‘জেলে লিখে রেখেছিলাম ২০২১-এ কীভাবে দেশকে উন্নত করবো’

শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, '২০০৭-এ যখন জেলে ছিলাম, তখন ওখানে লিখে রেখেছিলাম ২০২১ সালে কী কী করবো। ২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত করবো।'

আজ রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। ২০০৭-এ যখন জেলে ছিলাম, তখন ওখানে লিখে রেখেছিলাম ২০২১ সালে কী কী করবো। ২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত করবো। ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে সেটাকে সংযুক্ত করে আরও উন্নত মানের করে সেই টার্গেট অর্জন করেছি। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সাল। ৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু মুখে বলা না, যেমন স্যাটেলাইন-১ উৎক্ষেপন করেছি। দ্বিতীয়টি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রত্যেকেই ডিজিটাল ডিভাইসে দক্ষণ হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনোমি, স্মার্ট বিজনেস, স্মার্ট হেলথ, স্মার্ট এডুকেশন। আমাদের গভর্ন্যান্স হবে স্মার্ট গভর্ন্যান্স। এভাবেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমরা গড়বো।'

বৈশ্বিক মন্দার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বিদেশে আমাদের সব দূতাবাসে বলে দিয়েছি এখনকার ডিপ্লোম্যাসি পলিটিক্যাল না ইকোনোমিক ডিপ্লোম্যাসি হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটা দূতাবাস ব্যবসা-বাণিজ্য রপ্তানি কোন দেশে কীসের চাহিদা বেশি, কী আমরা রপ্তানি করতে পারি বা কোথায় থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। কিছু পণ্যের ওপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটা বহুমুখী করার কথা। আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। বহুমুখী করা এবং আমরা যত বেশি বাজার পাব তত বেশি আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারবো। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী—এ কথা আদিকাল থেকে শুনে আসছি। সেটাই আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের কর্ম ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা আমাদের প্রায় প্রত্যেকটা মিশনে বাণিজ্যিক উইং খুলে দিয়েছি, যাতে করে আমাদের বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।'

'আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা ৫জি চালু করবো। এটা সব জায়গায় দরকার নেই, এটা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। সেবা খাতে বিশেষ করে আইটি ও আইটি এনাবল সার্ভিসের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গত অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি আয় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে সড়ক-নৌ-রেল ও বিমান পথের উন্নয়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পদ্মা সেতু নির্মাণে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি জনগণের ভাগ্য গড়তে। নইলে বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে, সেই শোকব্যথা বুকে নিয়ে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করে মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, সেটা হলো বাস্তবতা। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, এখন আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের সব মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।'

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে। তার বাইরে করলে কোনো ধরনের সেবা পাবেন না।

তিনি বলেন, যেহেতু সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্য মন্দা এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ আছে। আপনারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলেন। তাতে আমাদের দেশীয় উৎপাদকরা যেমন লাভবান হবে, কর্মসংস্থান হবে, পাশাপাশি রপ্তানির জন্য নতুন পণ্য হবে।

এ সময় দেশবাসীকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস যদি নিরবচ্ছিন্ন চান সেগুলো ক্রয় বা উৎপাদন করতে যে খরচ সে খরচ তো দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে। ভর্তুকি তো জনগণের টাকায় এত বেশি দেওয়াও যায় না। কাজেই ব্যবসায়ীদের এদিকে নজর দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

US fund crunch hits development projects in Bangladesh

Thousands of Bangladeshi development professionals face uncertainty as US government-funded projects have been halted following an executive order by the Trump administration on January 20.

10h ago