শরীরচর্চা কি শিশুর বিষণ্ণতা কমাতে পারে

প্রতীকী ছবি। এ এফপি

শৈশব মানেই প্রাণশক্তিতে ভরপুর দুরন্ত সময়। তবে শিশুকালের ইতিবাচক দিকগুলোর বাইরে কঠিন বাস্তবতাও কখনো কখনো সামনে আসতে শুরু করে। আজকাল প্রায়ই শিশুদের মধ্যে বিষণ্ণতা ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়।

মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম দারুণ ভূমিকা রাখে। ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার চিকিৎসা হিসেবেও অনেকে ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

শারীরিক ক্রিয়াকলাপ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা নির্ধারণ করতে নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এনটিএনইউ) ৬ বছর বয়সী ৮০০ শিশুর ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। তারা ৭ দিনের জন্য শিশুদের কোমরে একটি অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার রেখে দেয়। পরীক্ষার প্রতিটি পর্যায়ে বাবা-মা এবং শিশুরা নিজেও কেমন বোধ করছে, বিষণ্ণ বা উদ্বেগজনিত কোনো সমস্যায় ভুগছে কি না, তা রিপোর্ট আকারে জমা দেয়।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা মাঝারি থেকে উচ্চ মাত্রার শারীরিক ব্যায়াম করেছে, তাদের মধ্যে কয়েক বছর পর বিষণ্ণতার লক্ষণ প্রকাশের সম্ভাবনা কম।

কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আচরণগতভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজম, মনোযোগ-ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ ও হতাশার মতো সমস্যার ক্ষেত্রেও ব্যায়াম কিছুটা সাহায্য করে থাকে।

যে শিশুরা সপ্তাহে ২ বার ৩০-৪০ মিনিট সাইকেল চালায়, তারা সেলফ রেগুলেশনের (সদাচরণ, চারপাশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে বুঝতে পারা এবং সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতা) উন্নত স্তরে থাকে। এ শিশুরা অন্যদের তুলনায় অসদাচরণের কারণে শাস্তিও কম পায়।

শরীরচর্চার সময় এন্ডোরফিন বা 'হ্যাপি হরমোন' নিঃসৃত হয়, যা শিশুদের মেজাজ চাঙা করতে, শক্তির মাত্রা বাড়াতে এবং ঘুম ঠিক করতে সাহায্য করে। এই হরমোন পছন্দসই জ্ঞান অর্জনেও উৎসাহ যোগায়, যেমন ভালো চিন্তাভাবনা করা, নতুন কিছু শেখা, কোনো সমস্যা সমাধান করা। এন্ডোরফিন মানুষকে মনোযোগী করে তোলে। যে শিশুরা এনজাইটি বা উদ্বেগে ভোগে, সাধারণত তারা নিজের চেষ্টায় নেতিবাচক চিন্তার চক্র ভাঙতে পারে না। এক্ষেত্রে শরীরচর্চা তাদের মনোযোগ ঠিক করতে পারে, কষ্টদায়ক চিন্তাভাবনা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে এবং নতুন দক্ষতা তৈরি বা নতুন কিছু শেখা সহজ করে তোলে।

উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন খেলাধুলা শিশুদের আত্মমর্যাদা তৈরিতে দুর্দান্ত ভূমিকা রাখে। যেসব শিশু তাদের পছন্দের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ করতে পারে বা যারা স্কুলের পরে খেলার সুযোগ পায়, তারা আরও আত্মবিশ্বাসী এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে। খেলাধুলা শিশুদের মধ্যে আরও শক্তিশালী বন্ধন তৈরিতেও সহায়তা করে।

বর্তমানে শিশুদের জীবনযাপন, দীর্ঘসময় স্কুলে থাকা ও কম্পিউটার কিংবা মোবাইল বা টেলিভিশন স্ক্রিনে অনেক সময় কাটানোর কারণে এমনকি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা বেড়েছে। তাই অভিভাবকদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে শিশু যাতে খেলাধুলা ও শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন ক্রিয়াকলাপে যুক্ত হয়।

মন খারাপ হলে বা বিষণ্ণতায় ভুগলে অধিকাংশ শিশু-কিশোরই বাড়ির বাইরে বের হতে চায় না, খেলতে চায় না। অন্যদিকে মোবাইল ও কম্পিউটারের প্রতি আকর্ষণের কারণেও তারা বাসার ভেতরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই অভিভাবকদের শিশুর জন্য শারীরিক পরিশ্রম হয়, এমন কোনো মজার ক্রিয়াকলাপ খুঁজে বের করতে হবে, যাতে শিশুরা স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হতে চায়।

বাউন্সি বল, ট্রাম্পোলিন, সাইকেল ও দড়িলাফ— এ ধরনের খেলাধুলায় শিশুকে আগ্রহী করে তোলা যেতে পারে।

শিশুরা সাধারণত বড়দের দেখে শেখে, অনুকরণ করে। তাই বাবা-মা নিজেরাই শিশুর সামনে মোবাইল ও কম্পিউটারে কম সময় কাটাতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করতে পারেন এবং বাসার বাইরে হাঁটা, দৌড়ানো বা সাইকেলিংয়ের অভ্যাস করতে পারেন।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English
Tariffs

Economic lessons from the tariff war

Our understanding of tariffs might not be complete.

9h ago