‘তোমাদের কথা রবে সাধারণ মানুষের ভিড়ে...’
কুয়াশা ভেদ করে যখন ভোরের প্রথম কিরণ ছটা চারপাশ আলোকিত করে তুলছিল, ঠিকই তখনই জেগে উঠল রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিসৌধ। হাজারও মানুষের ভিড়ের সঙ্গে স্মৃতিস্তম্ভের খোলা জানালাও যেন শ্রদ্ধা জানাচ্ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।
এভাবেই সর্বস্তরের মানুষ আজ বুধবার শ্রদ্ধা নিবেদন করল দেশের সূর্যসম সন্তানদের। গানের সুরের মতো তারা বলে উঠে- 'তোমাদের কথা রবে সাধারণ মানুষের ভিড়ে...'।
বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষ শপথ নেয় বুদ্ধিজীবীদের দেখানো পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার। ধিক্কার জানান তাদের হত্যাকারীদের।
বুকের পাঁজরে থেকে যাওয়া দগদগে ক্ষত নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীকে সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষাবিদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময়৷ সে সঙ্গে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরও দাবি জানান তিনি৷
আসিফ মুনীর বলেন, 'বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাসেগুলোর মাধ্যমে জানানো হয়নি এখনো। জাতি জানতে চায়, সরকার কেন তাদের ফিরিয়ে আনতে পারল না?'
রাজধানীর জিগাতলা থেকে আসা এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লতিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহীদরা চলে গেছেন। কিন্তু কর্মের মাধ্যমে তাদের আদর্শ আজও আমাদের কাছে দৃশ্যমান। সে আদর্শেই আমাদের পথ চলতে হবে।'
শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল আগামী প্রজন্মও। তবে দেশের ইতিহাসের এই কালো অধ্যায় কতটুকুইবা জানে তারা?
মোহাম্মদপুর বছিলা বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী প্রাপ্তি জানায়, আমরা বইয়ের পাতায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে পড়েছি। তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। বড় হয়ে আমিও ডা. আলিম চৌধুরীর মতো চিকিৎসক হয়ে দেশের সেবা করতে চাই।
৫১ বছর পেরিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করার মিছিলে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলে শোনা যায় একই কথা- 'সত্যিকারের স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিটি নাগরিকের আত্মনিয়োগের মাধ্যমেই কেবল শোধ হতে পারে শহীদদের ঋণ।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ, ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর ইত্যাদি।
এর পাশাপাশি শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকরাও এসেছিলেন রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।
এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। 'স্মৃতিতে রায়েরবাজার বধ্যভূমি' শীর্ষক এ অবস্থান কর্মসূচিতে খেলাঘরের সদস্যরা সাদা কাপড় পরে চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান নেয়।
এ ছাড়া একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বধ্যভূমিতে যেভাবে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল, অভিনয়ের মাধ্যমে সেই প্রতীকী দৃশ্য রচনা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন খেলাঘরের সদস্যরা।
শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ছিল যন্ত্রসঙ্গীত, গান, কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানে।
Comments