পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা: সিলেটে ৪৮ ঘণ্টার পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৪টি, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২টি এবং কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ১টি করে মোট ৮টি পাথর কোয়ারি আছে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৪৮ ঘণ্টার পণ্যবাহী যান ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। একইসঙ্গে দাবি পুরোন না হলে ৩ নভেম্বর থেকে সিলেট বিভাগে পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

সিলেটের জেলা প্রশাসন বলছে, কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি কাজ করছে। যারা পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া যাবে কিনা এবং দেওয়া হলে কী পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

তবে পণ্য পরিবহন শ্রমিকদের এই একদফা দাবিটি 'অযৌক্তিক' হিসেবে উল্লেখ করে পরিবেশ সংরক্ষণে পাথর কোয়ারি বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৪টি, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২টি এবং কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ১টি করে মোট ৮টি পাথর কোয়ারি আছে।

ব্যুরোর তথ্যমতে, গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক 'পাথর উত্তোলনে সমস্যা নিরসনে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি' গঠনের প্রেক্ষিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ও ২ নভেম্বর ২০২০ তারিখের নির্দেশনা অনুযায়ী সব পাথর কোয়ারি ইজারা বন্ধ আছে।

সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ ফয়েজ বলেন, 'সিলেটে অন্য কোনো শিল্প নেই। কেবলমাত্র পাথর শিল্পের ওপর নির্ভর করে পরিবহন মালিকরা এ ব্যবসায় জড়িত আছেন। এই মুহূর্তে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কিস্তিতে কেনা অন্তত ৩০ হাজার ট্রাকের মালিকরা কিস্তি দিতে পারছেন না। এছাড়াও এসব পরিবহনের লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার।'

তিনি বলেন, 'আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হোক। সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি কমিটি থাকুক। যারা পরিবেশসম্মতভাবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পাথর উঠছে কিনা তা তদারকি করবে।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, 'পরিবহন মালিকদের এ দাবি অযৌক্তিক। সিলেটের কোয়ারি যখন থেকে ইজারা দেওয়া হচ্ছে, তখন থেকে তা ম্যানুয়াল বা হাতে উত্তোলনের জন্যই ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কোয়ারি থেকে কখনোই ম্যানুয়ালি পাথর উত্তোলন করা হয়নি। বরং, ভারী যন্ত্র ব্যবহার করে মাটিতে ২০০-৩০০ ফুট গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। প্রশাসনিক নজরদারি এমনকি উচ্চ আদালতের আদেশের পরেও যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। এখন অনুমতি পেলে আবারও একইভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন শুরু হবে।'

তিনি বলেন, 'দেশে উত্তোলিত পাথর মোট চাহিদার মাত্র ৫-৭ শতাংশ মেটাতে পারে, বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি হয়। কিন্তু এ তুলনায় পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এই বিষয়টিকেই বিবেচনায় নিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে অত্যন্ত কার্যকর একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা আশা করবো কোনো অবস্থাতেই পাথর উত্তোলন বিষয়ে সুবিবেচনা ছাড়া নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, 'পাথর উত্তোলনে শ্রমিকরা নয়, বরং লাভবান হন মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যক্তি যারা পাথর ব্যবসা ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত। তাদের স্বার্থেই কখনোই ম্যানুয়ালি পাথর উত্তোলন হয়নি বরং যান্ত্রিক উপায়ে পরিবেশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন হয়েছে। এখন তারাই শ্রমিকদের দোহাই দিয়ে পাথর উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছে।'

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, 'এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি কাজ করছে। তারা সিদ্ধান্ত নিবেন যে পাথর কোয়ারিতে কী পরিমাণ পাথরের মজুদ আছে, তা উত্তোলন করা যাবে কিনা। আর গেলে কী পদ্ধতিতে হবে।'

তিনি বলেন, 'উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কথা পরিবহন শ্রমিকদের জানানো হয়েছে এবং ধর্মঘট না করে কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি এখন আর জেলা প্রশাসনের আওতাধীন নয়। তাই আমরা এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না।'

Comments

The Daily Star  | English

Shutdown is another economic peril

Vowing to continue an indefinite work stoppage and stage a protest march on tax offices, the NBR Reform Unity Council has intensified its demands

8h ago