তামাক চাষের জমিতে ধানের ফলন বিঘায় ৫-৬ মণ কম

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। ছবি: স্টার

লালমনিরহাটে তামাক চাষের কারণে প্রতি হেক্টর জমি থেকে ধানের ফলন প্রায় ৩০ মণ কম পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

চাষিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর লালমনিরহাটে ১৮-১৯ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়। যদিও কৃষি বিভাগের দাবি, তামাক চাষের জমির পরিমাণ ৮-৯ হাজার হেক্টর।

আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর গ্রামের মকবুল হোসেন (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তামাক চাষের জমি থেকে বিঘা প্রতি ৫-৬ মণ ধান কম পেয়েছেন। তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে তামাক চাষের জন্য ব্যবহৃত ৫ বিঘা জমি থেকে তিনি ৪৬ মণ ধান পেয়েছেন। বাকি ৩ বিঘা জমি থেকে পেয়েছেন ৪৪ মণ ধান।

মকবুল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় এক যুগ ধরে প্রতি বছর ৫ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করি। এসব জমিতে অন্য ফসল উৎপন্ন হয় তবে ফসলের উৎপাদন তুলনামূলক কম। তামাক চাষে প্রচুর পরিমাণে সার প্রয়োজন হয়। এ কারণে মাটি কিছুটা পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে এবং তা অন্য ফসল উৎপাদনে ক্ষতির কারণ হয়।'

তবে এসব জমিতে তামাক উৎপাদন সন্তোষজনক বলে তিনি জানান।

একই এলাকার নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ (৬৫) ৩০ বছর ধরে ৮ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তামাক চাষের জমিতে ধানের উৎপাদন বিঘা প্রতি ৫-৬ মণ কম হয়। তামাক চাষ করা হয় না, এমন জমি থেকে বিঘা প্রতি ১৪-১৬ মণ আমন ধান উৎপাদিত হয়। আমার তামাক চাষের জমি থেকে ধান উৎপাদিত হয় ৮-১০ মণ।'

'তারপরও আমরা তামাক চাষ করি, কারণ তামাক কোম্পানিগুলো নির্ধারিত মূল্যে তামাক কেনে, আর একসঙ্গে টাকা পরিশোধ করে,' যোগ করেন তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলার বানিনগর গ্রামের সোলেমান আলী (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তামাক গাছের শিকড়গুলো মাটির গভীরে চলে যায়। এ কারণে তামাক গাছ প্রচুর পরিমাণে মাটির পুষ্টিগুণ শোষণ করে নেয়। তামাক উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে সারের ব্যবহার করতে হয়। এ কারণে তামাক চাষের জমিতে ধানসহ অন্য ফসলের উৎপাদন তুলনামূলক কম হয়ে থাকে।'

তার মোট ১১ বিঘা জমির মধ্যে ৮ বিঘা জমিতে তিনি গত প্রায় ২৫ বছর ধরে তামাক উৎপাদন করছেন। এ বছর তিনি ৩ বিঘা জমি থেকে ধান পেয়েছেন ৪৪ মণ। আর তামাক চাষের ৮ বিঘা জমি থেকে ধান পেয়েছেন ৭০ মণ।

তামাক চাষ বাদ দিলেও এই জমিকে স্বাভাবিক করতে কমপক্ষে ৭-৮ বছর সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একই জমিতে বারবার তামাক চাষের কারণে মাটির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে এসব জমিতে ধানসহ অন্য ফসলের উৎপাদন আশানুরূপ পাওয়া যায় না। কৃষকরা সাময়িক লাভের আশায় তামাক চাষ করে মাটির পুষ্টিগুণকে নষ্ট করছে।'

তামাক চাষের জমিতে ধানের উৎপাদন ৫-৬ মণ কম হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছি। তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তাদের সচেতন করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago