এক ভাষণে যতগুলো অসত্য বললেন ট্রাম্প

ট্রাম্পের অসত্য কথা
ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৪ এপ্রিল ২০২৩। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ২০১৬ সালে তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় ও নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি ক্রমাগত মিথ্যা বলে গেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল।

তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ এখনো বিদ্যমান।

গতকাল মঙ্গলবার ম্যানহাটনের আদালতে ফৌজদারি মামলায় হাজিরা শেষে ট্রাম্প ফ্লোরিডায় বিলাসবহুল 'মার-আ-লাগো' বাসভবনে ফিরে আসেন।

সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দেন তাতে 'এক গাদা মিথ্যা' তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্প তার প্রিয় 'মিথ্যা' কথাটি আবারো বলেছেন। তিনি দাবি করেন, 'সরকারের ক্যামেরাগুলোয় দেখা গেছে লাখ লাখ জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরা হচ্ছে।'

সিএনএনের ভাষ্য, ট্রাম্পের এই দাবি ডাহা মিথ্যা, কোনো ভিত্তি নেই। তিনি এর আগেও সুনির্দিষ্ট করে বলেছিলেন যে জর্জিয়ার ফালটন কাউন্টিতে নির্বাচন কর্মীদের জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরতে দেখা গেছে। কিন্তু, পরে তা পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

বিস্তৃত আকারে ভোট জালিয়াতির কোনো দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশজুড়ে ভোট চুরির ছোটখাটো ঘটনা যেগুলো ঘটেছে, তার কিছু ঘটিয়েছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা।

২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রচারণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি, সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারসহ অসংখ্য ট্রাম্প সমর্থক বলেছেন যে ভোটের ফল বদলে দেওয়ার মতো কোনো কারচুপি হয়নি।

গত রাতের ট্রাম্প প্রেসিডেনশিয়াল রেকর্ড আইন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতেও মিথ্যা তথ্য ছিল বলে দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, যেকোনো প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা ছাড়ার সময় সব নথিপত্র ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নারা) হাতে জমা দিতে হয়। অথচ ট্রাম্প বলেছেন, 'আইন অনুসারে এই সংস্থাটির সঙ্গে আমার আলাপ-আলোচনা করার কথা।'

প্রতিবেদন অনুসারে, নারার সঙ্গে কোনো প্রেসিডেন্টের আলাপ-আলোচনার কথা আইনে বলা হয়নি। ২০২১ সালে ট্রাম্পের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর সংস্থাটি প্রেসিডেন্টের সব নথিপত্র পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছিল।

নারার সাবেক পরিচালক জ্যাসন আর ব্যারন গত সপ্তাহে ইমেইল বার্তায় সিএনএনকে বলেছেন, 'আইনের দৃষ্টিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ভুল করছেন। আইন অনুসারে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারির দুপুরে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের সময় ট্রাম্প প্রশাসনের সব প্রেসিডেনশিয়াল নথি জমা দেওয়ার কথা। এর মানে কোনো নথি মার-আ-লাগোয় যাওয়ার কথা নয়। এ নিয়ে বাড়তি কথা বলার প্রয়োজন নেই। আলাপ-আলোচনা তো দূরের বিষয়।'

মঙ্গলবারের বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও দাবি করেন, 'সবার চোখের সামনে তথ্যপত্রের বাক্স ও কাপড়চোপড়সহ অন্যান্য সামগ্রী নিজের বাসায় এনেছি।' তিনি আরও দাবি করেন, 'সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাও এমনটিই করেছিলেন। বুশ, জিমি কার্টার, রোনাল্ড রিগ্যানসহ সবাই এ কাজ করেছিলেন।'

গত অক্টোবরে নারা জানিয়েছিল, এই প্রেসিডেন্টরা যখন হোয়াইট হাউস ছেড়েছিলেন, তাদের সবাই কঠোর নিয়ম মেনে ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা ছাড়ার সময় সরকারি নথি নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ও ঘরে এমন বাজেভাবে সেসব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাখার দাবি মিথ্যা। এটি জনমনে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

গত রাতের বক্তব্যে ট্রাম্প উদারপন্থী ধনকুবের জর্জ সোরোস ও ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। ট্রাম্পের দাবি ব্র্যাগ হচ্ছেন 'চরম বামপন্থি ও জর্জ সোরোসের অর্থে পরিচালিত আইনজীবী'।

সিএনএনের প্রতিবেদন মতে, ২০২১ সালে ব্র্যাগের নির্বাচনী প্রচারণায় সোরোস কোনো অর্থ দেননি। সোরোসের মুখপাত্র মাইকেল ভ্যাকন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, জর্জ সোরোসের সঙ্গে অ্যালভিন ব্র্যাগের কখনোই দেখা হয়নি। এমনকি, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে সোরোসের হাত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ম্যানহাটন আদালতে ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে 'আইনের শাসনকে হুমকিতে' ফেলেছে বা 'দেশটিকে গৃহযুদ্ধের' দিকে ঠেলে দেবে।

তিনি বলেন, 'আমার অপরাধ, যারা এ দেশকে ধ্বংস করতে চায় আমি নির্ভয়ে তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে চলেছি।'

এখন দেখার বিষয় ট্রাম্পের এই দাবি কতটুকু সত্য প্রমাণিত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

5h ago