ছাপচিত্রের ক্যানভাসে ৩ নগরের ‘শহরনামা’

ছবি: স্টার

নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশ তার 'শহর' শিরোনামের কবিতায় নিজ হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, 'হৃদয়, অনেক বড়ো-বড়ো শহর দেখেছো তুমি; সেই সব শহরের ইটপাথর,/কথা, কাজ, আশা, নিরাশার ভয়াবহ হৃত চক্ষু/আমার মনের বিস্বাদের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।'

আবার মনের খোঁজে মনে মনে অনেক অচিন শহর পরিভ্রমণের কথা উঠে এসেছে ফকির লালন সাঁইয়ের গানেও। লালন বলেন, 'মন এসে মন হরণ করে/লোকে ঘুম বলে তারে/কত আনকা নহর, আনকা শহর/ভ্রমিয়ে দেখায় তৎক্ষণা।'

এভাবে বণিক ও বুর্জোয়া সভ্যতার জঠরে জন্ম নেওয়া নগর ও এর নাগরিকদের যাপিত জীবনের বহু উপাদান উপজীব্য হয়েছে লেখক-কবিদের রচনায়। শিল্পীর নিমগ্ন তুলিতেও ফুটে উঠেছে নগরজীবনের এমন নানা রঙিন-বেরঙিন মুহূর্ত।

ছবি: স্টার

একই পরম্পরায় এসব শহুরে সৌন্দর্য ও বিপন্নতায় তাড়িত চিত্রশিল্পী মোয়াজ্জেম হোসেন জনি এশিয়া মহাদেশের ৩ ত্রিকালদর্শী নগর- বাংলাদেশের ঢাকা, ভারতের কলকাতা ও চীনের হাংচৌ শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলেছেন ছাপচিত্রের ক্যানভাসে।

জনির আঁকা এমন ৪১টি ছাপচিত্র নিয়ে ঢাকার সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে চলছে তার প্রথম একক প্রদর্শনী 'শহরনামা'। প্রদর্শনীতে জায়গা পাওয়া ছাপচিত্রগুলোর মূল উপজীব্য নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার অভিঘাত। তাতে যেমন আছে ক্লান্তি ও নৈরাশ্যবোধ, আত্মবিরোধ ও শিকড়হীনতার যন্ত্রণা, তেমনি আছে সংগ্রামী মানুষের গল্প ও বেঁচে থাকার টুকরো টুকরো আনন্দ।

গত রোববার থেকে থেকে শুরু হওয়া ৪ দিনের এই প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন মো. সাজিদুল হক। চলবে বুধবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত আছে প্রদর্শনীটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা জনি পরবর্তীতে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের হাংচৌ শহরের অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে উচ্চতর পড়ালেখা করেন। তার ভাষ্য, প্রদর্শনীতে জায়গা পাওয়া শিল্পকর্মগুলো তৈরি হয়েছে এই ৩ শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতার নিরিখে।

দ্য ডেইলি স্টারকে জনি বলেন, 'অ্যাকাডেমিক কাজ ছাড়াও এই ৩ শহরে যাপিত জীবনের যে বিষয়গুলো আমাকে ভাবিয়েছে তারই চিত্ররূপ এই শিল্পকর্মগুলো। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি এগুলো তৈরি করেছি।'

ছবি: স্টার

রোববার সন্ধ্যায় 'শহরনামা'র উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও প্রিন্টমেকিং বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এতে সভাপতিত্ব করেন একই বিভাগের অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল জনির শিল্পকর্মগুলোকে অভিহিত করেন 'সাধারণ থেকেও অসাধারণ' হিসেবে।

অধ্যাপক আবুল বারক আলভীর মতে, জনির কাজগুলোতে 'নিজস্বতা' আছে।

ছবি: স্টার

এ ব্যাপারে অধ্যাপক নিসার হোসেনের অভিমত, 'যে কোনো কিছুতে নিজস্ব স্টাইল প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কাজ, আবার কঠিনও নয়। মোয়াজ্জেম হোসেন তার কাজের মধ্য দিয়ে একটা স্টাইল গড়েছেন। এই পথে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।'

এছাড়া অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা মনে করেন, শিল্পকর্মে প্রতিভার চেয়েও অনুশীলন বেশি জরুরি। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আমি মোয়াজ্জেম হোসেনের মধ্যে সেই অনুশীলনের চর্চা দেখেছি।'

সেইসঙ্গে শিল্পচর্চাকে অধিকতর কার্যকর করে তুলতে এটিকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার তাগিদও দেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus opens second round of talks to strengthen national unity

'Beautiful July Charter' would be unveiled following discussions, he says

16m ago