নতুন পেঁয়াজ ঘরে উঠলেও হাসি নেই পাবনার চাষির মুখে

পেঁয়াজ, পাবনা, ফলন বিপর্যয়, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ,
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবছর পেয়াজের ব্যাপক ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

দেশের মোট পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় পাবনাতে। কয়েক দশক ধরে পাবনায় পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। পেঁয়াজের আবাদ এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, এ বছর পাবনায় ফলন বিপর্যয় ও পেঁয়াজের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি নেই।

পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর পেঁয়াজের ব্যাপক ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। পাশাপাশি দামও গত বছরের তুলনায় কম পাচ্ছেন। ফলে, নতুন পেঁয়াজ ঘরে উঠতে শুরু করলেও হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশের বৃহত্তম পেয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চলের কৃষকরা। বর্তমান বাজার মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ অবশ্য জানিয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় ফলন কম পাওয়ার খবর পাওয়া গেলেও পেঁয়াজ কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মো. কামরুজ্জামান দ্যা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমি ও আমার ভাই মিলে প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। আবাদ করা পেঁয়াজের বেশিরভাগই উচ্চফলনশীল জাতের।'

তিনি জানান, এক বিঘা পেঁয়াজ আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০- ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত বছর উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁয়াজ আবাদ করে এক বিঘা জমি থেকে ৮০- ১০০ মণ পর্যন্ত ফলন পেয়েছিলেন। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত ৮-১০ বিঘা জমির পেঁয়াজ কাটা শেষে ফলন হয়েছে ৫০-৫৫ মণ পেঁয়াজ। আগাম জাতের পেঁয়াজের ফলন কম পাওয়ায় হতাশ তিনি।

দেরিতে লাগানো পেঁয়াজের ফলন এমনিতেই কম পাওয়া যায়। তাই সার্বিকভাবে ফলন অনেক কম পাওয়ার আশঙ্কা আছেন কামরুজ্জামান।

তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে ১১০০-১১৫০ টাকা মণ দরে একশ মণ পেয়াজ বিক্রি করেছি। পরে লোকসানের আশঙ্কায় বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।

একই গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুর রাজ্জাক প্রতি বিঘা ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কিন্তু, তাকে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'লিজ নেওয়া জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি মাত্র ৫৫-৬০ মণ পেঁয়াজের ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ধার করে পেঁয়াজ চাষ করে ধারের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।'

সুজানগর উপজেলার উলাত গ্রামের কৃষক মনটু খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭ বিঘাতেই স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ। স্থানীয় জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন আরও অনেক কম হয়েছে। গত বছর এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৪০ মণ পর্যন্ত স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ পেলেও এ বছর ১৮-২০ মণের বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে না।

মনটু খান বলেন, 'পেঁয়াজের দাম ১৪০০-১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলে চাষিরা কিছুটা লাভের মুখ দেখবে।'

পাবনার সুজানগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পেঁয়াজের জমিতে অতিরিক্ত চাষ দিতে হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কিছু কিছু স্থানে পেঁয়াজের ফলন কম পাওয়া যাচ্ছে বলে শোনা গেলেও পুরো পেঁয়াজ কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।'

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উন্নয়ন শাখার কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী বলেন, 'এ বছর পাবনায় প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ কাটা শেষ হয়নি। পেঁয়াজ কাটা আরও প্রায় এক মাস পর্যন্ত চলবে। এখন পর্যন্ত যেসব জমির পেঁয়াজ কাটা হয়েছে সেসব স্থানে গত বছরের চেয়ে হেক্টর প্রতি প্রায় অর্ধেক মেট্রিক টন কম পেয়াজের ফলন পাওয়া গেছে।'

পাবনার বিভিন্ন পেয়াজের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর নতুন পেঁয়াজের আমদানি কম হচ্ছে, পাশাপাশি দামও গত বছরের চেয়ে কম বলে জানিয়েছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।

পাবনার পুস্পপাড়া পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, কৃষকদের কাছ থেকে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে পেয়াজ কিনে ঢাকার পাইকারি বাজারে ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। তবে, পরিবহন খরচ বেশি থাকায় পেঁয়াজের ব্যবসা করে লাভ পাওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম না বাড়লে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো যাবে না বলে জানান তিনি।

পুস্পপাড়া পাইকারি বাজারের আড়তদার মো. রবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পেঁয়াজের আবাদ পাবনায় বেশি হলেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কোনো ভূমিকা থাকে না। তাই কৃষকদের দামের জন্য বড় বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়।'

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত থাকায় স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনই বাড়ছে না বলে জানান তিনি।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'সরকার ইতোমধ্যে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করেছে। ফলে, পেয়াজের দাম নিয়ে এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পেঁয়াজ কাটা কেবল শুরু হয়েছে। তাই কৃষকরা পরে ভালো দাম পাবেন বলে আমি মনে করি।'

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago