নারায়ণগঞ্জ-সাতক্ষীরা

শামসুজ্জামানের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহার এবং এই মামলায় গ্রেপ্তার একই পত্রিকার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ রোববার নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে।
রোববার বেলা সোয়া ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে পথ সমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/ স্টার

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহার এবং এই মামলায় গ্রেপ্তার একই পত্রিকার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ রোববার নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে।

আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে পথ সমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

'অনুশীলন' নামে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি পাঠচক্র গ্রুপের আয়োজনে এই কর্মসূচি ২ ঘণ্টাব্যাপী চলে।

সেসময় সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।

নারায়ণগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মী, শিল্পী, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি পথচারীরাও স্বতস্ফূর্তভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষরে অংশ নেন।

এই সময় শিল্পী অমল আকাশ 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল কর' এবং শিল্পী সুমনা আক্তার 'চিৎকার' শিরোনামে পৃথক দু'টি পারফর্মেন্স আর্ট প্রদর্শন করেন।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় ও ছাত্রনেতা ফারহানা মুনা নিপীড়নবিরোধী কবিতা পাঠ করেন।

সাংবাদিক আফসানা আক্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম জীবন, সিদ্ধিরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল, প্রথম আলোর প্রতিনিধি মুজিবুল হক পলাশ, প্রথম আলোর সংবাদদাতা গোলাম রাব্বানী শিমুল, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, বন্ধুসভার সাবেক সাবেক সভাপতি সাব্বির আল ফাহাদ, সংস্কৃতি কর্মী জহিরুল ইসলাম মিন্টুসহ আরও অনেকে।

দ্য ডেইলি স্টারের নিজস্ব সংবাদদাতা সৌরভ হোসেন সিয়াম ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সাবিত আল হাসান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

বক্তারা বলেন, 'একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। মানুষের মধ্যে সমতা ফেরানোর জন্য, বাকস্বাধীনতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে বাকস্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। নিবর্তনমূলক এই আইন দিয়ে মানুষের কন্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। বিগত সময়ে এই নারায়ণগঞ্জেও অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জভিত্তিক ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ডোমেইন। জোর করে মুখ বন্ধ করা যায় না। এতে বরং সারাদেশের মানুষের চিৎকার আরও বাড়বে।'

তারা ১১ বছরেও সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুর রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন না হওয়ায় নিন্দা জানান।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কেস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কেস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।

সাংবাদিক ও সুধী সমাজের ব্যানারে ওই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সসাতক্ষীরা দৈনিক মশালের সম্পাদক আশেক-ই-এলাহি, সঞ্চালনা সাংবাদিক বেলাল হোসেন। এতে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবুল হোসেন, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, উদীচী সাধারণ সম্পাদক সুরেশ পান্ডে, সাতক্ষীরা বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান, সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ও সাতক্ষীরা কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি।

মানববন্ধনে কর্মসূচিতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব, সমন্বিত সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন, জেলা উদীচী, ল স্টুডেন্টস ফোরাম, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, জেলা জাসদ, জেলা বাসদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ ও প্রথম আলো বন্ধুসভা সংহতি প্রকাশ করে।

কর্মসূচিতে সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, 'গণতন্ত্র মুখে বললে হবে না, চর্চা করতে হবে। গণতন্ত্র সঠিকভাবে চর্চা হলে সমালোচনা সহ্য করার অভ্যাস গড়ে উঠবে। নিজের দলের মধ্যে ভিন্নমত থাকতে পারে। তার মানে এই নয় তারা স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না। সবক্ষেত্রেই ভুল হতে পারে। প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে অসঙ্গতি থাকায় সেটি ১৭ মিনিটের মধ্যে প্রত্যাহর করে সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা? এটি দেশের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাবে ফেলবে।'

Comments