শুধু জাপান কেন আমরা তো চিঠি দিয়েছি বহু দেশকে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে মানুষের ওপরে যে অন্যায় অত্যাচার করছে, দুর্নীতি-লুটপাটের মধ্য দিয়ে মানুষের পকেট কেটে দেশকে ধ্বংস করছে, তারা রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করছে, গুম করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে প্রতিমুহূর্তে প্রতিনিয়ত- এই বিষয়গুলো আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি।'
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি একথা বলেন।
সংসদে সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'শুধু জাপানকে কেন আমরা তো চিঠি দিয়েছি বহু দেশকে। এটা সত্য।'
তিনি বলেন, 'তারা সমানে মিথ্যাচার করছেন, সংসদে মিথ্যাচার করছেন, বিদেশিদের সামনে মিথ্যাচার করছেন- সবসময় বলছেন যে, এখানে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি। বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে সেটার নজির খুব আছে। আমরা নিজেরাই তো এদেশে জানতাম না এনফোর্স ডিজএ্যাপিয়ারেন্স কাকে বলে? গুম করা কাকে বলে? আমরা এখানে জানতাম না। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এটা জানতে পারছি।'
উপনির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি
সংবাদ সম্মেলনে উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিল না বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, 'গতকাল তথাকথিত নির্বাচন কমিশন যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠান করল- সেটা হচ্ছে উপনির্বাচন। এই উপনির্বাচনগুলোতে ভোটারের সংখ্যা কোথাও তাদের (ইসি) হিসাব মতে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি হয় নাই।'
'আর আমাদের (বিএনপি) হিসাব মতে- এটা ৫ শতাংশের বেশি হয় নাই। আজকে পত্র-পত্রিকাগুলোতে যে ছবিগুলো আসছে দেখবেন, অনলাইনে দেখেছি... কুকুর শুয়ে আছে মানুষ নাই। তারা (সরকার) এই অবস্থায় নিয়ে চলে গেছে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে।'
বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচন হয়। গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে এই আসনগুলো শূন্য হয়।
'লুট-দুর্নীতির বিস্তার'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'যেখানে দুর্নীতি লাগামহীন, যেখানে চুরি হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য, সেখানে আপনার বিশ্বমন্দার কথা বলে কোনো লাভ নেই। বিশ্বমন্দার পরে আপনারা মানুষের জীবনকে দুঃসহ করে তুলছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রত্যেকটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।'
'চালের দাম আপনারা বাড়াচ্ছেন, লবণের দাম, তেলের দাম আপনারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। আজকে বিদ্যুতের দাম ২ বার, ৩ বার, ৪ বার, ৫ বার… ১৫ বার বাড়িয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুতে যে চুরি আপনারা করছেন সেই চুরি বন্ধ করলে তো বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয় না। গ্যাসে যে চুরি আপনারা করছেন সেটা বন্ধ করলেও দাম বৃদ্ধি করতে হয় না।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখন নতুন করে রাস্তা খোঁড়া শুরু হয়েছে। এই যে চলমান প্রক্রিয়া লুটের এই তো চলছে। এভাবে লুট করে তারা বিদেশে পাচার করছে এবং দেশের প্রতি জনগণের প্রতি যেহেতু কোনো দায়বদ্ধতা নেই সেজন্য তারা আজকে লাগামহীনভাবে দুর্নীতি করে চলেছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা সরকারের এহেন অপকর্মের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালামসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সরকারের দমনপীড়ন, বিদ্যুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সদরে সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
Comments