ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আতঙ্কে আম-লিচু চাষিরা
গাছে গাছে বেড়ে উঠছে মৌসুমি ফল, আম, লিচু, কাঁঠাল। এরইমধ্যে পাকতে শুরু করেছে গ্রীষ্মকালীন ফল। এখনও এক থেকে দুই সপ্তাহ লেগে যেতে পারে এসব ফল বাজারে আসতে। তবে, চোখের সামনে ফলের সমারোহ কৃষকদের বুকে আশার সঞ্চার করলেও মৌসুমি ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
ইতোমধ্যে পাবনার বিভিন্ন এলাকায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। ফলে, ফলচাষিদের আতঙ্ক শেষ হচ্ছে না।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম ফল উৎপাদনকারি অঞ্চল পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর মন্ত্রীর মোড় এলাকার লিচু চাষি মো. মিরাজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এ বছর লিচুর ফলন গতবারের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। তারপরও যেটুকু ফলন হয়েছে তা পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারলে লাভের মুখ দেখা যাবে কিন্তু সবই এখন নির্ভর করছে প্রকৃতির উপর।
মিরাজুল বলেন ইতোমধ্যে গাছের বেশিরভাগ লিচু লালচে হয়েছে, আগামি ১০ দিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লিচু বাজারে বিক্রি করা যাবে। কিন্তু এ সময় ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হলে পুরো ফলন ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একই গ্রামের ফল চাষি ও ব্যবসায়ী শেখ মেহেদি হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এ বছর লিচুর মুকুল আসার সময় বৃষ্টির কারণে লিচুর আশানুরূপ মুকুল না আসায় এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে।
গত বছর যে সব গাছে ১২ থেকে ১৫ হাজার লিচু পাওয়া গেছে এ বছর ৮ থেকে ১০ হাজারের বেশি লিচু পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ফলন বিপর্যয়ে লোকসানের মুখে পড়বে চাষিরা।
পাবনা সদর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, তিনি ইতোমধ্যে শতাধিক উচ্চ ফলনশীল লিচুর গাছ কিনেছেন। উচ্চমূল্যে এসব গাছ কিনে লিচুপ্রতি খরচ পরেছে প্রায় ১.৮০ টাকা। লিচুর পরিচর্যা খরচসহ সব খরচ মিলিয়ে লিচু বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি লিচুতে খরচ পরবে ৩ টাকার উপরে।
শুধু লিচু চাষি নয়, গ্রীষ্মের রসালো ফল আম চাষিরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের আমচাষি রবিউল বলেন আমের ফলন ভালো হলেও ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে গাছের অনেক আম ঝরে গেছে।
গত শনিবার পাবনা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিলাবৃষ্টিসহ ঝড় হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানে গাছ উপরে পড়েছে। পাকার আগেই অনেক গাছের ফল ঝরে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ঝড়ে ৩০ হেক্টর লিচু ও ৪৫ হেক্টর আমের বাগান আক্রান্ত হয়েছে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হচ্ছে।
শাহ আলম বলেন, এ বছর পাবনায় ১৪,৯৬৬ হেক্টর জমিতে ফলের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে লিচুর আবাদ হয়েছে ৪,৭২১ হেক্টর জমিতে আর আমের আবাদ হয়েছে ২,৭৩০ হেক্টর জমিতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। তবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় এখনই শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না কৃষকরা।
পাবনার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক শাজাহান আলি বাদশা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই পাবনাতে ফলের আবাদ বাড়ছে। প্রতিবছর আম লিচুর সময় কয়েক হাজার কোটি টাকার ফলের ব্যবসা হয় এ অঞ্চলে।
কৃষি অর্থনীতিক কর্মকাণ্ডে মৌসুমি ফল বড় ভূমিকা রাখলেও কৃষকদের প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা থাকলেও এবার মৌসুমি ফলের ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।
Comments