ঢাকায় ১৯ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কাঁচাবাজার

রায়ের বাজারের কাঁচাবাজার। ছবি: পলাশ খান/দীপন নন্দী

রায়ের বাজারে ঢাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। 

১৬ বছর আগে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মার্কেট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও সেটি এখনো টিকে আছে। এখনো সেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ জীবন বাজি রেখে পণ্য কেনা-বেচা করে থাকেন। 

গত ২ দশকে রাজধানীতে মোট ১৯টি কাঁচাবাজারের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপরও লাখ লাখ মানুষ সেগুলো ব্যবহার করছেন।

ওই মার্কেটের মুদি দোকানদার রশিম মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেয়। আমাকে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হবে। আমি জানি যে বিল্ডিংয়ে আটকে পড়লে আমি মারা যেতে পারি। সরকার যদি আমাদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করে তাহলে এখান থেকে সরে যেতে পারি।'

শরীয়তুল্লাহ নামে একজন বেসরকারি কর্মচারী, তিনি প্রতিনিয়ত ওই বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনেন। তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছে সিটি করপোরেশন শুধু ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। তারা আর কিছু করতে আগ্রহী না।'

মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ভবনে থাকা দোকানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন অব্যাহত রেখেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা বর্তমান ও সাবেক মেয়রদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছি এবং তাদের বলেছি যে আমরা একটি নতুন ভবন দরকার। কিন্তু তারা এখনো সাড়া দেয়নি।'

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা রায়ের বাজারের কাঁচাবাজারটি স্থানান্তরের জন্য জায়গা খুঁজছি। বর্তমান ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। সেকানকার দোকান মালিকরা নতুন ভবনে দোকান পাবেন। আমরা এখনই সেটা ভেঙে ফেলতে পারব না, তার কারণ দোকান মালিকদের অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে হবে।'

ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ১৯টি কাঁচাবাজারের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধিনে ৯টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিনে রয়েছে ১০টি ভবন।

ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাসের বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর মধ্যে ৩টি সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। বাকিগুলোর কাজও আমরা শিগগিরই শুরু করব।'

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, 'করপোরেশন কয়েকটি ভবন নিলামে তোলার প্রক্রিয়াধীন ছিল। সেটা শেষ হলে, তারা ভবনগুলো ভেঙে ফেলবে।'

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারওয়ান বাজারের ৪টি কাঁচাবাজার পর্যায়ক্রমে ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।'

বর্তমান ভবনগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রথম তলার ছাদে শুধু খালি রডগুলোই রয়ে গেছে। দোকানদাররা স্টিলের পাইপ বসিয়েছেন, যাতে ছাদ ভেঙে না পড়ে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবস্থা

২০২০ সালের ৯ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ২২ মার্চের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ও কারিগরি কমিটি ১০টি মার্কেটসহ মোট ৪৬টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে।

বাবুবাজারের নবাব ইউসুফ মার্কেটে ৭টি দোতলা ভবনের ছাদ আংশিক ভেঙে পড়েছ এবং কয়েকটির সিঁড়ির রেলিং ভেঙে গেছে।

সাম্প্রতিককালে এসব ভবন পরিদর্শনে কোনোটিতেই ডিএসসিসির সতর্কবার্তা চোখে পড়েনি। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সেগুলো ভেঙে পড়ে প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

ওই বাজারটিতে ৭৩০টি দোকান রয়েছে যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যান বেচা-কেনা করতে।

নবাব ইউসুফ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের জানানো হয়নি  যে এই মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আমাদের চিঠি দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া সিটি করপোরেশন নতুন ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে এবং ভাড়া আদায় করছে।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিটি করপোরেশন একবার একটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করলে, বহু প্রাণহানির ঝুঁকি এড়াতে তা অবিলম্বে উচ্ছেদ করে ভেঙে ফেলা উচিত।'

জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা কয়েকবার দোকানদারদের সতর্ক করেছি। আমরা তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করি না। এসব মার্কেট থেকে করপোরেশন কোনো রাজস্ব পায় না।'

তিনি আরও বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের কয়েকটি ভবন ভাঙতে আইনি বাধা রয়েছে।'

'আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব এড়াতে পারি না' বলেনও স্বীকার করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago