বজ্রপাতের সময় নিরাপদে থাকার ৫ উপায়

বজ্রপাত থেকে রক্ষা
ছবি: সংগৃহীত

বজ্রপাতের সময় নিজেকে বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর বিষয়টি সম্পর্কে সবারই সচেতন থাকা উচিত। বাজ পড়ার পর ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক, উভয়ভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

এতে করে পেশিতে ব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, হকচকিয়ে যাওয়া, কানে কম শোনা, খিঁচুনি, পুড়ে যাওয়া, আচরণগত পরিবর্তন, চোখের ছানি এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো ভয়াবহ বিষয়ও ঘটতে পারে। এক কথায় বজ্রাঘাতে আক্রান্ত হওয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী।

তাই বজ্রপাতের সময় নিজেকে রক্ষা করা ও সম্ভাব্য ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ রইল।

ঘরের ভেতর থাকুন

আকাশে যখন বিজলী চমকাচ্ছে, বাজখাঁই শব্দে ঘরদোর কাঁপছে– এমন সময়ে ঘরের মধ্যে থাকাটাই নিজেকে নিরাপদ রাখার সবচেয়ে ভালো উপায়। একটু দূর থেকে এই শব্দ বা দৃশ্যের প্রতি মুগ্ধতা আসাটা আশ্চর্যের কিছু নয়, কিন্তু কাছে গেলেই বাঁধবে বিপদ। তাই ঝড় থেমে যাওয়া পর্যন্ত জানালা-দরজা বন্ধ করে ঘরের মাঝে আশ্রয় নেওয়াটাই ভালো। কারণ সরাসরি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে বজ্রাঘাতে পড়ার আতঙ্কও নেই।

গাছের নিচে আশ্রয় নয়

ঝড়ের সময় কখনো যদি ঘরের বাইরে থাকাও হয়, এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে কোনো গাছের নিচে যাওয়া যাবে না। সাধারণ বৃষ্টিপাতের সময় গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়াটা বেশ আরামদায়ক, কিন্তু বজ্রপাতের সময় নয়। কারণ অনেক সময়ই গাছের উপর বাজ পড়ে এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসেবে গাছ খুব একটা ভালো নয়।

তাই গাছের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে মাটিতে পৌঁছায়। এ ছাড়াও অনেক উঁচু পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকার কারণে গাছের উপর বাজ পড়ার ঝুঁকিও অনেক বেশি। তাই ঝড় ও বজ্রপাত চলাকালীন কেউ গাছের নিচে আশ্রয় নিলে মাটিতে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর সময় সেই ব্যক্তিরও তড়িতাহত হওয়ার অনেক বেশি আশঙ্কা থেকে যায়। যদি গাছ সরাসরি আক্রান্ত নাও হয়, দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাটির সেই অংশে বাজ পড়লেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

খালি পায়ে থাকা যাবে না

অনেকেই বাড়িতে জুতা বা স্যান্ডেল পরে থাকা পছন্দ করেন না। তবে ঝড়-বৃষ্টি, বিশেষ করে বজ্রপাতের সময়টাতে এ অভ্যাস পাল্টে নেওয়াই ভালো। নয়তো ভূপৃষ্ঠ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় তা শরীরেও সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। অন্তত বজ্রপাতের সময়গুলোতে বাড়িতেও রাবার সোলের জুতা পরে থাকাটা বিচক্ষণের কাজ হবে। এতে করে মাটিতে প্রবাহিত বিদ্যুৎ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। তাই ঘরে হোক বা বাইরে, পা যেন কখনোই খালি না থাকে– এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

উঁচু স্থান এড়িয়ে চলুন

বজ্রঝড়ের সময় যথাসাধ্য উঁচু স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এগুলোই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এ ছাড়া মাটি থেকে বেশি উপরে থাকার ফলে ব্যক্তির এতে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকিও বেশি থাকে। কেউ যদি ঝড়ের সময় খোলা জায়গায়, গাছের নিচে বা আশপাশে কিংবা যেকোনো ধরনের খুঁটির কাছে দাঁড়ায়, তবে বজ্রাঘাতের আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই প্রকৃতির এই ভয়াবহ রূপ থেকে বাঁচতে চাইলে এ সময়টায় নিচু ভবন এবং ঘরদোরের মধ্যে থাকাটাই ভালো কৌশল।

গোসল করবেন না

বজ্রপাতের সময় গোসল না করার বিষয়টি অনেক বেশি মান্ধাতার আমলের কথা মনে হলেও এর কিছুটা সত্যতা রয়েছে। বজ্রপাতের কারণে বিদ্যুতের শকওয়েভ যেহেতু বিভিন্ন ধাতব পাইপ,বাথরুমের কলের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হতে পারে, সেক্ষেত্রে যদি কোনো বাড়ি বা ভবনের উপর বাজ পড়ে, তাহলে সে সময় গোসল করলে কিংবা এসব জিনিস স্পর্শ করলে বিদ্যুতাহত হওয়ার আশঙ্কা বাদ দেওয়া যায় না। এ ছাড়া পানিতেও বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। তাই বজ্রপাত থামার পর অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পরই গোসল বা অন্যান্য কাজে বাথরুমের কল ছাড়া উচিত।

যে যেখানেই থাকুন না কেন, আবহাওয়ার দিকে নজর রাখুন, যাতে করে সময় মোতাবেক সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া আপনার জন্য সহজ হয়। নিরাপদ রাখুন, নিরাপদে থাকুন।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser's suggestion on voter age

Chief Adviser suggests minimum voter age of 17

"If the majority of the people of the country like the age to be recommended by the Commission, I will accept it"

3h ago