৬ মাসে ৩৯ ট্রান্সফরমার চুরি, বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কায় কাপাসিয়ার কৃষক

কাপাসিয়ায় ট্রান্সফরমার চুরি
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় গত ৬ মাসে অন্তত ৩৯ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় গত ৬ মাসে অন্তত ৩৯টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারসহ তার ও বেশ কয়েকটি পানির পাম্প চুরি হয়েছে। এতে বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।

স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাসে কাপাসিয়া সদর এলাকা থেকে ১১ ও আমরাইদ সাব জোন থেকে ২৮ ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। থানাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযোগ করা হলেও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।

এ কারণে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নতুন করে ট্রান্সফরমার স্থাপন করে সেগুলো শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ, বেলাশী, আমরাইদ, লোহাদী, বিবাদিয়া ও তরগাঁওসহ কয়েকটি গ্রামে রাতের অন্ধকারে শতাধিক গ্রাহকের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুতের তার চুরি হয়েছে।

উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়িবাড়ি গ্রামের আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১ মাস আগে বাড়ির পাশ থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকদের নিজ খরচে ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে বলেছে। বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করলেও আমার মতো অনেকের ট্রান্সফরমার কেনার টাকা নেই।'

উপজেলার আমারাইদ গ্রামের তাজলিম বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বসতভিটার সামনে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছিল। ২১ হাজার টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনেছি।'

সামিট গ্রুপের সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার পারভেজ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোহাদী এলাকা থেকে ৬ ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। মোবাইল অপারেটরের টাওয়ারে বসানো ট্রান্সফরমারও চুরি হচ্ছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।'

বেলাশী গ্রামের বাসিন্দা কামরুল মাসুদ বিপ্লব, হাবিবুর রহমান পণ্ডিত, শরীফ হোসেন, আবুল হোসেন ও আব্দুল বাতেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে ট্রান্সফরমারের তার চুরি হয়েছে।

তারা জানান, চুরি যাওয়া বেশির ভাগ ট্রান্সফরমারের ঢাকনা খুলে ভেতরের তার নিয়ে গেছে। চুরি ঠেকানো বন্ধে নিজেরাই ট্রান্সফরমারের মুখ ঝালাই করে আটকে দিয়েছেন। এতে ঝুঁকি থাকলেও চুরি ঠেকাতে আপাতত এটাই বিকল্প।

লোহাদী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফরোজা সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুলের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমারের কেবল খোলসটা ছিল, ভেতরের সব তার নিয়ে গেছে।'

তিনি জানান, আমরাইদ মিন্টু সিকদারের বাড়ির পাশে ট্রান্সফরমার, ভুলেশ্বর গ্রামের আল আমীনের সেচ পাম্প, বামনখলা গ্রামের শরীফ সিকদারের সেচ পাম্প চুরি হয়েছে।

এ ছাড়া, আমারাইদ মোল্লা ফিলিং স্টেশন থেকে জেনারেটরের ব্যাটারি চুরি হয়েছে, যোগ করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের বিদ্যুতের খুঁটি বেয়ে উঠার ক্ষমতা নেই। প্রশিক্ষিত লোক ছাড়া কেউ ঝুঁকিপূর্ণ এসব খুঁটি বেয়ে উঠতে পারবে না বা সাহস করবে না। একটি ট্রান্সফরমার চুরি হলে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের চাঁদা তুলে নতুন ট্রান্সফরমার বসাতে হয়। অনেকে চুরি ঠেকাতে চাঁদা তুলে ওয়ার্কশপের কারিগর দিয়ে ট্রান্সফরমারের মুখ ঝালাই করে দিচ্ছেন।

কাপাসিয়ার সিনিয়র ইলেকট্রিশিয়ান তৈয়ুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, কয়েকদিন আগে বড়পুশিয়া গ্রাম থেকে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ওই ঘটনায় এলাকাবাসীর হাতে ৫ চোর ধরা পড়েছে। তারা আশপাশের এলাকায় ভাঙা জিনিসপত্র কেনাবেচা করেন।

সনমানিয়া এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তারা।

লাইনম্যান বাচ্চু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।'

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহীন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চুরি বন্ধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা গ্রাহকদের সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করছি। তা ছাড়া গ্রাহকেরা দলবদ্ধভাবে পাহারা দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।'

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চুরির ঘটনায় প্রথমবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৫০ শতাংশ দামে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে। দ্বিতীয়বার ঘটনা ঘটলে গ্রাহককে পুরো টাকা দিতে হয়।'

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রুহুল আমীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাপাসিয়া সদর এলাকায় ১১ ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। চুরি রোধে গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠন করে পাহারা দিতে হবে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও তৎপর হলে চুরি কমতে পারে।'

আমরাইদ সাব-জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অরূপ কুমার রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৬ মাসে এই জোনে ২৮ ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা সমস্যায় আছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এসপি, ডিসি, ইউএনও ও থানায় অভিযোগ করেছি।'

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'থানা-পুলিশকে জানিয়েছি। নিজের সম্পদ নিজেকে রক্ষা করতে হবে।'

কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাশেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চুরি ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এলাকাবাসী সচেতন হচ্ছেন। আশা করছি চুরি ঠেকানো সম্ভব।'

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago