেয় যক্ষ্মা। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রতি ৫ জনে ১ জন মানুষ মারা গিয়েছিল এই রোগে আক্রান্ত হয়ে। তবে কীভাবে এটি শুরু হয়েছিলো তা আজও স্পষ্ট নয়। ঘনবসতিপূর্ণ জায়গাগুলোয় এ মৃত্যুহার ছিল আরও বেশি।
এই রোগ পরিচিত হয় 'হোয়াইট প্লেগ' নামে। সঙ্গে এর ফলে ফ্যাকাশে চামড়া, জীর্ণ শরীর, শুকনো চোয়াল কারও কারও কাছে হয়ে ওঠে আরাধ্য! যেমন- শার্লট ব্রন্টির এক চিঠিতে তার এক বোনের বিষয়ে তিনি এমন বর্ণনা দিয়েছেন।
যক্ষ্মা আক্রান্ত মানুষ মারা যেতেন ধীরে ধীরে। ধনীরা চিকিৎসকদের পরামর্শে চলে যেতেন হাওয়া বদলে। তাদের এই হাওয়া বদল, সমুদ্রে যাওয়া, রোদ পোহানোও অনেকের কাছে আরাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছিলো।
নারীরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন বেশি, তাই চলাচলের সুবিধার্থে গাউনের পেছনে থাকা লম্বা ঝুলটা ছোট করে ফেলা হয়। পরে গাউন থেকে ট্রেইনগুলো (পেছনের লম্বা অংশ) বাদ পড়তে থাকে। ফলে জুতো পরিষ্কারভাবে দেখা যেতে থাকে।
এ ছাড়া সরু কোমরের ব্যাপারটিও জনপ্রিয় হতে থাকে যক্ষ্মার কারণেই। তবে রোগে ভুগলে সরু কোমর পাওয়া গেলেও এড়ানো যেত না তীব্র কাশি, এমনকি মৃত্যুকে। তবে এ সময়ে অনেকেই যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়ায় কোমরের কাছের অংশের কাপড় সরু করে ফেলা হয়।
এ ছাড়া কোমরের কাছে একেবারে চিকন থাকা স্কার্টগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। জর্জিয়ান যুগের স্ফীত স্কার্ট যক্ষ্মার অনুসরণে এই রূপ পায়। হালকা ফেব্রিক চলে আসে ভারী তন্তুগুলোর জায়গায়। এভাবে শুকনো থাকাটা হয়ে উঠতে থাকে একরকম ট্রেন্ড, যেন ফ্যাকাশে চামড়া, সরু কোমরই সৌন্দর্যের মাপকাঠি! আর এর ফলে স্বাস্থ্যবান নারীরাও শুকানোর চেষ্টা এবং সরু কোমরের স্কার্ট পরার চেষ্টা করতে থাকেন- তাতে যতই অস্বস্তি হোক না কেন।
তাছাড়া লালার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়- এমন কথা প্রচলিত থাকায় পুরুষদের ফ্যাশনেও আসে পরিবর্তন। বহু মানুষ তাদের বড় দাঁড়ি ও বড় চুল, গোঁফ চেঁছে ফেলেন। ফলে তাদেরও চেহারায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন।
এই প্রবণতা কিন্তু এখনো আছে। গত শতাব্দীর ৯০ দশক থেকে চালু হওয়া 'জিরো ফিগার'-এর কথা তো আমরা জানি। তাছাড়া, পাশ্চাত্যের বহু দেশে ক্লিন শেভ থাকাকে ধরা হয় সৌন্দর্যের পরিচায়ক। এসবের পেছনে থাকা ইতিহাসটি কিন্তু খুব সুখকর কিছু নয়!
তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়
Comments