দৈনন্দিন জীবনে চ্যাটজিপিটির ৫ ব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনে চ্যাটজিপিটির ৫ ব্যবহার
ছবি: রয়টার্স

সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন নিয়ে আলাপ-আলোচনার বেশ তোড়জোড় চলছে। এ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে চ্যাটজিপিটি নামের একটি চ্যাটবট। মানুষের বিকল্প হিসেবে চ্যাটজিপিটি কতটা জায়গা করে নেবে কিংবা আদৌ নেবে কি না, এ নিয়েই যত দুশ্চিন্তা। 

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, চ্যাট জিপিটির হাতে অন্তত শিগগিরই মানুষের কোনো চাকরি স্থানান্তরিত হচ্ছে না, তবে মানুষ চাইলে নিজেদের কাজে এর সদ্ব্যবহার করতে পারে। এরই জের ধরে আজকের লেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুল আলোচিত এই প্রযুক্তিটিকে দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানোর কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো–

গুগলের বিকল্প

যে কাজটি গুগল ২ ধাপে করতে সক্ষম, চ্যাট জিপিটি তা এক ধাপে করতে পারে। অর্থাৎ, অর্ধেক পরিশ্রম কমে যাবে। দরকারি কোনো তথ্যের জন্য একজন গবেষককে অনেকগুলো লিংক ধরে তা বের করতে হবে না। বরং সার্চ তালিকায় কয়েকটি কি-ওয়ার্ড চেপে ধরলেই নির্ভুল তথ্যটি বেরিয়ে আসবে। আর এ তথ্য পড়ার পাশাপাশি কোনো ঝুঁকি ছাড়াই 'কপি-পেস্ট' করা যাবে। চ্যাট জিপিটিতে যে প্রাথমিক তথ্য দেওয়া হয়, তা যদি সবেশেষ হালনাগাদকৃত না হয় বা শুধু ২০২১ সাল পর্যন্তই হালনাগাদ করা থাকে– তবুও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ঘাঁটাঘাঁটি করে চ্যাট জিপিটি সম্ভাব্য তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করতে পারবে। এটি থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভাষা হবে সরল এবং সহজবোধ্য। 

লেখার সঙ্গী

না, লেখালেখির জগতে চ্যাট জিপিটির ঢুকে পড়া নিয়ে লেখকদের এখনই চিন্তার কিছু নেই। কেন না এই প্রযুক্তির মধ্যে অভিজ্ঞ লেখকের মতো মানবিক কোনো স্পর্শ নেই, যাতে করে লেখা গভীর ও বোধসম্পন্ন হতে পারে। তবে এটি ব্যবহারের মাধ্যমে কভার লেটার, প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল, কর্মীর মূল্যায়নপত্র ইত্যাদি মৌলিক কিছু লেখা বের করে আনা সম্ভব। এ ছাড়া মানবলেখকেরা চাইলে চ্যাটজিপিটিকে নিজের লেখালেখির সহযোগী বা 'চিন্তা-ভাবনার অংশীদার' হিসেবেও কাজে লাগাতে পারেন। হয়তো লিখতে বসেছেন, কিন্তু হুট করে মাথায় দরকারি কোনো সমার্থক শব্দ আসছে না, বা লাগসই তথ্যটা জমছে না। এসব কিছুই জেনে নেওয়া যেতে পারে চ্যাট জিপিটির কাছ থেকে। আর লেখক নিজে এসব খাটাখাটনি থেকে রেহাই নিয়ে মন দিতে পারেন সৃজনশীল কাজে।

তথ্য বিশ্লেষণ

ভাষাভিত্তিক তথ্যের ইনপুট দিলে চ্যাটজিপিটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। গবেষক, শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর অনেকটা সময় বাঁচিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। নিজের হাতে সব পরিসংখ্যানগত কাজ সারতে হবে না আর। এমনকি বাজারের চলমান হিসাব-নিকাশ জেনে বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে সক্ষম চ্যাটজিপিটি। কোন জায়গায় বিনিয়োগে বেশি লাভ, কোন ঝুঁকিটা কীভাবে এড়ানো যায়– এসব বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে পরামর্শ দিতে পারবে এটি। এ ছাড়া বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মিশেল ঘটিয়ে বাজার বিষয়ক পূর্বাভাসও পাওয়া সম্ভব এর মাধ্যমে। 

কোডিং সহকারী

কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ওডেড নেটজার মনে করেন, কোডারদের কাজ আরও সমৃদ্ধ করতে এবং তাদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহায়ক হতে পারে। তিনি বলেন, 'এটি বেশ ভালো কোড লিখতে পারে।' এমনকি একজন টিকটক ব্যবহারকারী খুব সহজেই চ্যাটবটের সাহায্য নিয়ে একটি কোডিং ভুল ধরতে সক্ষম হয়েছেন, এমন উদাহরণও রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে। 

ভালো বন্ধু

চ্যাট জিপিটি ব্যবহারের সম্ভাবনা ও সুবিধা, দুই-ই সীমাহীন। দিনের সব কাজকর্মের রুটিন তৈরি করতে, খাওয়া-দাওয়ার সঠিক পরিকল্পনা করতে এবং সময়ের ওপর ভিত্তি করে কোন কাজ করা উচিত আর কোনটি এড়িয়ে চলা উচিত– নিত্যদিনের এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে চ্যাটজিপিটি নামের এই সঙ্গীটি। 

কোনো ব্যবসার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দরকার হলে বা ক্রেতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হলেও এই বন্ধুটিকে কাজে লাগানো যায়। শুধু তাই নয়, চাকরিপ্রার্থীরা তাদের নিয়োগদাতার সঙ্গে বেতন বা সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত আলোচনার জন্য বেশ বুদ্ধিদীপ্তভাবে 'দামাদামির আলাপ'ও লিখে দিতে পারে চ্যাট জিপিটি। বন্ধুদের সঙ্গে যেমন হয়, ঠিক তেমনি যত বেশি সময় কাটানো হবে– চ্যাট জিপিটি ততই ভালো 'জানতে' শিখবে তার ব্যবহারকারীটিকে। দিন দিন তার সাড়া দেওয়ার বিষয়টিও হবে আরেকটু দক্ষ, আরেকটু কার্যকর। তবে দিনশেষে যেহেতু এটি একটি যন্ত্র, তাই নিজের সংবেদনশীল তথ্য এবং কাজগুলোর সম্পর্কে একটু সামলে চললে পরবর্তী কয়েক বছরে জীবন সহজ করতে চ্যাটজিপিটি অত্যন্ত সহায়ক হবে, তাতে সন্দেহ নেই। 

 

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday ordered the authorities concerned to complete, by December, the preparations for the upcoming national election.

6h ago