ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি
ফরিদপুরে আগামী ১২ নভেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের সহযোগিতা চেয়েছে জেলা ও মহানগর বিএনপি।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
তিনি বলেন, 'আমরা এ গণসমাবেশ আয়োজনের জন্য সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠসহ ৩টি জায়গা প্রস্তাব করেছি। তবে আমাদের মূল দাবি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ। এ মাঠে সমাবেশ করার জন্য যেন আমরা দ্রুত অনুমোদন পেতে পারি সেজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।'
শামা ওবায়েদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা বিভাগীয় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছি অন্তত ২ মাস আগে। অথচ আমাদের সমাবেশের আগের দিন জেলা আওয়ামী লীগ ফরিদপুর শহরে সমাবেশ মিছিল করার কর্মসূচি দিয়েছে।'
'এ কর্মসূচি উদ্দেশ্যমূলক' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমাদের সমাবেশ করার আগের দিন এ সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানাই। পাশাপাশি প্রত্যাশা করি দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়াতে প্রশাসন এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে। কেননা একটি দলের বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন এ জাতীয় উদ্যোগ দুঃখজনক।'
শামা ওবায়েদ বলেন, 'আমাদের সমাবেশে লোকদের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই। কেউ যাতে কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত না হন, সে ব্যাপারে নজর দিতে হবে। গণসমাবেশ সফল করে সবাই যেন নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পারেন।'
তিনি বলেন, 'বরিশালের মতো ফরিদপুরেও আগামী ১১ ও ১২ নভেম্বর ২ দিনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়- সরকার নার্ভাস হয়ে গেছে, তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। আমি বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতি দাবি জানাই, এ ধর্মঘট তুলে নেওয়া হোক। এ ধর্মঘট অন্যায্য।'
শামা ওবায়েদ বলেন, 'বাস মালিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা জানান, ওপরের নির্দেশে তাদের ধর্মঘট ডাকতে হয়েছে। ওপরের নির্দেশ মানে তো সরকারের নির্দেশ, আমি বুঝি না আমাদের ক্ষতি করতে গিয়ে সরকার কেন জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে।'
তিনি বলেন, 'যত বাধা-বিঘ্ন ঘটানো হোক, বিএনপির নেতাকর্মীরা যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করবে। কোনো বাধা আমাদের পথ বন্ধ করতে পারবে না। গত ১৪ বছর ধরে অনেক দেখেছি। সরকারি দলের কলাকৌশল সব বুঝেছি, কীভাবে প্রতিহত করে, পদদলিত করে মাইলের পর মাইল হেঁটে সমাবেশে যোগ দিতে হয়, তা আমরা আয়ত্ত করে ফেলেছি।'
শামা ওবায়েদ বলেন, 'দেশে যে গণতন্ত্র নেই সেজন্যই বিএনপির গণসমাবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে, বাস ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে, মানুষের ওপর হামলা-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তবে এতে আমার ভয় পাই না। যতদিন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হবে, যতদিন মানুষ তার ভোটের অধিকার পাবে না, যতদিন মানুষকে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাত থেকে বাঁচানো যাবে না, ততদিন বিএনপির এ সংগ্রাম চলবে। তত্ত্বাবধায়ক, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। ইভিএম আমরা মানি না। আমাদের এ আন্দোলনে অন্যান্য দলের সমর্থনও পাচ্ছি।'
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেন, ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রস্তুতি সভা করতে গিয়ে সরকারি দল ও প্রশাসনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। গত ৩০ অক্টোবর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সরকারি দলের সমর্থকদের হামলার কারণে নির্ধারিত জায়গায় তারা সভা করতে পারেননি। ওইদিনই গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালনকালে বিএনপির ১৪ নেতাকর্মীকে পুলিশ থানায় নিয়ে আটকে রেখে রাতে ছেড়ে দেয়। রাজবাড়ীর পাংশায় সরকারি দলের হামলায় প্রস্তুতি সভা করা যায়নি। গত ৩ নভেম্বর ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপালপুরে সরকারি সমর্থক মোটরসাইকেল বাহিনী তাদের সমাবেশে বাধা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসির, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান ও সেলিমুজ্জামান এবং কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফ প্রমুখ।
Comments