বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ
বগুড়ায় ৩ দিন পর জেলা পার্টি অফিসের তালা খুলে দিয়েছে সম্প্রতি ঘোষিত জেলা কমিটি নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রলীগের একাংশ। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাদের সাথে একাত্মতা ঘোঘণা করে সম্প্রতি ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ্য, অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। এই কমিটিতে ছিনতাইকারী, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নাম আছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
আজ দুপুর দেড়টার সময় জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভা ডাকা হয়। এর পর জেলা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন নেতারা। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ, অযোগ্য এবং অজ্ঞাতদের নিয়ে গঠিত বলে ঘোষণা দেন তারা।
গত ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক (৩০ জনের) একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সজীব সাহাকে সভাপতি এবং আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এর পর থেকে বগুড়ায় পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে ঘোষিত কমিটি বাতিলের জন্য আন্দোলন শুরু করে। জেলা পার্টি অফিসের গেটে তালা ঝুলিয়ে এবং রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে গত তিন দিন ধরে আন্দোলন করছে বগুড়া ছাত্রলীগের একাংশ ।
আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের দাবি এই কমিটি কোনো গ্রহণযোগ্য কমিটি নয়। এটা একটা পকেট কমিটি। যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সে ঢাকায় কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগে তার কোনো অবদান নেই। এছাড়া যারা দীর্ঘ দিন রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন তাদেরকে রাখা হয়নি এই কমিটিতে।
আন্দোলনরত ছাত্রলীগের অনেকের দাবি টাকা-পয়সা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা এমন অবান্তর, আগ্রহণযোগ্য কমিটি দিয়েছে। এই কমিটি বাতিল করে নতুন করে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি দেওয়ার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তারা।
ছাত্রলীগের একাংশের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা আন্দোলনরত ছাত্রলীগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং দাবি আদায় না হয় পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা বলেন, 'তোমাদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বগুড়ায় একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি জানাবো।'
এ সময় তিনি ছাত্রদের আন্দোলনের সময় কোনো সহিংস পথ যেন বেছে নেওয়া না হয় সেই নির্দেশ দেন।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি তার বক্তব্য বলেন, 'কয়েকদিন আগে যে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তা দেখে আমরা অনেকেই বিস্মিত হয়েছি কারণ এই কমিটির অনেককে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ এবং নেতারা চেনেন না।'
জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন বলেন, 'দুইদিন আগে জেলা ছাত্রলীগের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেটা দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কমিটিতে যাদের পদ দেওয়া হয়েছে তারা অনেকে বগুড়া রাজপথ চেনে না। বগুড়া শহরে ছাত্রলীগের ইউনিট কয়টি জিগ্যেস করলে তারা বলতে পারবে না। সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের নাম বলতে পারবে না।'
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দুলু বলেন, 'ঘোষিত এই কমিটিতে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে অনেকে ছিনতাইকারী আছে, অনেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী। এই রকম যারা আছে তাদেরকে বের করে দিয়ে একটি সুসংঘটিত ছাত্রলীগ দিতে হবে। আগামীতে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারে এমন একটি যোগ্য ছাত্রলীগ আমরা চাই।'
জেলা আওয়ামী লীগের অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মনজুরুল আলম মোহন বলেন, 'আপনাদের এই দাবি যুক্তিসংগত এবং ঘোষিত কমিটি যে অবৈধ তা আমি স্বীকার করি। আমি আপনাদের এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। যতক্ষণ এই অযোগ্য কমিটি বাতিল না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের এই আন্দোলন চলবে। তবে আপনারা যে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে তালা ঝুলিয়েছেন সেটা খুলে দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের অনুরোধ করছি।'
Comments