বঙ্গোপসাগরে জেলের মরদেহ

মা বলছেন ছেলের লাশ, আরেক পরিবার বলছে নিখোঁজ ভাইয়ের

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে অপেক্ষারত মৃত কাইয়ুমের স্বজনরা (বামে) ও ফরিদের স্বজনরা (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

নিখোঁজের ১২ দিন পর বঙ্গোপসাগর থেকে বরগুনার ২ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে একজনের মরদেহ দাবি করছে দুটি পরিবার। 

এক পক্ষের দাবি, মরদেহটি কাইয়ুম মাঝির। অপর পক্ষ দাবি করছে, মরদেহটি জেলে ফরিদের। 

এমন জটিলতায় একটি মরদেহ নিয়ে কোনো বিরোধ না থাকলেও, উদ্ধার দুজনের মরদেহই ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

ডিএনএ পরীক্ষা শেষে দুই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে স্থানীয় প্রশাসন।

আজ বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়ে ৫ জেলে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ থাকার ১২তম দিনে গত সোমবার দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনো নিখোঁজ আছেন ৩ জেলে।

পরিবারের দাবি করা কাইয়ুম মাঝি (৩৫) বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। অপর জেলে ফরিদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের নলী চরকগাছিয়া এলাকায়। 

তারা দুজনই গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে জলদস্যুর শিকার হওয়া ট্রলারে মাছ ধরতে বঙ্গোপসাগরে গিয়েছিলেন। রাতের পর থেকে এই দুজনসহ মোট ৫ জেলে নিখোঁজ ছিলেন। 

তাদের মধ্যে গত সোমবার ২ জেলের মরদেহ বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার করে বুধবার সন্ধ্যায় তালতলী উপজেলার সখিনা বাজারে নিয়ে যায় নিখোঁজ জেলের স্বজনরা। 

ওই রাতেই মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কাইয়ুম ও ফরিদ উভয় পরিবারের সদস্যরা একটি মরদেহের দাবি তোলে।

নিখোঁজ কাইয়ুমের ভাই নুরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার দুই ভাই কাইয়ুম ও ইয়াসিন মাছ ধরতে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে ইয়াসিনকে ঘটনার একদিন পর উদ্ধার করা হলেও, কাইয়ুম নিখোঁজ ছিল। ঘটনার দুই দিন পর আমিসহ ৫ জেলের স্বজনরা মিলে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাই। কিন্তু তাদের সন্ধান না পেয়ে আবার ফিরে আসি।'

'পরে গত সোমবার সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া একটি জেলের মাঝি কালাম আমাদের জানায় যে কাইয়ুমের লাশ পাওয়া গেছে। খবর শুনে দ্রুত ট্রলার নিয়ে আমরা সেখানে গিয়ে আমার ভাই কাইয়ুমের মরদেহ উদ্ধার করি নিয়ে আসি,' বলেন তিনি।

নুরুল ইসলাম বলেন, 'তিনদিন আগে যখন আমরা সাগরে ভাসমান অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করি তখনও কাইয়ুমের চেহারা বিকৃত হয়নি।  আমি চেহারা দেখে নিশ্চিত হই এই মরদেহ আমার ভাই কাইয়ুমের। পরে সেটি ট্রলারে তুলে বরফ দিয়ে নিয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ আরেক জেলে কালামের মরদেহ ভাসতে দেখে সেটিকে নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় তালতলীর ফকিরহাটে পৌঁছাই। এই মরদেহ আমার ভাই কাইয়ুমের এটি আমি নিশ্চিত।'

হাসপাতালে মরদেহটি নেওয়ার পর একই ঘটনায় নিখোঁজ অপর জেলে ফরিদের পরিবার মরদেহটি ফরিদের বলে দাবি করে।  

খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান ফরিদের মা আনোয়ারা বেগম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোর পোলারে মুই চিনি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমার ছেলের নিচের দিকে ৩টা দাঁত পড়ে গিয়েছিল। এই লাশেরও ৩টা দাঁত নেই।'

ছয় ও দুই বছরের দুই মেয়েকে হাসপাতালে গেছেন ফরিদের স্ত্রী মিতু। মিতুর দাবি, 'এটা ফরিদের লাশ। আমার স্বামীর লাশটা আমাদের দিয়ে দেন।'

যোগাযোগ করা হলে বরগুনার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সায়লা ফেরদৌস আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসা দুটি মরদেহ বিকৃত হয়ে গেছে। দুই পরিবার একটি মরদেহের দাবি করছে। সে কারণে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য স্বজনদের ও মরদেহের ডিএনএ নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে।'

'ডিএনএর ফলাফলের ভিত্তিতে মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে,' বলেন তিনি।

পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উদ্ধার হওয়া দুটি মরদেহের একটি আবুল কালামের। এটি নিয়ে জটিলতা নেই। তবে যেহেতু জেলে নিখোঁজের ঘটনায় মামলা হয়েছে, তাই ফরেনসিক পরীক্ষা হওয়ার পরই আমরা উভয় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।'
 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

7h ago