‘ভেতরে ভেতরে গুঞ্জনটা আমার ভালো লাগছিল না’
সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা এক সাক্ষাতকারে ফাঁস করে দেওয়া নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
সোমবার রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সভা সেরে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন তিনি। এরপর দেন নানান প্রশ্নের উত্তর।
পুরো দলের সঙ্গে সভা করলেন। কি নিয়ে আলাপ হলো?
নাজমুল: আসলে যেটা হয়েছে…কয়েকটা বিষয় ছিল (আলোচনার)। (চন্ডিকা) হাথুরুসিংহের সঙ্গে বিসিবিতে একদিন দেখা হয়, খুব একটা বেশি সময় ছিল না। তামিমের সঙ্গে সামনা সামনি দেখা হয়নি। যেহেতু ওরা হোটেলে এসেছে ভাবলাম দেখা করে যাই। কালকেও চেষ্টা করব আসতে। আসলাম সবার সঙ্গে কথা বললাম, কোচিং স্টাফরাও ছিল। নির্দিষ্ট কিছু না।
তামিম-সাকিবের মধ্যে বিরোধ নিয়ে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তামিম বলেছেন দলে কোন গ্রুপ নেই।
নাজমুল: সিম্পল বিষয় হচ্ছে আজ থেকে তিন বছর আগেও ড্রেসিংরুমে কোন সমস্যা আমি দেখিনি। আপনি ১৫ বছর থেকে কাট করে ১২ বছর করে দেন। গত তিন বছর আমি নাই দলের সঙ্গে। আগে আমি সব সময় থাকতাম। এই কথাটা যেটা এসেছে যে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ভালো না। এই কথাটা আমার বাইরে থেকে শোনা। সবচেয়ে বেশি আমি মিডিয়া থেকে শুনেছি। মিডিয়ার লোকরাই বেশি বলে। গত বিশ্বকাপ যেটা হলো অস্ট্রেলিয়ায় ওখানে সব খুব ভাল দেখলাম। আমি কিন্তু ওখানে ড্রেসিংরুমে সমস্যা শুনি না। এর আগের শুনি নাই। আমি যেটা শুনেছি, তামিম ওটাই বলেছে। আমি ওদের ডেকে বলেছি কোন সমস্যা আছে কিনা, ওরা দুজনেই আমাকে আশ্বস্ত করেছে, 'যেটা আছে এটা খেলায় কোন প্রভাব ফেলবে না।' এবং আমিও আমার সাক্ষাতকারে সেটাই বলেছি। এবং তামিমও সেটাই বলেছে।
দলের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর না কেন?
নাজমুল: এটা তো শোনা কথা। আমি তিন বছর আগে যখন দলের সঙ্গে থাকতাম আমি কখনো তাদের বলি নাই, ভাবিও নাই। মাঝখানে সবাই বলা শুরু করল ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ভালো না। আমি জানিও না আসলে, দেখিও নাই। আমি গত বিশ্বকাপে গিয়ে দেখেছি, আমার কাছে কোন সমস্যা আমি দেখিনি। জালাল ভাইও ছিল। হয়ত কিছু একটা আছে ওখানটায় আছে কিছু হয়েছে। বলা হতো তামিম ও সাকিব দুজন বন্ধু, সবচেয়ে কাছের। এখন হঠাৎ করে তাদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে যার জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ। দলে তো আরও খেলোয়াড়রা আছে, ওরা (বাকি খেলোয়াড়রা) কারো (সাকিব- তামিমদের মধ্যে) সঙ্গে কথা বলতে ভয় পায়। মানে দ্বিধা-বোধ করে। মানে ভাবে, 'আমি যদি সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে যাই অন্যজন ভাববে আমি উনার (সাকিব) দলে।' ওরা তো কোন দলে না। আবার তামিমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ভাবে কেউ না মাইন্ড করে। ওরা (সাকিব-তামিমো) মাইন্ড করেছে কিনা শুনি নাই। ওরা (বাকি খেলোয়াড়) নিজে থেকে এটা করত। গত বিশ্বকাপে এই সমস্যা ছিল না, গত বিশ্বকাপে অবশ্য তামিম ছিল না । ওদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলাম বাইরে যাই থাকুক খেলায় যেন প্রভাব না পড়ে।
দুজনকে কেন একসঙ্গে করতে পারেননি
নাজমুল: সমস্যাটি কি তাই তো জানি না। সমস্যা জানতে পারলে পরিকল্পনা করতাম কীভাবে এগুনো যায়। এখনো আমি তাদের কাছ থেকে জানতেও চাইনি কী সমস্যা। তবে তারা দুজনেই বলেছে খেলায় প্রভাব নেই। এতে আমার প্রথম কাজ হয়ে গেছে। এখন অনেকদিন পরে আবার তো সবাই খেলছে। আবার দেখার সুযোগ হবে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তামিম ছিল না। এর আগে টি-টোয়েন্টি ছিল। কাজেই ওখানটায় বোঝা যাচ্ছিল না। আমার মনে হয় কোন সমস্যা হবে না। কারণ প্রত্যেকেই পেশাদার, পরিণত। ওরা দলের ক্ষতি হবে এমন কিছু করবে না। যেহেতু কথাটা এসেছে…এই জিনিসটা কিন্তু মিডিয়া জগতের এমন কোন মানুষ নাই যে জানে না( সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব)। আমাকে এত লোক প্রশ্ন করেছে। ঠিকাছে। এই ভেতরে ভেতরে গুঞ্জনটা আমার ভালো লাগছিল না। এটা কিন্তু একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সবার জন্যই। এমনকি খেলোয়াড়দের জন্য। আমি এই জিনিসটা বলে শেষ করতে চাই এটা শেষ। খেলায় ফিরতে চাই।
তাদের বিরোধে যদি খেলায় প্রভাব পড়ে কি করবেন?
নাজমুল: এটা হচ্ছে না। (খারাপ প্রভাব)। এটা হওয়ার সুযোগ নাই।
দলের ভেতর গ্রুপিং কারা করে?
নাজমুল: এটার উত্তর আমি এখন দেব না। যেহেতু একটা সিরিজ সামনে। তবে এটার উত্তর আমি দেব পরে।
তাহলে গ্রুপিং আছে?
নাজমুল: সব সময় থাকে না। জাতীয় দলের খেলায় পাবেন না, খুব কম পাবেন। জাতীয় দলে আপনার বিকল্প কি আছে। গ্রুপিং করবেন কোত্থেকে? একটু বুঝতে হবে। জাতীয় দলের ব্যাপার তা না, জাতীয় দলের কথা বাদ দেন। আমি তো মনে করি আমরা ১৫ জন জাতীয় দলে খেলে একই রকম সম্পর্ক থাকার কথা। ওটা নিয়েই চিন্তা করি। (একটু থেমে) পরে দেব উত্তর।'
আগের মতো সম্পৃক্ত হচ্ছেন দলে?
নাজমুল: দুই বছর যেমন বিচ্ছিন্ন ছিলাম, এখন তো সম্পৃক্ত।
কাদের নিয়ে আপনার স্বস্তি বেশি। আগের খেলোয়াড়দের নাকি উঠতিদের।
নাজমুল: অনেকদিন ধরে যারা খেলছে অভিজ্ঞ তাদের নিয়ে স্বস্তিতে থাকি। যারা উঠতি তাদের নিয়েও স্বস্তিতে আছি। আসলে উঠতি তো তেমন কেউ নাই, সবাই অনেকদিন খেলে ফেলেছে। কাউকে আর নতুন বলার সুযোগ নাই।'
আজ মিটিংয়ে সাকিব এলেন না কেন?
নাজমুল: সাকিব আমাকে ফোন করেছিল। বলেছে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা অনুশীলনে চলে গেছে। বলেছে ওর স্যুটকেস গুছানোর আছে। ও আমাকে বলেছে, 'কাল কি আমি দেখা করতে পারি। আজ একটা কাজ আছে (বিজ্ঞাপনী কাজ)। কাল দেখা করতে চাই।' কাজেই ও আমাকে বলে নিয়েছে (মিটিংয়ে থাকবে না থাকার ছুটি)।'
ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
নাজমুল: আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে জেতার জন্য সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে ভারত। এরপর হচ্ছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের বাড়তি সুবিধা হচ্ছে ওরা টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে চ্যাম্পিয়ন। তাদের সঙ্গে জেতা এত সহজ না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমাদের দল হাইলি চার্জড আপ। সবার দোয়া থাকলে জিতব।
Comments