আবারও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি, বাড়ছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ 

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষ ১০ দিনের বেশি সময় ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। এর মধ্যে গতকাল বুধবার থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি। এতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানুষের দুর্ভোগ, বাড়ছে কষ্ট।

এবার বন্যার শুরুতে যত দ্রুত পানি বেড়েছে ততটাই ধীরে নামছে পানি। গত কয়েকদিন ধীরে ধীরে কমার পর আবারও ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বাড়তে শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়েছে পাঁচ সেন্টিমিটার। এর আগে গত চার দিন ধরে পানি কমে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর থেকে ৩৬ সেন্টিমিটারে নেমেছিল।

ছবিটি গতকাল গাইয়াবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

আজ রোববার সকাল ৯টায় গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বিকেলে থেকে পানি আবার বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা। পানি আগামী ১৬ তারিখ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো।

এদিকে বগুড়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। আজ সকাল ৯টায় পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে মাত্র ১ সেন্টিমিটার। এর আগে গতকাল ৪ ঘণ্টায় পানি কমেছিল ১০ সেন্টিমিটার।

বন্যাকবলিত এলাকা দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকার কারণে অনেকের ঘরের খাবার শেষ হয়ে গেছে। অনেকেই জানিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য তারা পাননি। কাজ না থাকায় বেশি বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের দিনমজুররা।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পশ্চিম গাবগাছি চরের রমজান আলী বলেন, 'গত ১০ দিনের বেশি হলো ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে পানিবন্দি আছি। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সাহায্য পাইনি। কম-কাজ না থাকায় ঘরের জমানো খাবারও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে।'

উত্তরে আবারও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার নদীর পানি। গত কয়েকদিনের বন্যায় ডুবে আছে ঘরবাড়ি।
উত্তরে আবারও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার নদীর পানি। গত কয়েকদিনের বন্যায় ডুবে আছে ঘরবাড়ি। ছবিটি গতকাল গাইয়াবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

রমজানের স্ত্রী সহিদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘরে ১৫ বছরের একটি প্রতিবন্ধী ছেলে আছে। ছোটছেলে সিয়াম এখনও সাঁতার শেখেনি। বাড়িতে নৌকা নেই। প্রয়োজন হলেও আমরা ঘরের বাইরে যেতে পারছি না। বাড়ির কাছ দিয়ে কোন নৌকা গেলে তখনই কেবল বাইরে যেতে পারছি।'

ফুলছড়ির সরদারপাড়া  চরের ইউনুস আলী বলেন, 'চরাঞ্চল দীর্ঘদিন পানির মধ্যে থাকায় গবাদি পশুর খাবারের তীব্র সংকট শুরু হয়েছে। এখন টাকা দিয়ে নদীর ওপার থেকে খড় কিনে আনতে হচ্ছে। মানুষেরই খাবার নেই। গরু-ছাগলগুলোকে বাঁচাবো কী করে?

'এবার বন্যার মধ্যে চার দিন আগে নদীভাঙনের শিকার হয়েছে গাবগাছি, সর্দারপাড়া এবং জবজবা চর। গত দুই বছর এই তিন চরে ১০ পরিবার বসতি গড়েছিল। তখন নদী ছিল দুই কিলোমিটার দূরে। এবার বন্যার মধ্যেই নদী ভাঙতে শুরু করেছে। দুই দিনের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে তিন চরের ১০০ পরিবার,' বলেন গাবগাছী চরের মো. রফিক।

ছবিটি গতকাল গাইয়াবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বাটির চরের সুজন মিয়া বলেন, 'বন্যার শুরুতে সামান্য কিছু রিলিফ পেয়েছিলাম। তা অনেকদিন আগেই শেষ। এখন চরাঞ্চলের অনেক মানুষের ঘরে খাবার শেষ। অনেক কষ্টে আছে মানুষ। পানি বাড়লে কষ্টের শেষ থাকবে না।'

বন্যা পরিস্থির উন্নতি কবে হবে জানতে চাইলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে আসবে। তখন আর বন্যা থাকবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Protests continue as Ishraque vows to stay on streets until advisers resign

Protests rolled into this morning as BNP activists and leaders held their ground in front of the mosque, demanding that Ishraque be allowed to take the oath as mayor.

30m ago