পাইকারি ক্রেতার উপস্থিতি কম, জমে ওঠেনি টাঙ্গাইল শাড়ির হাট

টাঙ্গাইল শাড়ি, করটিয়া হাট, টাঙ্গাইল,
এ বছর রমজানের শুরুতে আশানুরূপ পাইকারি ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, ব্যবসায়ীদের কপালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন করটিয়া হাট টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রির প্রধান কেন্দ্র। ঈদ মৌসুমে এই হাটে কয়েকশ কোটি টাকার শাড়ি বেচাকেনা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে শাড়ি কিনে থাকেন।

তবে, এ বছর রমজানের শুরুতে আশানুরূপ পাইকারি ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, ব্যবসায়ীদের কপালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

স্থানীয় তাঁত মালিক ও শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে ধারদেনা করে শাড়ি তৈরি করে হাটে তুলেছেন তারা। আশানুরূপ বিক্রি না হলে লোকসান গুনতে হবে।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারসহ বিভিন্ন উপজেলায় হস্তচালিত তাঁতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দামের সাধারণ তাঁত শাড়িসহ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দামের বিলাসবহুল শাড়ি উৎপাদন করেন স্থানীয় তাঁতিরা। মেশিন চালিত তাঁত (পাওয়ার লুমেও) তৈরি হয় বিপুল পরিমাণ শাড়ি। ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবের সময় এখানকার তাঁত পল্লীগুলোর ব্যস্ততা বাড়তে থাকে।

ঈদের দুমাস আগে থেকে শাড়ি উৎপাদন শুরু করে এখানকার তাঁতিরা। আর রমজান শুরুর আগেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিপণীবিতানে পৌঁছে যায় স্থানীয় তাঁত কারখানায় উৎপাদিত বাহারি ডিজাইনের সব শাড়ি। চাহিদা মেটাতে ঈদের এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত চলে শাড়ি বোনার কাজ। তবে, করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর টাঙ্গাইলের শাড়ি ব্যবসায় ধ্বস নামে। সেই ধাক্কা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁতিরা।

এবারের ঈদে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশায় আছেন তাঁত মালিক ও শাড়ি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, রমজান শুরুর আগে শেষ হাটে আশানুরূপ বেচাকিনি হয়নি।

করটিয়া হাটের শাড়ি ব্যবসায়ী সুনীল বসাক জানান, অনলাইনে শাড়ি বিক্রি করেন এমন কিছু ক্রেতা ছাড়া হাটে পাইকারদের উপস্থিতি খুবই কম। পাইকারি শাড়ি বিক্রির এখনই সময়। স্বাভাবিক সময়ে ঈদের আগে এই সময়টাতে হাটে সারাদেশের পাইকাররা আসেন। কিন্তু, এবছর তাদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না।

আরেক শাড়ি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে মানুষের হাতে টাকা নেই। গত দুই ঈদেও তেমন বেচাবিক্রি হয়নি। এবারও তেমন শাড়ি কিনছেন না পাইকাররা।

সিলেট থেকে করটিয়া হাটে শাড়ি কিনতে আসা পাইকার মাহমুদুল হাসান জানান, গত ঈদে কেনা সব শাড়ি এখনো বিক্রি হয়নি। তাই এবার খুব কম শাড়ি কিনছেন।

দিনাজপুর থেকে আসা কামরুল হাসান জানান, তিনি অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করেন এবং ঈদে তার এলাকায় টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা আছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও করটিয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে শাড়ি কিনতে এসেছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, করটিয়ায় সপ্তাহে ২দিন (মঙ্গলবার ও বুধবার) শাড়ির হাট বসে। ঈদের আগে যে হাটবার পাওয়া যাবে তাতেও আশানুরূপ বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

করটিয়া হাট ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আনসারী বলেন, 'শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি আগামী হাটবারগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে।'

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, 'তাঁতিরা যখন তাদের উৎপাদিত শাড়ির ন্যায্য মূল্য পায় না, তখন উৎপাদিত শাড়ির মানও কমে যায়। রমজান শুরু হয়েছে অথচ হাটে পাইকারদের উপস্থিতি কম। শাড়ির চাহিদা কম, দক্ষ তাঁত শ্রমিকের অভাব এবং তাঁত মালিকদের পুঁজি সংকটে এবার শাড়ির উৎপাদনও কম হয়েছে।'   

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

3h ago