সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার: শীতের সঙ্গে ডিপ্রেশনের সম্পর্ক 

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অল্প বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। স্টার ফাইল ছবি

রোদের অভাবের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ডিপ্রেশনের। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার হলো এক বিশেষ ধরনের ডিপ্রেশন, যা নির্ভর করে ঋতু পরিবর্তনের ওপর। শীতকালে সবসময় হতাশাবোধ, ঘুম থেকে উঠে আলসেমি, সব কাজেই অনীহা, শরীরে ও মনে অবসাদ ঘিরে থাকা, মেজাজ খিটখিটে থাকা, অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলাসহ জামাকাপড় বদলানোর মতো প্রতিদিনের ছোটখাটো কাজেও বেশ আলসেমি হলে সমূহ সম্ভাবনা হলো এটি সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার।

তবে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ই এ ধরনের সমস্যা হয় এবং বিপত্তির শুরু হয় শীতের আগে থেকে ও তারপরের কয়েক মাস। আর এই লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায় সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর।

এসময় শর্করাযুক্ত খাবার খেতে অনেক ভালো লাগে বলে বেশিরভাগেরই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হয়। এ ছাড়াও, এর লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে আছে-

প্রায় প্রতিদিনই বা দিনের বেশিরভাগ সময় অবসন্ন, দুঃখ-হতাশ বোধ করা।

একসময় উপভোগ্য ক্রিয়াকলাপেও আগ্রহ হারানো।

শক্তি বা মনোবল নেই অনুভূত হওয়া এবং অলস বোধ করা।

অতিরিক্ত ঘুম হওয়া।

শর্করার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা, অতিরিক্ত খাওয়া এবং ওজন বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা।

অমনোযোগিতা। 

নৈরাশ্য বা সব কিছুতেই নিজেকে দোষী মনে করা।

বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। 

কারণ

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডারের নির্দিষ্ট কারণ অজানা। কার্যকরী হতে পারে এমন কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে:

সার্কাডিয়ান রিদম

শরৎ এবং শীতকালে সূর্যালোক হ্রাসের মাত্রা শীতের শুরুতে এই অসুবিধা বয়ে আনতে পারে। সূর্যালোক হ্রাস শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে ব্যাহত করে বিষণ্ণতার অনুভূতির দিকে নিয়ে যেতে পারে সাকার্ডিয়ান রিদমে পরিবর্তন এনে।

সেরোটোনিনের মাত্রা

সেরোটোনিন মস্তিষ্কের একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা মেজাজকে প্রভাবিত করে। 

মেলাটোনিনের মাত্রা
 
ঋতু পরিবর্তন শরীরের মেলাটোনিন স্তরের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যা ঘুমের ধরণ এবং মেজাজে ভূমিকা পালন করে।

অর্থাৎ, আমাদের শরীরে থাকা মেলাটোনিন হরমোন দৈনন্দিন জীবনযাপনের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। যদি এই হরমোনের কার্যক্ষমতা কোনোভাবে কমে যায় এবং সেরোটোনিন হরমোনের সঙ্গেও যেহেতু সূর্যালোকের সম্পর্ক আছে, সূর্যালোকের অভাবে এই দুটি হরমোনের নিঃসরণ কমে গেলে শীতকালে এই সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডারের সম্ভাবনা আরও বাড়ে।

ঝুঁকির কারণ

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অল্প বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
এই টার্গেট গ্রুপের আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও ধরে নেওয়া হয়, নারীরা পুরুষদের তুলনায় আবেগের বহিঃপ্রকাশ কম করেন। বিশেষত যারা বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া বেশি জরুরি।

সার্বিকভাবে ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে একই ধরনের বা অন্য ধরনের বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের পারিবারিক ইতিহাস বা রক্তের সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

তীব্র হতাশায় আক্রান্ত থাকলে বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকলে এই বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো ঋতু অনুসারে আরও খারাপ হতে পারে।

বিষুবরেখা থেকে দূরে বসবাসকারী বা নিরক্ষরেখার উত্তর বা দক্ষিণে বসবাসকারীদের মধ্যে এটি বেশি সাধারণ বলে মনে করা হয় শীতকালে সূর্যালোক হ্রাস এবং গ্রীষ্মের মাসগুলোর দীর্ঘদিনের কারণে।

ভিটামিন ডি-এর অভাব হলেও এই সমস্যা প্রকট হয়। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ত্বকে কিছু ভিটামিন ডি তৈরি হয়। ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের কার্যকলাপ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। কম সূর্যালোক, খাবার এবং অন্যান্য উৎস থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হতে পারে।

প্রতিকার

আমেরিকার জার্নাল অব সাইক্রিয়াট্রির তথ্যানুসারে, সেরোটোনিন ক্ষরণ নিঃসন্দেহে কার্যকরী হতাশা প্রতিষেধক একটি ঔষধ এবং আলোক থেরাপি (নিয়ম মাফিক সূর্যালোক গ্রহণ) এর মাধ্যমেই ৬৭ শতাংশ সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার সেরে যায়।

অর্থাৎ, ঔষধ, পূর্ণ বাতাস পরিচলন, আচরণমূলক পরিবর্তন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী হরমোন মেলাটোনিনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। 

এ ছাড়াও, এ ধরনের সমস্যায় কার্যকরী-

ঘর যথাসম্ভব খোলামেলা রাখা, যাতে আলো-বাতাস ঠিকমতো চলাচল করতে পারে।

অফিসে কিউবিকল না থাকলে ব্রেকের সময় খোলা জায়গায় বা কাঁচের জানালার পাশে বসা। মাঝেমধ্যে ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসা। 

নিয়মিত শরীরচর্চা আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।

রোদে হেঁটে আসা, ঘরে রোদ ঢোকার ব্যবস্থা করা, শীতে উজ্জ্বল অথচ হালকা পর্দা ব্যবহার করা, খোলা হাওয়ায় শরীরচর্চা বা যোগাসন, উন্মুক্ত বাতাসে দুপুরের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা।

ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি

যদি লক্ষণগুলো খুব সাধারণ হয় তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হলে, সাধারণ আর স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। বিশেষত: ঘুমের ধরন এবং ক্ষুধা পরিবর্তিত হলে, আরাম বা বিশ্রামের জন্য অ্যালকোহল পান করার প্রবণতা হলে বা নিরন্তর হতাশ থাকলে। আরও গুরুতর হলে সাইক্রিয়াট্রিস্টের সাহায্য নিতে হতে পারে। 

যেহেতু চিন্তাভাবনাই আচার-আচরণের নিয়ন্ত্রক, তাই চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনলে ব্যবহারেও প্রভাব এবং পরিবর্তন আসবে। সর্বদা ইতিবাচক চিন্তার সঙ্গে সঙ্গেই আসবে সামগ্রিক সুস্থতার প্রথম প্রাকৃতিক প্রতিষেধক। 

সূত্র:

মায়ো ক্লিনিক- সমন্বিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিক্ষা এবং গবেষণাধর্মী অলাভজনক আমেরিকান প্রতিষ্ঠান। 

Comments

The Daily Star  | English

Cyber protection ordinance: Draft fails to shake off ghosts of the past

The newly approved draft Cyber Protection Ordinance retains many of the clauses of its predecessors that drew flak from across the world for stifling freedom of expression.

7h ago