নির্বাচন কমিশন: আস্থাহীনতার ১ বছর

জাতীয় বাজেট ২৩-২৪
ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১ বছর আগে গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা উন্মোচনের সময় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন গত আগস্টে ঘোষণা করে যে জাতীয় নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।

যদিও গত জানুয়ারিতে ১৫০টি নির্বাচনী এলাকায় ব্যবহার করার জন্য ২ লাখ ইভিএম কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে সরকার।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'গত ২টি সাধারণ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। এর ফলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'বর্তমান নির্বাচন কমিশন এমন কিছু করতে পারেনি, যা মানুষের সেই ধারণা পরিবর্তন করবে। তাদের প্রথম বছরে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।'

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। ফলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনগুলো।

বর্তমান কমিশন ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে।

এর পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান নির্বাচনে অংশ নেওয়ার।

যদিও বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা বেশ কয়েকবার বলেছেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা তাদের কাজ নয়।

গঠনের পর থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রণয়ন ও ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ এড়িয়ে গেছে বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। যে প্রক্রিয়ায় এই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, আমরা সেই প্রক্রিয়ার অংশ ছিলাম না, তাদের স্বীকৃতি দেইনি এবং এই কমিশনের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেইনি। আমরা অবস্থান পরিবর্তন করিনি এবং এই কারণে আমরা সংলাপেও যোগ দেইনি।'

তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।'

গত মে মাসে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান মাদারীপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, কেউ ইভিএমের ত্রুটি খুঁজে বের করতে পারলে পাবে তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাকে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেবেন।

এর কয়েকদিন পর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এ ধরনের কোনো পুরস্কারের কথা অস্বীকার করেন।

গত অক্টোবরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের মধ্যে একটি বৈঠকে আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, অনেক কর্মকর্তা পক্ষপাতদুষ্ট এবং তারা সরকারি তহবিল সঠিকভাবে ব্যয় করেন না। এই অভিযোগ তোলার পর সেখানে হট্টগোল শুরু করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা।

যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেন, 'যেসব বিতর্কের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো বড় কথা নয়। কিছু ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।'

অনিয়মের অসংখ্য প্রতিবেদনের মধ্যে গত অক্টোবরে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করার পরে নির্বাচন কমিশন অনেকের প্রশংসা অর্জন করেছে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলেন, 'কুমিল্লা সিটি নির্বাচন যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তাও প্রশংসনীয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ৬টি উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল।'

একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে গতকাল রোববার আবারও আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago