গাজীপুরে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে সুজনের নাগরিক সংলাপ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে নাগরিক সংলাপ। ছবি: স্টার

আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের 'এক টেবিল'-এ নাগরিক সংলাপের আয়োজন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বুধবার দুপুরে গাজীপুর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ওই সংলাপে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ্ খান, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহানূর ইসলাম রনি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ্-আল মামুন মন্ডল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আতাউর রহমানসহ ৭ মেয়র প্রার্থী অংশ নেন। এতে পেশাজীবী ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

তবে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়দা খাতুন সংলাপে অংশ নেননি।

সুজনের সংলাপে যোগ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য করার জন্য তাগিদ দেন। অন্য দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিটি করপোরেশনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জবাবদিহির কথা বলেন। সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠিত করতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আহবান জানায় সুজনের কেন্দ্রীয় নেতারা। এক টেবিলে বসে নগরীর বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের কথা শোনেন মেয়র প্রার্থীরা। প্রার্থীরা পরে গাজীপুরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ্ খান বলেন, সিটি করপোরেশনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে চাই। অর্গানোগ্রাম ও সার্ভিস রোল ছাড়া সিটি করপোরেশন চলছে। আমি নির্বাচিত হলে ৬ মাসের মধ্যে একটি অর্গানোগ্রাম এবং একটি সার্ভিস রোল তৈরি করা হবে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র'র সহ-সভাপতি জিয়াউল কবির বলেন, শ্রমিকরাই সিটির বৃহৎ অংশ। পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ও নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, টঙ্গী সাংগঠনিক শাখার সভাপতি আনোয়ারা বেগম নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, হয়রানি বন্ধ এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা দেখতে চান।

গাজীপুর বিএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আকাশ বলেন, যারা ভোট গ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন তাদেরকে যেন অনৈতিক কাজে বাধ্য করা না হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বা কোনো অদৃশ্য চাপে যেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনৈতিকভাবে পালনের জন্য বাধ্য করা না হয়।

ইমামরা যেন সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ার জন্য মসজিদে আলোচনা করতে পারেন সেই নিশ্চয়তা চান গাজীপুর ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর।

গাজীপুর বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের এ নগরীর হাসপাতালের বর্জ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ফেলা হয়। মেডিকেল বর্জ্য গাজীপুরেই যেন অপসারণ করতে পারি সে ব্যবস্থা করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান নগরবাসীকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিগত সিটি নির্বাচনের মতো ভোট কারচুপির নির্বাচন আর দেখতে চান না তারা। আগে সুষ্ঠু নির্বাচন, পরে উন্নয়নের বিষয়। সুষ্ঠু ভোট করতে তিনি সুজন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি সহযোগিতার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সরকার বৈষম্য করেছে। এ সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়রকে তার দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। তাকে নির্যাতন করে জেলে আবদ্ধ রাখা হয়। দ্বিতীয় মেয়রকেও দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। তাই আমি মনে করি গাজীপুর একটি সুন্দর এবং পরিবেশ বান্ধব শহর হোক এটা সরকার চায় না। কেনা চায় না সেটা আমি জানি না। গাজীপুর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ফুসফুস। গাজীপুরে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়নি। মন্ত্রী-এমপিরা রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা ব্যবহার করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা ভালো লক্ষণ না।

গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি গত ৫ বছর আগে মেয়র প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছি। ঘোষণার পর থকে নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ হাজারের বেশি সমস্যা খুঁজে পেয়েছি।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল বলেন, এ নগরে শিল্প-কলকারখানা এবং শ্রমিকের ঘাম থেকে সর্বোচ্চ আয় আসে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় একটি অংশ আসে গাজীপুর থেকে। গাজীপুরের সমৃদ্ধ যে অর্থনীতি এটাও এখানকার শ্রমিকের ঘাম জড়ানো অর্থ থেকে। সরকারের কাছে বিশেষ আবেদন থাকবে এখান থেকে রাষ্ট্রের যে আয় হয়, তার একটা অংশ যেন উন্নয়নের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, নদী দূষণ সর্বোপরি দূষণমুক্ত নগরী গড়ে তুলতে হলে এই ইচ্ছাটা মনে লালন করতে হবে। আগে সিটির উন্নয়ন করতে হবে। পরে পর্যায়ক্রমে সকল পেশাজীবী ও নগরবাসীর উন্নয়ন করা হবে। সিটি করপোরেশনে একটি অবাধ তথ্য সেন্টার থাকতে হবে যেন প্রতিদিন কী কাজ হচ্ছে এবং দুর্নীতি হলেই সেখানে থেকে যেন গণমাধ্যম কর্মীরা স্বাধীনভাবে তথ্য নিয়ে তা প্রকাশ করে নগরবাসীকে জানাতে পারবে। তিনি আরও বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতি ও মুসলমান সকল মানুষের জন্য ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শান্তির নগরী গড়ে তোলাই আমার মূল লক্ষ্য। আমি বিজয়ী হলে সকল প্রার্থীর সহযোগিতা নিয়ে সিটিকে আধুনিক ও স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।

সুজনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ভোট চুরি করে নির্বাচিত হওয়া যায়, তবে মানসিক তৃপ্তি আসে না। জনগণকে দেখলে মুখ লুকায় ওইসব প্রার্থী। তাই সুষ্ঠু ভোটের জন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আহ্বান জানান সুজনের এই কেন্দ্রীয় নেতা।

Comments

The Daily Star  | English

Martyred Intellectuals’ Day: No list of martyred intellectuals for now

The Ministry of Liberation War Affairs has put on hold its initiative to prepare a comprehensive list of martyred intellectuals, who were brutally killed by Pakistani military forces with the help of local collaborators in 1971, creating uncertainty over the completion of such a list.

12h ago