কার্ড ও ইয়োগার্ট: কী পার্থক্য, কী উপকার

দইয়ের ইংরেজি হিসেবে আমরা কার্ড ও ইয়োগার্ট দুটো শব্দেরই প্রচলন দেখি। আপাতদৃষ্টিতে এক মনে হলেও এই দুই ধরনের দইয়ে পার্থক্য আছে।
কার্ড ও ইয়োগার্ট। ছবি: সংগৃহীত

দইয়ের ইংরেজি হিসেবে আমরা কার্ড ও ইয়োগার্ট দুটো শব্দেরই প্রচলন দেখি। আপাতদৃষ্টিতে এক মনে হলেও এই দুই ধরনের দইয়ে পার্থক্য আছে।

অনেকক্ষেত্রে দেখতে একইরকম, স্বাদও থাকে অনেকটা কাছাকাছি। তবে দুটির প্রস্তুত প্রণালিসহ আরও কিছুক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে।

অনেকে মনে করেন, ইয়োগার্ট বোধহয় পাশ্চাত্যে প্রচলিত নাম। তবে সেটি সঠিক নয়।

এ দুই ধরনের দইয়ের প্রস্তুত প্রণালি দেখে নেওয়া যাক।

প্রস্তুত প্রণালির পার্থক্য

কার্ড ও ইয়োগার্টে স্বাদে অনেকেই পার্থক্য করতে না পারলেও তাদের প্রস্তুতির ধরন কিন্তু বেশ খানিকটা ভিন্ন।

কার্ড তৈরি করা হয় এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুধ জমাট বাধিয়ে, যাকে বলে কোয়াগুলেশন। তার সঙ্গে যোগ করা হয় এসিড বা অম্লীয় উপাদান, যেমন- লেবুর রস ও ভিনেগার।

ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক এসিড দুধে থাকা এসিডগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে দুধকে জমাট বাধতে সাহায্য করে। এর ফলে শক্ত ও জমাট আকারে দই তৈরি হয়ে যায়৷ কার্ড ভারতে 'দহি' এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে 'দই' হিসেবে পরিচিত।

কার্ড প্রস্তুত করা হয় ল্যাকটিক এসিড (দুধে উপস্থিত অম্ল) ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে দুধকে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। দুধে বিদ্যমান ক্যাসেইন নামের গ্লোবিউলার প্রোটিনের সঙ্গে এই ব্যাকটেরিয়ার বিক্রিয়া ঘটে। বিক্রিয়ার সময় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা শক্তি উৎপন্ন হয়৷

শক্তি উৎপন্ন হবার সঙ্গে সঙ্গে বাই-প্রোডাক্ট বা উপজাত হিসেবে ল্যাকটিক অ্যাসিডও তৈরি হতে থাকে। ল্যাকটিক অ্যাসিড গ্লোবিউলার প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তাদের সক্রিয়তা নষ্ট করে, ফলে তৈরি হয় ঘন, জমাট এক গঠন যা আমাদের কাছে দই বা কার্ড বলে পরিচিত।

কার্ড। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, ইয়োগার্ট তৈরি করা হয় ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে দুধের ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন ঘটিয়ে। এক্ষেত্রে দইয়ের ব্যাকটেরিয়া হিসেবে ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগেরিকাস ও স্ট্রেপটোকক্কাস থারমোফিলাসের মতো ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়।

এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ব্যবহার করে বাড়িতে দই তৈরি অসম্ভব। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো দুধে থাকা শর্করা (ল্যাকটোজ) বা চিনির সঙ্গে বিক্রিয়া করে।

এর ফলে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয়। এই এসিড এরপর দুধের প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ও ইয়োগার্ট প্রস্তুত হয়।

দুধের ধরনের উপর নির্ভর করে ইয়োগার্টের স্বাদে বা রঙে তারতম্য ঘটতে পারে। ইয়োগার্ট সাধারণত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়। এটিকে কৃত্রিমভাবে সুমিষ্ট করা হয় ও স্বাদে বৈচিত্র‍্য রাখা হয়।

কার্ড সাধারণত ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি ও কৃত্রিম স্বাদ মুক্ত।

ল্যাকটোজের পরিমাণ

কার্ডে ল্যাকটোজ (দুধে থাকা শর্করা) এর পরিমাণ ইয়োগার্টের চেয়ে বেশি থাকে। তবে তরল দুধের তুলনায় কার্ডেও ল্যাকটোজের পরিমাণ কম থাকে। কাজেই, যারা 'ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট' (শরীরে ল্যাকটেজ এনজাইমের অভাব থাকায় দুধ হজমে সমস্যা হয়) তাদের জন্য ইয়োগার্ট তুলনামূলক সুবিধাজনক হতে পারে।

ইয়োগার্ট। ছবি: সংগৃহীত

পুষ্টি উপাদান

কার্ড ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি ৬ এ সমৃদ্ধ। আবার, ইয়োগার্ট ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন বি ১২ এর চমৎকার উৎস।

কার্ড মস্তিষ্কের ক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে ও হজমশক্তি বাড়ায়। ইয়োগার্ট এলডিএল বা লো ডেনসিটি কোলেস্টেরল কমায় ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।

স্বাদ

কার্ড সাধারণত কোনো কৃত্রিম ফ্লেভার যুক্ত না করে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত বাড়িতে তৈরি সাদা দইয়ের সাথে চিনি বা মিছরি মিশিয়ে অনেকে খান। সাদা এই দইয়ের স্বাদ হয় টক ধরনের ও অম্লীয়ভাব থাকে। এর ব্যবহার আছে বিভিন্ন রকম রান্নায়, উৎসবে-আয়োজনে ও খাবার খাওয়ার পর শেষপাতে।

এদিকে, ইয়োগার্টের আছে বিভিন্ন রকমের ফ্লেভার। ইয়োগার্টে স্ট্রবেরি, আম, ব্লু বেরির ফ্লেভারও যোগ করা যায়। এর স্বাদ কার্ডের মতো অতটা টক বা অম্লীয় হয়না।

কোনটা বেশি ভালো

ইয়োগার্ট ও কার্ড- দুটোই স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী ও এদের পুষ্টিগুণও যথেষ্ট।

ইয়োগার্ট প্রোটিন, পটাশিয়াম, মলিবডেনাম, প্যানটোথেনিক এসিড বা ভিটামিন বি ৫ এর খুব ভালো উৎস। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকায় এটি ওজন কমাতে সহায়ক। পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ হওয়ায় যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্যও এটি বেশ সহায়ক।

অন্যদিকে ইয়োগার্টে থাকা প্রোবায়োটিকসমূহ অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষার পক্ষে ভালো।

কার্ড হজমে বেশ সহায়ক। ফলে যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে খুবই সেরা খাবার। আমাদের ডায়জেস্টিভ সিস্টেম (হজম সম্বন্ধীয় সার্বিক দৈহিক ব্যবস্থা) খুব সহজেই কার্ডে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো শোষণ করে নিতে পারে।

কার্ডে থাকা উপকারি ব্যাকটেরিয়াগুলো দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সংহত করে।

এটি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভালো উৎস, যা হাড়ের গঠন ও রক্ষার জন্য ভালো।

কার্ড দৈহিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক, কেননা এর ব্যবহার ত্বক ও চুলকে করে মসৃন ও মজবুত।

কাজেই দুগ্ধজাত দুটি উপাদানই (কার্ড ও ইয়োগার্ট) পুষ্টিকর। উভয়ই প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি (৫, ৬, ১২), ভিটামিন ডি ও প্রোবায়োটিকস (হজমক্রিয়ার ক্ষেত্রে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়ক ব্যাকটেরিয়া) এর চমৎকার উৎস।

 

তথ্যসূত্র:
www.jagranjosh.com
www.milkymist.com
www.recipies.timesofindia.indiatimes.com

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

6h ago