টিএমএসএসের বিরুদ্ধে করতোয়া দখলের অভিযোগ, জেল-জরিমানা করেও প্রত্যাহার
বগুড়ার সদর উপজেলার নওদাপাড়া এলাকায় করতোয়া নদীর একাংশে মাটি ভরাট করে নদীর উপর রাস্তা তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) এর বিরুদ্ধে।
নদী ভরাটের অভিযোগ পেয়ে আজ শনিবার দুপুরে টিএমএসএসের ইকো পার্কে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীন অভিযান চালান। নদী দখলের সত্যতা পেয়ে টিএমএসএসকে ৮ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক জনকে কারাদণ্ড দেন। পরে কাগজপত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন টিএমএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে-আরা বেগম। তিনি দাবি করেন, যে জায়গা ভরাট করা হচ্ছে সেটি তার নিজের জায়গা। এর পরে ইউএনও জেল-জরিমানা প্রত্যাহার করে নেন। পরে হোসনে-আরা বেগমের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।
হোসেন-আরা বেগম দাবি করেন, 'যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে সেটা তার ব্যক্তিগত জমি। বালু ব্যবসায়ীরা বালু তোলায় জমিটি নিচু হয়েছে। এই জমি চাষের আওতায় আনার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক সেই আবেদন পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে পাঠালে পরিবেশ অধিদপ্তর নিজস্ব জমিতে কাজ করার অনুমতি প্রদান করে।'
টিএমএসএস যদি নদীর জমি ভরাট করে বা নদীর সীমানা অতিক্রম করে তাহলে দুই-পক্ষের সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ করা হবে। এতে অপরাধ প্রমাণ হলে সাজা মেনে নেওয়া হবে, মুচলেকায় লেখেন হোসনে-আরা।
বিষয়টি জানতে চাইলে ইউএনও ফিরোজা পারভীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীর একটি অংশ দখল করা হচ্ছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজকে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথমে গিয়ে নদীর জায়গা ভরাট হওয়া দেখেছি। এর পরে জরিমানা ঘোষণা করা হলে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসেন। নদীর যে সীমানা তারা চিহ্নিত করেছেন সেটাও দেখান এবং দাবি করেন এই জায়গা তার নিজস্ব।'
যেহেতু এই জায়গা তিনি দাবি করছেন সেহেতু নদীর সীমানা যৌথ জরিপের পরে বোঝা যাবে যে তিনি নদীর সীমানা অতিক্রম করেছেন কিনা। সেই জন্য মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে টিএমএসএসের সব কাজ আপাতত বন্ধ আছে।
নদীর ভেতর রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিরোজা পারভীন বলেন, রাস্তা নির্মাণ করছে না। তবে সেখানে নদীর মধ্যে যেটুকু মাটি টিএমএসএস ফেলেছে সেগুলো সরিয়ে নিবে বলে তারা জানিয়েছে।
জরিমানা করে প্রত্যাহারের সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে চাইলে বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যতদূর জানি জরিমানা করেনি, ইউএনও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হোসনে-আরা এসে মুচলেকা দিয়েছেন যে তিনি এখানে আর কাজ করবেন না। যে জায়গা তিনি ভরাট করছেন সেই জায়গা আমরা বলছি নদীর জায়গা, কিন্তু তিনি বলছেন সেটি তার জায়গা। যেহেতু আমরা জরিপ করিনি সেহেতু জরিমানা করতে পারছি না। যৌথ জরিপের পরে বোঝা যাবে আসলে এটা কার জায়গা।'
এর আগেও ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন করতোয়া নদীর দখলদারদের একটা তালিকা তৈরি করে। সেখানে টিএমএসএসের নাম দুবার উল্লেখ করা হয়। বগুড়া সদর উপজেলার মহিষবাথান মৌজায় করতোয়া নদীর ৪ দশমিক ৯০ একর জমিতে আধপাকা অবকাঠামো নির্মাণ করে দখলে রেখেছে টিএমএসএস যার দাগ নম্বর ১৫৫৩। গত কয়েক বছর জেলা প্রশাসন দখলদারদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান পরিচালনা করলেও টিএমএসএসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি।
টিএমএসএসের দাবি, নদীর এই ৪ দশমিক ৯০ একর জমি তারা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছে। দখল করেনি।
লীজের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী বা প্রাকৃতিক জলাধার লিজ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'
কেন তাহলে টিএমএসএসকে উচ্ছেদ করা যায়নি কেন, জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের তালিকা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি এখানে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে যোগ দিয়েছেন। অবগত হলে ব্যবস্থা নেবেন।
উল্লেখ্য, বগুড়ার নদী দখলদারদের তালিকা পরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছিল।
Comments