টি-টোয়েন্টিতে নতুন আদলের বাংলাদেশের পরীক্ষা
এই দফায় দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় এসেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, তার জন্য সবচেয়ে কঠিন হবে টি-টোয়েন্টির চ্যালেঞ্জ সামলানো। এই সংস্করণেই যে সবচেয়ে বেহাল দশা বাংলাদেশের। সেই কঠিন পরীক্ষার প্রথমটির আগে সে কথা মনে করিয়ে দিতেই বললেন, 'মাত্র তো আজই টি-টোয়েন্টি দল দেখলাম। সেতুর নিচে গিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে যাওয়া বাকি।' আঁচ করা যায় ২০২৪ বিশ্বকাপের আগে আদর্শ সমন্বয় খুঁজে পেতে অনেক কিছুই বাজিয়ে দেখবেন তিনি। সেই প্রক্রিয়ার শুরুটা হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে।
২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির যাত্রা শুরু হলেও এতদিন বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে কোন সিরিজ খেলেনি। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুর স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া সিরিজ একদিকে তাই ঐতিহাসিকও। দুই দলের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ বলে কথা। আইসিসি ইভেন্টেও এই সময়ে দুই দলের দেখা হয়েছে স্রেফ একবার। ২০২১ সালে আবুধাবিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ। সেটাই এখন পর্যন্ত একমাত্র লড়াই।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির চেয়ে ওয়ানডে নিয়েই ছিল বেশি আশা। সহায়ক কন্ডিশনে ওয়ানডে জেতা যায়নি, নড়বড়ে টি-টোয়েন্টি নিয়ে আর কি করা যাবে? সর্বশেষ খেলা বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ গেছেন পাঁচজন, দলে এসেছেনও পাঁচজন। এরমধ্যে তিনজন আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। প্রায় খোলনলচে বদলে ফেলা একটা দল চট করে নেমে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেবে, এমনটা হয়ত সাহস করে বলার বাস্তবতা এতটা নেই। যদিও মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে বড় প্রতিপক্ষকে কাবু করার একটা ছক ঠিকই সেরে নিয়েছেন সাকিব আল হাসানরা।
মিরপুরে প্রথম দুই ওয়ানডে হেরে আসায় চট্টগ্রামের চেনা ব্যাটিং বান্ধব উইকেট রাখা হয়নি এবার, তৃতীয় ওয়ানডেতে 'ডেড রাবারে' তাই এসেছে জয়। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সেই উইকেটই থাকছে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। হাথুরুসিংহেকে উইকেট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানিয়ে দিলেন দুই দিনে তো আর উইকেট বদল হবে না। ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকসও ঝিমিয়ে পড়া কন্ঠেই বললেন, ওয়ানডে থেকেও মন্থর হতে পারে ব্যবহৃত উইকেট।
এমন উইকেটে তাই স্পিন শক্তির উপরই বলিয়ান হবে বাংলাদেশ। এমনটা খুব অনুমেয়। দুই পেসারের সঙ্গে তিন স্পিনার দেখা যেতে পারে একাদশে। সর্বশেষ খেলা টি-টোয়েন্টি থেকে একাদশে অনেকগুলো বদল এমনিতে অনিবার্য।
৮ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে নিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বৃহস্পতিবারই খেলে ফেলতে পারেন রনি তালুকদার। বিপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা রনি ওপেন করতে পারেন লিটন দাসের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে তিনে দেখা যেতে পারে বিপিএলে সর্বোচ্চ রান করা নাজমুল হোসেন শান্তকে। চারে অধিনায়ক সাকিব এলে পাঁচে অভিষেক হতে পারে তৌহিদ হৃদয়ের। ছয়ে আফিফ হোসেনের জায়গা বরাদ্দ।
সাত নম্বরে শামীম হোসেন পাটোয়ারি নাকি নুরুল হাসান সোহান এই জায়গায় একটু সংশয় আছে। সোহান বিশ্বকাপে ছিলেন দলের সহ-অধিনায়ক। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাকে সে পদে রাখা হয়নি। বিশ্বকাপে চরম বাজে পারফর্ম করা এই কিপার ব্যাটার বিপিএলেও তেমন কিছু করতে পারেননি। তার জায়গা তাই নড়বড়ে। সোহানের একাদশের সংশয় বাড়িয়েছে লিটনের কিপিং অনুশীলন। সকালে দলের অনুশীলনে ব্যাটিংয়ের আগে কিপিং অনুশীলন করেন লিটন। পরে সোহানও কিপিং অনুশীলন করেন। দুই নেট ঘুরে ব্যাট করতেও দেখা যায় তাকে।
আটে মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গা পাকা। দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আরেকজন পেসার নাকি বাঁহাতি স্পিনার নেওয়া হবে এতেও আছে কিছুটা দোলাচল। পেসার নিলে খেলবেন হাসান মাহমুদ। স্পিনার নিলে নাসুম আহমেদ থাকবেন এগিয়ে।
উইল জ্যাকস চোটে পড়ে ছিটকে যাওয়ায় ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড স্রেফ ১৩ জনের। ব্যাকআপ খেলোয়াড় তাই প্রায় নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে ওয়ানডে সিরিজ খেলে পাকিস্তানে পিএসএল খেলতে চলে গেছেন জেসন রয়। দলে এসে যোগ দিয়েছেন ক্রিস জর্ডার আর বেন ডাকেট।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের জন্য এটি আরেকটি ব্যাকআপ শক্তি পরীক্ষার মঞ্চ। টি-টোয়েন্টির নিয়মিত একাদশে অ্যালেক্স হেলস, লিয়াম লিভিংস্টোন, হ্যারি ব্রুক, বেন স্টোকসরা নেই। তাতেও খর্ব শক্তির মনে হচ্ছে না তাদের। মন্থর উইকেটে অবশ্য তারা কেমন করে দেখার বিষয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে ম্যাচ। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ ঢাকায়।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: লিটন দাস, রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন/নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ/নাসুম আহমেদ।
ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ: জস বাটলার, ফিল সল্ট, ডাভিড মালান, বেন ডাকেট, মঈন আলি, স্যাম কারান, ক্রিস জর্ডান, রেহান আহমেদ, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, জোফরা আর্চার।
Comments