পিরিয়ডে কী খাবেন, কী খাবেন না

পিরিয়ডের সময়টা প্রত্যেক নারীর জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জিং। অনেকেই এ সময় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় পড়েন। পেটে ব্যাথা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, মেজাজ পরিবর্তন, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় অনেকের।

কিছু খাবার এ সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করে। আবার কিছু খাবার সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় কিছু বিশেষ খাবার ডায়েটে যোগ করতে হবে এবং কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইশরাত জেরিনের কাছ থেকে চলুন জেনে নিই পিরিয়ডে কী খাবেন আর কী খাবেন না।

কী খাবেন

পানি: প্রতিদিনই পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন। তবে পিরিয়ড চলাকালীন এটি বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। তাই এই সময় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিহাইড্রেশন থেকে মাথাব্যথা হতে পারে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: পিরিয়ডের সময় শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আয়রন ঘাটতির ফলে এই সময় শরীর ব্যাথা, ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করার মতো সমস্যা দেখা দেয়৷ তাই পিরিয়ড চলাকালীন আয়রন ঘাটতি রোধ করতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাটাশাক, খেজুর, পাকা তেঁতুল, আমড়া ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোধে চর্বি ছাড়া লাল মাংস রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়।

ফল: পানি সমৃদ্ধ ফল যেমন তরমুজ, শশা, আপেল হাইড্রেটেড থাকার জন্য খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, এ সময় ভিটামিন সি যুক্ত ফল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শরীরে আয়রনের যথাযথ শোষণ ও কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি প্রয়োজন। পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, কমলা ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

এই সময় অনেকের মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়৷ তাই যেসব ফল খেতে মিষ্টি সেই ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে, যাতে অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে না যায়।

কলা পটাশিয়াম ও ভিটামিনের খুব ভালো একটি উৎস, যা পিরিয়ডের সময় আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কারণ এটি আপনার বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করবে। তাই এই সময় প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখুন কলা।

সবুজ শাকসবজি: পিরিয়ডের সময় অন্যান্য খাবারে পাশাপাশি ফাইবার জাতীয় খাবারও রাখতে হবে৷ কারণ ফাইবার জাতীয় খাবার অন্ত্রের চলাচল নিয়মিত রাখে এবং দেহের হজমশক্তি উন্নত করে। সবুজ শাকসবজিতে আয়রন ও ভিটামিন বির পাশাপাশি আছে উচ্চমাত্রায় আঁশ, যা কি না হজমে সহায়তা করে৷ ভালোভাবে হজম হওয়া পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকার একটি অপরিহার্য শর্ত৷ তাই প্রতিবেলার খাবারে রাখুন সবুজ শাকসবজি।

আদা: এক কাপ আদা চা পিরিয়ডের লক্ষণগুলোকে কমাতে সাহায্য করতে পারে। বমি বমি ভাব কমাতে আদা সাহায্য করে। তবে খুব বেশি আদা খাবেন না। একদিনে ৪ গ্রামের বেশি আদা খেলে অম্বল ও পেটে ব্যাথা হতে পারে৷

ডার্ক চকলেট: পিরিয়ডের সময় আয়রনের ঘাটতি দূর করতে ডার্ক চকলেটও বেশ ভালো। ডার্ক চকলেট আয়রন এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ।

দই: অনেক নারীরই পিরিয়ডের আগে বা পরে ইস্ট ইনফেকশন হয়। আপনার যদি পিরিয়ডের সময় ইস্ট ইনফেকশন হয় তাহলে দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

এ ছাড়াও, এই সময় আপনার খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। পিরিয়ডের সময়টাতে ডাল, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। প্রোটিন শরীরে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়৷

ভিটামিন বি ১২ ও বি ৬ জাতীয় খাবার যেমন ব্রোকলি, কর্ন, ডিম, আখরোট, চিয়া বীজ ইত্যাদি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। এগুলো পিরিয়ড চলাকালীন মেজাজ পরিবর্তন রোধ করতে সাহায্য করবে৷

কী খাবেন না:  

পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত চিনি ও লবণাক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন৷ এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয়, চা বা কফি, অতিরিক্ত তেল-মশলাদার খাবার এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে যেতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Main Eid congregation held at National Eidgah

With due religious solemnity and fervour, the main congregation of Eid-ul-Azha was held at the National Eidgah.

10m ago