ফরিদপুরে বিএনপির ৩১ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

ফরিদপুরে গতকাল বুধবার বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার পর বিএনপির ৩১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই মামলা করেছে পুলিশ। 
গতকাল বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে এক ছাত্রদলকর্মীকে আটকের সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে গতকাল বুধবার বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার পর বিএনপির ৩১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই মামলা করেছে পুলিশ। 

মামলায় বিএনপির ৩১ নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কোতোয়ালী থানা সূত্র জানায়, সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাবুল করিম এ মামলা করেন।

গতকাল বিকেল ৪টার দিকে শহরের মুজিব সড়ক সংলগ্ন প্রেসক্লাব চত্বরে বিএনপির সমাবেশে যুবলীগ-ছাত্রলীগ হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ও চেয়ার ভাঙচুর করে।

হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৬ কর্মীকে আটক করেছিল পুলিশ। মামলার পর অজ্ঞাত আসামি হিসেবে আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান (৫১) ও সহসভাপতি আলীমুজ্জামান সেলু (৫৪), গোয়ালচামট খোদাবক্স সড়ক এলাকার মো. কামাল মিয়া (৫০), শহরের পূর্ব খাবাসপুর এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন সেজান (২৮), চরকমলাপুর মহল্লার মো. রাজীব হোসেন (৩২), হাটগোবিন্দপুর এলাকার তাওহীদ ইসলাম রাকিজ (২৮), পূর্ব খাবাসপুর এলাকার মো. তরিকুল ইসলাম (২৫) ও নগরকান্দার মাসুদ রানা (২৪)।

কোতোয়ালী থানা সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে করা ওই মামলায় ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এফ এম কাইয়ুম জঙ্গি (৬০), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদারেছ আলী ইছা (৫৮), জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া স্বপন (৫০), জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ (৪০), জুলফিকার হোসেন জুয়েল (৫৫), খন্দকার ফজলুল হক টুলু (৬০), মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন মিলার (৪৮), মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী রতন (৪৮), ফরিদপুর মহানগর যুবদল সভাপতি বেনজীর আহম্মেদ তাবরীজ, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ (৫৪), মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক  মিজানুর রহমান মিনান (৫২), জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. তানজিমুল হাসান কায়েশ (৩১), ফরিদপুর মহানগর শাখা কৃষক দলের আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ (৪৮), জেলা যুবদলের সভাপতি রাজীব হোসেনকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বুধবার বিকেল ৩টার দিকে চৌধুরী নায়েবা ইউসুফ সমর্থিত এফ এম কাইয়ুম জঙ্গির সভাপতিত্বে কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শামা ওবায়েদ সমর্থিত জুলফিকার হোসেন জুয়েলের নেতৃত্বে প্রায় ২৫-৩০ জন প্রেসক্লাবের সামনে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। 

তবে পুলিশের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফরিদপুর বিএনপিতে শামা ওবায়েদের সঙ্গে নায়াব ইউসুফের কোনো বিরোধ নেই। বিএনপির মধ্যে দলীয় কোনো দ্বন্দ্ব নেই।'

'বরং পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল ফাটিয়ে ও ইট ছুড়ে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা করে। পুলিশ বিএনপির দ্বন্দ্বের কথা বলে শাসক দলকে রক্ষা করতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল বুধবার বিকেল ও সন্ধ্যায় বিএনপির যে ৬ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনসহ মোট ১৬ জনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।'

বিদেশে অবস্থানরত ২ নেতাও আসামি

পুলিশের করা এ মামলায় ঘটনার দিন বিদেশে অবস্থানরত ২ বিএনপি নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার ২১ নম্বর আসামি করা হয়েছে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া ওরফে রতনকে। গত বুধবার ওই হামলার ঘটনা ঘটলেও, তার পরিবার জানিয়েছে তিনি ঘটনার আগের দিন মঙ্গলবার দুবাই গিয়েছেন।

তার স্ত্রী ফাতেমা ফারহানা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, রোটারি ক্লাবের এক সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার রব্বানী দুবাই গেছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর তার দেশে ফেরার কথা।

আরেক বিএনপি নেতা এবং ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি সেলিম হোসেন ছেলের চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইতে অবস্থান করছেন। তাকে মামলার ১৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে। 

সেলিমের বড় ভাই ফরিদপুর সদরের গেরদা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আরিফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেলিমের ৬ মাস বয়সী ছেলের হার্টে ছিদ্র ধরা পড়েছে। প্রায় ১ সপ্তাহ আগে সেলিম তার ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই গেছেন। ফিরতে তার আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।'
 

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

9h ago