সবচেয়ে দ্রুতগতির ১০ মোটরসাইকেল

ছবি: সংগৃহীত

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রাস্তায় গড়ে সর্বোচ্চ গতির ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল অন্যান্য সব বাহন থেকে এগিয়ে। এমনকি বিশ্বের দ্রুততম গাড়ি ডেভেল সিক্সটিন-এর থেকেও এগিয়ে আছে সর্বোচ্চ গতির মোটরসাইকেল। 

ডেভেল সিক্সটিনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩৪৮ মাইল! যা অবিশ্বাস্যরকম দ্রুত হলেও বিশ্বের দ্রুততম মোটরসাইকেলের গতির চেয়ে কম৷ চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের ১০টি দ্রুততম মোটরসাইকেল সম্পর্কে।

ডজ টমাহক 

বিশ্বের দ্রুততম মোটরসাইকেলের তালিকায় সবার প্রথমে আছে কিংবদন্তি ডজ টমাহক। যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩৫০ মাইল বা ৫৬৩ কিলোমিটার। এমনকি পৃথিবীর সর্বোচ্চ গতির গাড়িগুলোও এই ধরনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। 

এই সুপারবাইকটির মধ্যে রয়েছে একটি ১০ ভালভের ৪ স্ট্রোকের ৮ হাজার ২৭৭সিসি ইঞ্জিন। অদ্ভুত হলেও, ডজ টমাহকের রয়েছে ৪টি চাকা। যেগুলোর আবার প্রত্যেকটির নিজস্ব সাসপেনশন রয়েছে। ডজ ভাইপার গাড়ির একই ইঞ্জিন এই মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত হয়েছে। যেটি হচ্ছে, ৮.৩-লিটার ভি১০ ডজ ভাইপার এসআরটি১০ ইঞ্জিন। এটি ১ দশমিক ৭৫ থেকে ২ দশমিক ৫ সেকেন্ডের মধ্যে ঘণ্টায় শূন্য থেকে ৬০ মাইল পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। এ ছাড়া এই মোটরসাইকেলে রয়েছে দুর্দান্ত ৫০০ অশ্বশক্তির ক্ষমতা।

আজ অবধি ডজ টমাহকের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে মোটরসাইকেলটির ৪ চাকা এবং অন্যান্য কিছু কারণে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের জন্য আইনিভাবে বৈধতা পায়নি। ২০০৩ সালে এই মোটরসাইকেলটির দাম ছিল ৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার মতো।

২০২৩ বিএমডব্লিউ এস১০০০ আরআর

২০২৩ বিএমডাব্লিউ এস১০০০-এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৯৯ মাইল বা ৪৮১ কিলোমিটার। এই মোটরসাইকেলটির রয়েছে একটি ৯৯৯ সিসি ১৬-ভালভ মোটর ইঞ্জিন। বিএমডাব্লিউ এস১০০০-এর ফ্রেমটি অত্যন্ত হালকা, যা এর গতির জন্যই বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। এই দ্রুততম বিএমডব্লিউ মোটরসাইকেলটির ওজন এর আগের মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় ৪ কেজি কম। 

মোটরসাইকেলটি ২ দশমিক ৭ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ঘণ্টায় ৬০ মাইল পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। এবিএস, ক্রুজ কন্ট্রোল ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলো প্রমাণ করে যে মোটরসাইকেলটি রাস্তায় চলার জন্যেও সুবিধাজনক। এর বাজারমূল্য প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। 

এমভি অগাস্টা এফ৪ ১০০০আর

১০০০ সিসির এই মোটরসাইকেলটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৯৮ মাইল বা প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার। এই বাইকটির হ্যান্ডলিংও বেশ চমৎকার। এই বাইকটি মাত্র ২ দশমিক ৭ সেকেন্ডের মধ্যে শূন্য থেকে ঘণ্টায় ৬০ মাইল পর্যন্ত গতি তুলতে সক্ষম। এর ৮-স্তরের ট্র্যাকশন নিয়ন্ত্রণ, আপনাকে এমন দ্রুত গতিতেও মোটরসাইকেলটি দুর্দান্তভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা দেবে। এমভি অগাস্টা এফ৪ ১০০০আর-এর রয়েছে ১৭৪ অশ্বশক্তির ক্ষমতা। এর বাজারমূল্য প্রায় ৪৭ হাজার মার্কিন ডলার।

এমটিটি ওয়াই২কে ৪২০-আরআর 

এমটিটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারবাইকগুলো তৈরি করে থাকে। যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে, এমটিটি ওয়াই২কে ৪২০-আরআর। যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৭৩ মাইল বা প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার।  

যার পূর্ববর্তী সংস্করণ হচ্ছে, এমটিটি টারবাইন সুপারবাইক ওয়াই২কে-এর ৩২০ অশ্বশক্তির মডেলটি। তবে এই নতুন প্রজন্মের মোটরসাইকেলটিতে রয়েছে ৪২০ অশ্বশক্তির ক্ষমতা। যাতে ব্যবহৃত হয়েছে রোলস রয়েস অ্যালিসন ২৫০-সি২০ গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন। অ্যালিসন ২৫০-এর কয়েকটি ধরন রয়েছে, যেগুলো হেলিকপ্টারে পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়!

এই মোটরসাইকেলটিতে এর পূর্ববর্তী সংস্করণগুলোর প্রায় সমস্ত বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। তবে আগেরগুলোর তুলনায় এতে রয়েছে, একটি বড় সুইং আর্ম, পিরেলি ডায়াবলো ২৪০ রিয়ার টায়ার, বেশি জ্বালানী রাখার সক্ষমতা এবং একটি উন্নত কুলিং সিস্টেম। এর দাম পড়বে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।

এমটিটি টারবাইন সুপারবাইক ওয়াই২কে 

এই মোটরসাইকেলটি এমটিটি ওয়াই২কে ৪২০-আরআর-এর পূর্ববর্তী সংস্করণ। যেখানে, রোলস রয়েস অ্যালিসন ২৫০-সি২০ ইঞ্জিনটির পরিবর্তে এখানে রোলস রয়েস অ্যালিসন ২৫০-সি১৮ টার্বোশ্যাফট ইঞ্জিনটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু তবুও এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের তালিকায় স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। কারণ এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৫০ মাইল বা ৪০২ কিলোমিটার।

এতে রয়েছে ২-স্পিড সেমি-অটোমেটিক ট্রান্সমিশন। এই মোটরসাইকেলটি মাত্র ২ দশমিক ৫ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ঘণ্টায় ৬০ মাইল পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। আর এতে রয়েছে ৩২০ অশ্বশক্তির ক্ষমতা। ২০০৪ সালে এটি প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

কাওয়াসাকি নিনজা এইচ২আর

এই মোটরসাইকেলের ৪ স্ট্রোক লিকুইড কুলড, ইন-লাইন ফোর, ডিওএইচসি, ১৬-ভালভের ৯৯৮সিসি ইঞ্জিন একে শুধু দ্রুত না দুর্দান্ত রকম দ্রুত করে তুলেছে। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪৯ মাইল বা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলতে সক্ষম। 

এতে রয়েছে কেটিআরসি বা কাওয়াসাকি ট্র্যাকশন কন্ট্রোল, কেআইবিএস বা কাওয়াসাকি ইন্টেলিজেন্ট অ্যান্টি-লক ব্রেক সিস্টেম, কেইবিসি বা কাওয়াসাকি ইঞ্জিন ব্রেক কন্ট্রোল এবং কেএলসিএম বা কাওয়াসাকি লঞ্চ কন্ট্রোল মোড। এগুলো সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি মোটরসাইকেলটিকে মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করে। কাওয়াসাকি নিনজা এইচ২আর মাত্র ২ দশমিক ৫ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ঘণ্টায় ৬০ মাইল পর্যন্ত গতি তুলতে সক্ষম। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫৬ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

দ্য লাইটেনিং এলএস-২১৮

আমেরিকার লাইটেনিং মোটরসাইকেল কোম্পানির নকশা করা দ্য লাইটেনিং এলএস-২১৮ হলো একটি বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল। যা ২০১৪ সাল থেকে আমেরিকায় উৎপাদিত হয়ে আসছে। বাইকটি রাস্তায় চলার জন্য অনুমোদন পেয়েছে। মোটরসাইকেলটি ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বের দ্রুততম বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের খেতাব ধরে রেখেছে। যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৮ মাইল বা ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। 

এতে রয়েছে ২০০ অশ্বশক্তির ক্ষমতা। আর যেহেতু এটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক, তাই পরিবেশকে দূষিত না করেই এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে। ভিন্ন ভিন্ন ধরন অনুসারে এর বাজারমূল্য প্রায় ৩৯ হাজার মার্কিন ডলার থেকে ৪৭ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ডুকাটি ১১৯৯ প্যানিগেল আর

১১৯৯ প্যানিগেল আর ডুকাটির সবচেয়ে দ্রুততম মোটরসাইকেল। যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০২ মাইল বা ৩২৫ কিলোমিটার।

মোটরসাইকেলটি, বিশেষ করে এর ড্রাইভিং ডাইনামিকস, শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য বেশ প্রশংসিত। ১১৯৯ প্যানিগেল-এ রয়েছে একটি লিকুইড কুলড, এল-টুইন ইঞ্জিন। যা ডুকাটির দাবি অনুসারে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টুইন-সিলিন্ডার প্রোডাকশন ইঞ্জিন। 

মোটরসাইকেলটিকে একটি অ্যালুমিনিয়াম মনোকোক ফ্রেমের চারপাশে তৈরি করা হয়েছে। যার সামনে রয়েছে একটি সেমি ফ্লোটিং ৩৩০ মিলিমিটার ব্রেম্বো ডিস্ক এবং পিছনে একটি ২৪৫ মিলিমিটার ডিস্ক। মোটরসাইকেলটি মারজোকির লাইটওয়েট অ্যালুমিনিয়াম ফ্রন্ট ফর্ক এবং স্যাখস-এর রিয়ার সাসপেনশন ইউনিট দিয়ে সজ্জিত। এর বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।

ড্যামন হাইপারস্পোর্ট প্রো

ড্যামন হাইপারস্পোর্ট প্রো হলো একটি বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল। যা একটি স্পোর্টবাইক এবং স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেলের সংমিশ্রণ। এতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত বাজারে সবচেয়ে উন্নত। সব মিলিয়ে এটি উচ্চ-পারফরম্যান্সের একটি সার্বিক প্যাকেজ। যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০০ মাইল বা ৩২২ কিলোমিটার। 

হাইপারস্পোর্টে দুটি আলাদা রাইডিং পজিশন রয়েছে। যেগুলো বৈদ্যুতিকভাবে সামঞ্জস্য করা যায়। একটি বোতামের স্পর্শেই এই মোটরসাইকেলের বসার সিট, ফুটপেগস, উইন্ডস্ক্রিন এবং হ্যান্ডেলবারগুলো সুপারবাইকের রাইডিং পজিশন থেকে সোজা স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেলের রাইডিং পজিশনে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে।

ড্যামনে রয়েছে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার নাম কো-পাইলট। যা হ্যান্ডেলবারে দুটি ক্যামেরা এবং হ্যাপটিক ফিডব্যাক ব্যবহার করে এর চালককে আশেপাশের ট্র্যাফিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে। শুধু উন্নত প্রযুক্তিই নয়, পাশাপাশি এর পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত। কারণ আমরা দেখেছি, এর গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০০ মাইল বা ৩২২ কিলোমিটার। যা এর অত্যন্ত শক্তিশালী ২০০ অশ্বশক্তির ইঞ্জিন থেকে আসে। মোটরসাইকেলটির বাজারমূল্য প্রায় ২৫ হাজার মার্কিন ডলার।

ডুকাটি প্যানিগেল ভি৪ আর

ডুকাটি প্যানিগেল ভি৪ আর অনেকটাই একটি রেসিং প্রোটোটাইপ মোটরসাইকেলের মতো। ইতালীয় শৈলী এবং পারফরম্যান্সের মিশ্রণ একে একটি অতি শক্তিশালী মোটরসাইকেলে পরিণত করেছে। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৯৯ মাইল বা ৩২০ কিলোমিটার। 

প্যানিগেল ভি৪ আর-এর এই দুর্দান্ত গতির পেছনে রয়েছে এর ডেসমসডিসি স্ট্রাডেল আর ইঞ্জিন। ৯৯৮ সিসি এর এই ইঞ্জিনটি ২২১ অশ্বশক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম। এর বাজারমূল্য প্রায় ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার। 

 

তথ্যসূত্র: কারলোগোস, লাক্স ডিজিটাল, রয়টার্স

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago