লেজার রশ্মিতে পাল্টে যাবে বজ্রপাতের স্থান

লেজার রশ্মিতে পাল্টে যাবে বজ্রপাতের স্থান
সুইজারল্যোন্ডের পর্বতের ওপর থেকে উচ্চ শক্তির নিখুঁত লেজার রশ্মি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা অবশেষে বজ্রপাতনে নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় বের করতে পেরেছেন। ছবি: সংগৃহীত

লেজার রশ্মি ব্যবহার করে বজ্রপাতকে নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পদার্থবিজ্ঞানীদের আশা এই আবিষ্কার একদিন বিমানবন্দর, রকেট উৎক্ষেপণ স্থানসহ বহু সংবেদনশীল স্থাপনাকে রক্ষায় কাজে আসবে। 

বর্তমানে বজ্রপাতের হাত থেকে কোনো ভবনকে রক্ষায় লাইটনিং রড ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত লেজার প্রযুক্তিটির দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এটি ঠিক কতটা কার্যকর ও উপযুক্ত হবে, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। 

পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে ৪০-১২০টি বজ্রপাত হয়। বছরে বজ্রপাতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আঘাতে মারা যান প্রায় ৪ হাজার মানুষ আর ক্ষতি হয় শত শত কোটি ডলারের সম্পদ। 

এত বড় ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে বর্তমানে ভবনের ছাদে লাইটনিং রড ব্যবহার করা ছাড়া আর তেমন কোনো বিকল্প নেই। ১৭৫২ সালে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন।  

অনেক বছর ধরে ৬টি গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা সম্মিলিতভাবে ফ্রাঙ্কলিনের একই ধারণার ওপর ভিত্তি করে আরও উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানীরা ধাতব লোহাকে নিখুঁত লেজার দিয়ে প্রতিস্থাপন করে এই সফলতা পেলেন। 

নেচার ফোটোনিক্স জার্নালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের একটি পাহাড়ের ওপর থেকে নিখুঁত লেজার রশ্মি ব্যবহার করে বজ্রপাতের গতিপথ ৫০ মিটারের মতো পরিবর্তন করা গেছে। 

গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক এবং ইএনএসটিএ প্যারিস ইনস্টিটিউটের পাদার্থবিদ অরেলিয়েন হওয়ার্ড বলেন, 'বজ্রপাতের ওপর লেজারের কোনো প্রভাব আছে কি না, সেটি পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম। দেখলাম সহজে এটি বজ্রপাতকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হলো।'

বজ্রপাতের ফলে যে বিশাল শক্তি উৎপন্ন হয়, বিজ্ঞানীরা আগেও সেটিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। ২০০৪ সালে মেক্সিকোতে ও ২০১১ সালে সিঙ্গাপুরে লেজারের সাহায্যে বজ্রপাতকে নিয়ন্ত্রেণের চেষ্টা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এখন আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী ও নিখুঁত লেজার ব্যবহার করে এই সফলতা পাওয়া গেছে। 

তবে বিজ্ঞানীরা এই দফায় সাফল্য পেয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের উত্তরপূর্বাঞ্চলের স্যান্তিস পর্বতের চূড়ায় ১২৪ মিটার লম্বা একটি টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ারের পাশেই শক্তিশালী লেজার স্থাপন করা হয়েছে। লম্বা ধাতব হওয়ায় এই টাওয়ারটি লাইটনিং রড হিসেবে কাজ করে এবং বছরে শতাধিক বজ্রপাত এটিতে আঘাত হানে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বিজ্ঞানীরা লেজার রশ্মি দিয়ে বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। 

এই সময়ের মধ্যে টাওয়াটিতে ১৫ বার বজ্রপাত আঘাত হানে, এরমধ্যে ৪ বারই লেজার রশ্মি চলমান ছিল। গবেষকরা দেখেছেন, এই ৪ বারই বজ্রপাত লেজার রশ্মির পথ অনুসরণ করেছে এবং এই বজ্রপাতগুলোর পতনস্থল ৫০ মিটার পর্যন্ত পরিবর্তন করা গেছে। 

লেজার রশ্মি দিয়ে সব ধরনের বজ্রপাতকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না, সেটি বুঝতে আরও অনেক গবেষণা করতে হবে। তবে যে সফলতা ইতোমধ্যে পাওয়া গেল, সেটিকেও 'উল্লেখযোগ্য' হিসেবে মন্তব্য করেছেন হওয়ার্ড। 

সূত্র: সায়েন্স, এবিসি
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Publish newspaper ads asking Hasina, Asaduzzaman to appear on June 24: ICT

Another accused, former IGP Mamun, is already under custody and was produced before the court today

1h ago