আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ: ৪ বছরেও শেষ হয়নি ১৮ মাসের প্রকল্প

আখাউড়া আগরতলা রেলপথ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ কাজ চলছে। ছবিটি উপজেলার মনিয়ন্দ গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ১৮ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এটি চলছে প্রায় ৪ বছর ধরে।

প্রকল্পটির মেয়াদ এই পর্যন্ত ৪ দফা বাড়িয়ে এখন ২০২৩ সালের জুন ধরা হয়েছে।

সাড়ে ১০ কিলোমিটার রেলপথটির বাংলাদেশ প্রান্তের সাড়ে ৬ কিলোমিটার অংশের অনেক স্থানে এখনো মাটি ভরাট বাকি। সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রায় শেষ হলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস হাউজ নির্মাণ কাজ হয়েছে ৪০ ভাগ।

ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সম্যাকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকৌশলী রিপন শেখের দাবি, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই তারা এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইতোমধ্যে ভারত থেকে রেললাইন চলে এসেছে। স্লিপারও প্রায় এসে গেছে। মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।'

আখাউড়া আগরতলা রেলপথ
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণে একটি অংশে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। ছবিটি উপজেলার মনিয়ন্দ গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

তবে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভারতের আগরতলা অংশের কাজ আরও আগেই শেষ হওয়ায় মন্ত্রী প্রকল্পটির অগ্রগতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছিলেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরে এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে ২০২০ সালে ২৯ জানুয়ারি করা হয়।

দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি করা হয়। এই সময় সীমার মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া তৃতীয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন ধরা হয়।

চতুর্থবারের মতো প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক প্রকৌশলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেও প্রকল্পটি শেষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা আছে।'

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা রেলস্টেশন থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এই রেলপথ। যদিও শুরুতে প্রকল্পটি ছিল ১৪ দশমিক ২৬ কিলোমিটারের। পরে এর দৈর্ঘ্য কমানো হয়েছে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের সাড়ে ৬ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশনে এসে মিলিত হবে। বিদ্যমান রেললাইনের পূর্বপাশ দিয়ে‌ সমান্তরালভাবে আখাউড়া জংশন স্টেশনে গিয়ে তা মিলিত হবে।

সরেজমিনে দেখে ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ অংশে এখনো চলছে মাটি ভরাটের কাজ। এ ছাড়া, ছোট-বড় প্রায় ১৬ সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে।

অন্যদিকে গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন এলাকায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবন নির্মাণ কাজও প্রায় ৬০ শতাংশ বাকি।

সংশ্লিষ্টরা ডেইলি স্টারকে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আখাউড়া হয়ে ভারতের কলকাতা ও আগরতলা পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ চালু হবে।

তাদের মতে, প্রতিবেশী ২ দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণেও নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ও উপ-আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রেও নতুন করিডোর স্থাপিত হবে। ফলে ২ দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

বহুল আকাঙ্ক্ষিত ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পটি ঢাকা হয়ে আগরতলা এবং কলকাতার মধ্যে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমিয়ে দেবে। প্রকল্পটি চালু হলে ৩১ ঘণ্টার পরিবর্তে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার থেকে দূরত্ব কমে হবে ৫৫০ কিলোমিটার।

Comments

The Daily Star  | English

Protests continue in Khulna for 3rd day demanding KMP commissioner’s removal

Protesters staged a sit-in outside the KMP headquarters, blocking roads and chanting slogans

46m ago