অতিরিক্ত কঠিন চিন্তা মানুষকে ক্লান্ত করে: গবেষণা

অতিরিক্ত চিন্তা মানুষকে ক্লান্ত করে
ছবি: সংগৃহীত

কঠোর শারীরিক শ্রম আপনাকে ক্লান্ত করে, কিন্তু কঠোর মানসিক শ্রমও যে আপনাকে ক্লান্ত করতে পারে, সেটা জানেন কী? 

আপনি যদি সারাদিন অফিসে কাজ না করে বসে থেকেও দিন শেষে অত্যধিক অবসাদ বা ক্লান্তি বোধ করেন, তবে এটি হতে পারে আপনি খুব বেশি কঠিন চিন্তা করেছেন।
 
চলতি বছরের ১১ আগস্ট, প্যারিসের পিটি-সালপেট্রিয়ের ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষকরা কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলেছেন, মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের অত্যধিক ব্যবহার মানসিক ক্লান্তি তৈরি করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টা কঠিন করে তুলতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম না করে, কঠিন চিন্তা করেও মানুষ অনেক বেশি ক্লান্ত হতে পারে।

গবেষকরা সেখানে বোঝাতে চেষ্টা করছেন, মানসিক অবসাদ আসলে কী। মেশিন যেখানে ক্রমাগত গণনা করতে পারে কিন্তু মানব মস্তিষ্ক পারে না। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, সম্ভবত নিউরাল কার্যকলাপ থেকে উদ্ভূত কোনো বিষাক্ত পদার্থের কারণে সেটা হয়ে থাকে।

পরীক্ষাটির জন্য গবেষকরা একটি কর্মদিবসে ২ দল মানুষের মস্তিষ্কের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করেন। একটি দলকে কঠিন চিন্তা করার দরকার প্রয়োজন পড়ে এমন কাজ দেওয়া হয় এবং অন্য দলকে তুলনামূলকভাবে সহজ কাজ দেওয়া হয়। জটিল কাজ সম্পাদনকারী দলে ক্লান্তির লক্ষণ, যেমন, চোখের তারার প্রসারণ হ্রাস রেকর্ড করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, তীব্র চিন্তার প্রয়োজন এমন কাজ যখন কয়েক ঘণ্টা দীর্ঘায়িত হয়, তখন মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সে সম্ভাব্য বিষাক্ত উপজাত তৈরি হয়। 

ম্যাগনেটিক রেজনেন্স স্পেকট্রোস্কোপি ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেন, উচ্চ জ্ঞানীয় কার্যাবলির কারণে সেখানে গ্লুটামেট জমা হচ্ছে। মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স এলাকায় স্নায়ু কোষগুলো অন্যান্য কোষে সংকেত প্রেরণ করতে এই গ্লুটামেট রাসায়নিক ব্যবহার করে।

গবেষকদের মতে, এটি তখন আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণকেও প্রভাবিত করে। জ্ঞান চর্চার কারণে হওয়া ক্লান্তির কারণে আপনি তখন কম প্রচেষ্টা প্রয়োজন হয় এমন কাজের দিকে চলে যেতে চান। অর্থাৎ যে কাজগুলো করতে বেশি প্রচেষ্টা বা অপেক্ষা করতে হয় না। অর্থাৎ, কঠিন পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের বদলে আপনি তখন কম পরিশ্রমে সহজেই পুরস্কার পাওয়া যায় এমন কাজ করতে আগ্রহী হন। 

প্যারিসের পিটি-সালপেট্রিয়ের ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক ম্যাথিয়াস পেসিগ্লিওন বলেন, 'পূর্ববর্তী তত্ত্বগুলো থেকে ধারণা করা হতো, ক্লান্তি একটি (ইল্যুশন) বিভ্রম। আমরা যে কাজ করছি, তা বন্ধ করে আরও তৃপ্তিদায়ক কোনো কাজ করতে মস্তিষ্কের মাধ্যমে ক্লান্তি তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, 'তবে, আমাদের অনুসন্ধান থেকে দেখা যায়, চিন্তা সংক্রান্ত কার্যাবলির ফলে মস্তিষ্কে একটি সত্যিকারের পরিবর্তন হয়, ক্ষতিকারক পদার্থ জমা হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে ক্লান্তি আমাদের কাজ করা বন্ধের একটি সংকেত হতে পারে, কিন্তু সেটি একটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে। আর তা হলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতার অখণ্ডতা রক্ষার জন্য।'

তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের কঠিন চিন্তার এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার কোনো উপায় আছে কী?

পেসিগ্লিওন বলেন, 'দুঃখজনক হলো, আসলে নেই। তবে আমি এ ক্ষেত্রে পুরানো যে রেসিপিটি প্রয়োগ করব তা হলো- বিশ্রাম এবং ঘুম! ঘুমের সময় সিন্যাপ্স থেকে যে গ্লুটামেট নির্মূল হয় তার বেশ ভালো প্রমাণ রয়েছে।'

এ ছাড়া তিনি মানুষকে ক্লান্ত অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

ফলাফলের অন্যান্য ব্যবহারিক প্রভাবও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা বলছেন, প্রি-ফ্রন্টাল মেটাবোলাইট নিরীক্ষণ গুরুতর মানসিক ক্লান্তি শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। 

ভবিষ্যতের গবেষণায় গবেষকরা জানতে চান কেন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স গ্লুটামেট জমা হয় এবং ক্লান্তির জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল। 

এ ছাড়া মস্তিষ্কে ক্লান্তির এই চিহ্নগুলো ক্যান্সার বা ডিপ্রেশনের মতো অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দিতে পারে কি না সে সম্পর্ককেও তারা জানতে আগ্রহী।

 

তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, সাইটেকডেইলি

গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago