পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে আহত ৩০, বাড়িঘরে আগুন
পঞ্চগড়ের আহম্মদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) ৩ দিনব্যাপী সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা। এ সময় মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে ৭ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ২০টি বাড়িঘর ও ৪টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
পঞ্চগড় থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আক্তারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীরা চৌরঙ্গী মোড়ে জড়ো হয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে শহরের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে আহম্মদ নগরে সালানা জলসা কেন্দ্র অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের বাধা দেওয়া হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ শুরু করে। পরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও বিজিবির গাড়িতে হামলা চালায়। এতে পুলিশ সুপারের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে থানা ঘিরে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।'
পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।'
সংঘর্ষে আহত পঞ্চগড় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউয়ুম আলী, ভবেস চন্দ্র পাল, টিআই কাজী কামরুল ইসলাম, এএসআই মো. আব্দুল্লাহ, পুলিশ সদস্য আলআমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামান এবং অন্যান্য আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বসতি আহম্মদনগরে আজ থেকে ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক জলসা শুরুর কথা। এটিকে কেন্দ্র করে গতকাল থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ফলে, সংঘর্ষের আশঙ্কায় আজ সকাল থেকে শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অব্যাহত ছিল।
আজ দুপুরে সালানা জলসার প্রেস ইনচার্জ মাহমুদ আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, 'নামাজের পর আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও চলমান উত্তেজনার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে।'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, 'আহম্মদনগরের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১০টির বেশি বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা আগুন দিয়েছেন।'
সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সম্মেলন বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা মাশায়েক আইম্মা পরিষদসহ বেশ কিছু সংগঠনের কর্মীরা কয়েকটি সড়ক অবরোধ করেন।
তবে, পঞ্চগড় ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব ঘটনায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। সংগঠনের নামে সুযোগ সন্ধানী কেউ এসব ঘটাচ্ছে।'
রাত ৮টার দিকে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়া আশ্বাস দিয়েছেন।'
Comments