সি-হর্স রক্ষায় কাজ করছে পর্তুগাল

সি-হর্স রক্ষায় কাজ করছে পর্তুগাল
সি-হর্স। ছবি: ডয়চে ভেলে

হাজার বছর ধরে সমুদ্রের প্রাণী হিসেবে সি-হর্স মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে এসেছে। অনেক সংস্কৃতিতে সি-হর্স পৌরাণিক প্রাণী হিসেবে পরিচিত। পর্তুগালের দক্ষিণে এই প্রাণীর বাসভূমি বাঁচাতে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন একদল বিজ্ঞানী।

দেশটির দক্ষিণে ফারোয় সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্রের জীববিজ্ঞানী হিসেবে শর্শ পালমারও এই প্রাণীটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি সে বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। শর্শ বলেন, 'এই প্রাণী আমাকে সত্যি মুগ্ধ করে। এগুলো এত ভিন্ন, এত ইন্টারেস্টিং, এত সংবেদনশীল! নিজেদের পরিবেশের যোগ্য প্রতিনিধি৷ এই প্রাণী সম্পর্কে গবেষণা করতে আমি খুব ভালবাসি৷'

গবেষণাকেন্দ্রটি রিয়া ফর্মোসা নামের উপহ্রদের সংরক্ষিত এলাকার মাঝে অবস্থিত। সেখানে নানা জাতের সি-হর্স বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বিজ্ঞানীরা অন্য কোথাও এই প্রজাতির এত সংখ্যক প্রাণী খুঁজে পাননি। তবে সি-হর্স আজ বড় হুমকির মুখে পড়েছে। 

জীববিজ্ঞানী হিসেবে শর্শ পালমা বলেন, 'এখানকার প্রথমদিকের গবেষকদের অনুমান অনুযায়ী লেগুনের মধ্যে প্রায় ১২ লাখ প্রাণী ছিল৷ ৩-৪ বছর আগে সেই সংখ্যা দেড় লাখে নেমে যায়। সত্যি নাটকীয় হ্রাস বলা চলে৷'

জেলেদের কার্যকলাপ অবশ্যই অন্যতম সমস্যা৷ ফ্রান্সিসকো মোলিনা ও তার সতীর্থরা ইচ্ছা করে সি-হর্স না ধরলেও সেগুলি বার বার জালে আটকা পড়ে৷ তিনি বলেন, 'এই প্রাণী সি-গ্রাসের ওপর বাস করে৷ জাল মাটির সামান্য উপরে থাকলেও সেগুলি আটকে যায়৷'

রুই কঁসেইসাঁউ-ও একজন জেলে৷ তিনি উপহ্রদের সামনে এক দ্বীপে বাস করেন৷ তিনি সি-হর্স খুব ভালোবাসেন৷ এই প্রাণী দেখেই তিনি বড় হয়েছেন৷ তিনি জানেন, কোন এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও যে কিছু লোক সেই নিয়ম অমান্য করে, সেটাও তার জানা আছে৷ 

রুই বলেন, 'আমরা এখন যেখানে আছি, সংরক্ষিত এলাকা মোটামুটি সেখান থেকে শুরু হয়ে পিছনের ওই অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ পেশাদারী জেলেদের নিয়ে মোটেই সমস্যা নেই৷ বে-আইনি জেলেরা এখানে এসে ট্রলার ব্যবহার করায় সি-হর্সের ক্ষতি হয়৷'

পর্তুগালে সি-হর্স বাঁচানোর উদ্যোগ

শর্শ পালমা তার সি-হর্স প্রজনন প্রক্রিয়ার জন্য খোরাক হিসেবে ক্ষুদ্র চিংড়ির খোঁজ করছেন৷ তার মতে, সমস্যা আসলে আরও জটিল৷ জেলেদের জালে সি-হর্স জড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব৷ কিন্তু সেই জালের কারণে সংবেদনশীল প্রাণীর বাসস্থানের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে৷ 

শর্শ বলেন, 'বে-আইনি মাছ ধরার কারণে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে৷ এই জেলেরা একবার নয়, বার বার রাতে হানা দেয়৷ ফলে বাসস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷'

সে কারণে শর্শ বিকল্পের সন্ধান করছেন৷ তিনি কৃত্রিম সামুদ্রিক শৈবাল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি লেগুনের মধ্যে বিশাল এলাকায় সেটি বসিয়েছেন৷ এমন উপকরণ সি-হর্সের পছন্দ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে৷ 

শর্শ পালমা বলেন, 'কৃত্রিম হওয়া সত্ত্বেও সি-হর্স সেটি খুব পছন্দ করছে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি প্রকৃতির সঙ্গে কার্যত মিশে যাচ্ছে, কারণ অন্যান্য প্রাণীও তার উপর বাসা বাঁধছে৷ ফলে কৃত্রিম বাসস্থান প্রাকৃতিক হয়ে উঠছে৷'

শর্শ ও তার সহকর্মীরা বয়া নিয়ে আইডিয়ার বিষয়েও ভাবনা-চিন্তা করছেন৷ লেগুনের মধ্যে সিগনালের প্রণালী গড়ে তুলতে তারা অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ 

শর্শের মতে, অবশ্যই এমন প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়োজন রয়েছে৷ সি-হর্স বাঁচানোই বৃহত্তর লক্ষ্য৷ শর্শ পালমা মনে করেন, 'এই প্রাণী কখনো এখান থেকে পুরোপুরি উধাও হয়ে গেলে সেটা হবে প্রজাতির সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশাল এক বিপর্যয়৷ আশাকরি কখনো এমনটা হবে না৷ তবে সি-হর্স ধাক্কা কিছুটা সামলে নিয়েছে বলে আমাদের মনে আশা জন্মাচ্ছে৷'

হাজার বছর ধরে যে প্রাণী মানুষকে মুগ্ধ করে চলেছে, তাদেরকে ঘিরে আশা আরও বাড়ছে৷ শুধু রিয়া ফর্মোসার মতো স্বর্গরাজ্যে নয়, বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে এই প্রজাতি মানুষের কার্যকলাপের কারণে হুমকির মুখে পড়ছে৷

Comments

The Daily Star  | English

Fuel to Air India jet engines cut off moments before crash: probe

The Dreamliner was headed from Ahmedabad to London when it crashed, killing all but one of the 242 people on board as well as 19 people on the ground

2h ago