উত্তর কোরিয়ায় কি খাদ্য সংকট চলছে

উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট
জুংফিংং এলাকায় সবজি খেতে কিম জং উন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

পশ্চিমের ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞায় 'বন্দি' উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট চরমে—বিশ্ব গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রচারের পর দেশটির নেতা কিম জং উন কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে সত্যিই কি উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট চলছে?

আজ শুক্রবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়—দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে যে প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট 'চরমে'। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিংক ট্যাংক 'থার্টি এইট নর্থ' বলেছে উত্তর কোরিয়া দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।

কী ঘটছে উত্তর কোরিয়ায়?

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তার অভাব। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দুর্ভিক্ষে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্লেষকদের অভিমত, বৈরী আবহাওয়া ও করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দিন চীনের সঙ্গে সীমানা বন্ধ থাকার কারণে উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয়ভাবে সব পরিকল্পনা সাজানোর কারণে অর্থনৈতিক মন্দা, সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অবরোধ এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

গত জানুয়ারিতে 'থার্টি এইট নর্থ'র প্রতিবেদনে বলা হয়, '(উত্তর কোরিয়ায়) সম্ভবত মানুষ তার ন্যূনতম চাহিদা মোতাবেক খাবার পাচ্ছে না।'

দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ২০২১ সালে পরপর দ্বিতীয় বছর উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।

উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট
উত্তর কোরিয়ার কৃষক। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

উত্তর কোরিয়ার কৃষি ব্যবস্থা কেমন?

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষি উৎপাদন বাড়াতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে বলেছেন, ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে 'কোন কিছুই অসম্ভব নয়'।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, কিম খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের তাগিদও দিয়েছেন।

১৯৫০ এর দশক থেকে উত্তর কোরিয়ায় যৌথ কৃষি ব্যবস্থা চলছে।

স্টিমসন সেন্টারের ফেলো ও সাংবাদিক মার্টিন উইলিয়ামস আল জাজিরাকে বলেন, 'উত্তর কোরিয়ার কৃষি ব্যবস্থা কৃষকদের ফসল ফলানোর দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। উৎপাদিত কৃষি পণ্য কেন্দ্রীয়ভাবে বিতরণ করা হয়।'

তার মতে, 'সেসব কৃষি পণ্য মূলত শহরাঞ্চলে অভিজাতদের ঘরে ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।'

দক্ষিণ কোরিয়ার পুনঃএকত্রীকরণ মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় খাবারের অভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সিউলের গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার মতে, প্রবল বৃষ্টির কারণে গত বছর ফসল উৎপাদন প্রায় ৪ শতাংশ কম হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার আবহাওয়া দেশটির কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলেও আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসির ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার মোট ভূমির প্রায় ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদের উপযোগী।

সার-জ্বালানি-যন্ত্রপাতির সংকট, পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে দেশটি অস্ত্রেশস্ত্রে আধুনিক হলেও সেখানকার কৃষি প্রযুক্তি কয়েক দশকের পুরনো।

উত্তর কোরিয়াবাসীর খাদ্যাভ্যাস

উত্তর কোরিয়াবাসীর খাদ্যাভ্যাস নির্ভর করে কে কোথায় থাকছেন তার ওপর। সাংবাদিক মার্টিন উইলিয়ামস বলেন, 'শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পার্থক্য আছে। যদি কারো হাতে অর্থ থাকে তাহলে পিয়ংইয়ংয়ে তুলনামূলকভাবে সহজেই খাবার মেলে।'

'উত্তর কোরিয়াতেও হয়তো মানুষ দিনে ২ থেকে ৩ বার খাবার খান। তবে সেখানে মাংস ও তাজা ফল পাওয়া দুষ্কর। তারা মূলত ভাত ও সবজির ওপর নির্ভর করেন। গ্রামাঞ্চলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বা উৎপাদন ক্ষমতার ওপরও নির্ভর করে তারা কী খাচ্ছেন,' যোগ করেন তিনি।

তার মতে, 'উত্তর কোরিয়ার সমাজে বৈষম্য থাকায় এটা বলা কঠিন যে আসলে কারা দিনে একবেলা খাচ্ছেন আর কারা ৩ বেলা খাচ্ছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles; properties vandalised

3h ago