ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ঈশ্বরদীর লিচু চাষি-ব্যবসায়ীরা

ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ঈশ্বরদীর লিচু চাষি-ব্যবসায়ীরা
গাছে মুকুল আসার পর আকস্মিক বৃষ্টিতে বেশিরভাগ গাছে লিচুর আশানুরূপ সংখ্যক গুটি না আসায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীরাও। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর এলাকার লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ী মিরাজুল ইসলাম। তিনি ৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৪ শতাধিক লিচু গাছ কিনেছেন। আশা ছিল ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার ব্যবসা করবেন। এখন তিনি মূলধন হারানোর শঙ্কায় আছেন।

গাছে মুকুল আসার পর আকস্মিক বৃষ্টিতে বেশিরভাগ গাছে লিচুর আশানুরূপ সংখ্যক গুটি না আসায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীরাও।

মিরাজুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফলন পাওয়ার আগে কয়েক দফায় লিচু গাছ বিক্রি হয়, কেউ পাতা ও মুকুল দেখে গাছ কেনেন। কেউ আবার লিচুর গুটি আসার পর গুটির ফলন দেখে গাছ কেনেন।'

'মুকুল দেখে গাছ কিনে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় পড়েছি,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত ফেব্রুয়ারিতে লিচু গাছে প্রচুর পরিমাণ মুকুল দেখে আশায় বুক বেঁধে চড়া দামে গাছ কিনেছি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বৃষ্টিতে বেশিরভাগ মুকুল ঝরে গেছে।'

তিনি জানান, যখন গাছ কিনেছি তখন প্রতিটি গাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার লিচু পাওয়ার আশা ছিল। এখন অর্ধেক ফলন পাওয়া নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যেসব গাছে আগাম মুকুল এসেছে সেই সব গাছেই অর্ধেকের বেশি মুকুল ঝরে যাওয়ায় ভালো ফলন পাওয়ার আশা নেই বলে তিনি জানান।

তার মতে, যে সব গাছে ১০ থেকে ১২ হাজার লিচুর ফলন পাওয়ার আশা করে বিনিয়োগ করা হয়েছিল সেসব গাছ থেকে ৪ থেকে ৫ হাজারের বেশি লিচু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

একই এলাকার লিচু ব্যবসায়ী শেখ মেহেদি হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লিচুর মুকুল দেখে যারা গাছ কিনেছেন, তাদের প্রায় সবারই লোকসানের আশঙ্কা আছে। তবে লিচুর গুটি দেখে যারা গাছ কিনেছেন তাদের লোকসান নাও হতে পারে।'

বছরের প্রথমে আটি লিচুর মুকুল আসায় আটি লিচুতেই বেশি ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। আটি লিচুর মতো বোম্বাই লিচুরও ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে।

অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় বোম্বাই লিচুর গুটিও আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে বলে তিনি জানান।

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক শাজাহান আলি বাদশা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাগানে ৪ শতাধিক লিচু গাছ আছে। এ বছর বেশিরভাগ গাছেই গুটি আসেনি।'

তিনি জানান, যেসব গাছে লিচুর মুকুল এসেছিল সেসব গাছেও অপেক্ষাকৃত কম গুটি এসেছে। লিচুর ফলন অন্যান্য বারের তুলনায় এবার অনেক কম হবে।

তার মতে, পাবনার বেশিরভাগ এলাকায় লিচুর মুকুল আসার সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বৃষ্টি আর রাতে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটায় এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে পাবনায় লিচুর উৎপাদন বাড়ায়, দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে এর খ্যাতি বাড়ছে।

পাবনায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ বাড়ার পাশাপাশি লিচু নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসার বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয়ের কারণে বেশিরভাগ মৌসুমি ব্যবসায়ী ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন।

লিচু উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাজারে লিচু আসবে। এ বছর লিচুর বাজার চড়া হতে পারে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একক এলাকা হিসেবে গত কয়েক বছর ধরেই পাবনার ঈশ্বরদীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ লিচুর উৎপাদন হচ্ছে। এ বছর ঈশ্বরদীতে প্রায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'লিচুর ফলন এক বছর ভালো হলে পরের বছর অনেক কম হয়। গত বছর ঈশ্বরদীতে দেশের সবচেয়ে বেশি লিচুর ফলন পাওয়া গিয়েছিল। গত বছর ৮০ শতাংশ গাছেই মুকুল এসেছিল।'

'যেহেতু গত বছর ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে সেহেতু এ বছর ৬০ শতাংশের বেশি গাছে মুকুল আসেনি,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এ কারণে এ বছর লিচুর ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা আছে।'

অতিরিক্ত বৃষ্টির বিষয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'বৃষ্টিতে লিচুর পরাগায়নে ক্ষতি হয়। বৃষ্টিতে মৌমাছিরা বের হয় না। এবার বৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষতি হলেও তা বড় ক্ষতি নয়। কৃষকরা লিচু গাছে মুকুল আসার সময় বেশি পানি দেওয়ার কারণেও অনেক গাছে মুকুল না এসে নতুন পাতা জন্মেছে।'

আবহাওয়ার কারণে এবার কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

লিচুর উৎপাদন কম হলেও ব্যবসায়ীদের লোকসানের আশঙ্কা নেই বলে জানান মিতা সরকার। তিনি মনে করেন, গত বছর লিচুর ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাননি। আশা করা যায়, তারা এ বছর লিচুর ভালো দাম পাবেন।

এ বছর দেশের অন্যতম বৃহত্তম লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল ঈশ্বরদীতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার লিচুর ব্যবসা হবে বলে জানান তিনি।

কৃষি বিভাগ আশার কথা শোনালেও আশ্বস্ত হতে পারছে না লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। নতুন লিচু বাজারে আসার পরই লিচুর উৎপাদন ও ব্যবসার প্রকৃত চিত্র জানা যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

1h ago