বিএনপি অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত: প্রধানমন্ত্রী

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গণভবন থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় স্বাধীনতা এবং উন্নয়ন বিরোধী একটি গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।'

তিনি বলেন, '২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণ বিএনপি-জামাত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।'

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই কথা বলেন তিনি।

স্বাধীনতা ও উন্নয়ন বিরোধীদের অতীত ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তাদের একটা অংশ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন।'

'কিন্তু, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান এদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। পুনর্বাসিত হয়ে তারা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে,' বলেন তিনি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আরেকটি দল যার জন্ম ও লালন-পালন সেনানিবাস থেকে কোনো এক জেনারেলের পকেটে, সেই দলটির হাতে শুধুই রক্তের দাগ। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। উর্দি গায়ে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সশস্ত্র বাহিনীর হাজার হাজার দেশপ্রেমিক সৈনিক ও অফিসারকে হত্যা করেছে।'

তিনি বলেন, 'তাদের প্রত্যক্ষ মদদে হরকাতুল জিহাদ, বাংলা ভাই, জামায়াতুল মোজাহিদিন ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠেছে। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে এবং আমার দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল।'

'আমি বেঁচে গেলেও সেদিন ২২ জন নেতাকর্মী মারা যান। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০টির বেশি স্থানে বোমা হামলা চালায়,' যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, '২০১৩ সালে সারাদেশে বিএনপি-জামাত অগ্নি ও পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যা ২০১৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় তাদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৫০০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৩ হাজার ১৮০ জন দগ্ধ হয়।'

'এ সময় বিএনপি-জামাতের জোট সন্ত্রাসীরা হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে। তাদের হামলায় সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টি লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপির শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থপাচার, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দেবেন?'

'দেশের মানুষের উপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামাত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে। পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

'বিএনপি ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা করে নির্বাচনের চেষ্টা চালায়' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। ৩০০ আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল।'

'২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত না।'

এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনাদেরই বেছে নিতে হবে আপনারা কী চান। উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা নাকি বিএনপি-জামাত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিষহ জীবন।'

সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের বিজয়ের ৫১ বছর পূরণ হলো। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পঁচাত্তরের পর ২৯ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীশক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল।'

'এখনো এদেশে একাত্তরের শকুনি এবং পঁচাত্তরের হায়নাদের বংশধর সক্রিয় আছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ষড়যন্ত্র করে আর তাদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।'

'আসুন, এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেই, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করব,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Armed goons attempt robbery in Keraniganj bank

Locals, law enforcement lock robbers inside as police try to defuse situation

37m ago