ত্বকের কোন কাজে লাগে গ্লিসারিন

ছবি: সংগৃহীত

ফ্যাশন অনুষঙ্গে যখন হরকে রকমের পণ্য ছিল না, তখন থেকেই রূপ আর ত্বক ভালো রাখতে গ্লিসারিনের ব্যবহার শুরু হয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সেই ধারায় এতটুকু ছেদ নেই।

উদ্ভিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত এই গ্লিসারিন বর্ণ ও গন্ধহীন। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ। খাঁটি গ্লিসারিন তৈরিতে কোনো রকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না বলে তা ত্বকের জন্যও খুব সুরক্ষিত এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে দীর্ঘক্ষণ। গ্লিসারিনের মধ্যে থাকা ট্রাই হাইড্রক্সি অ্যালকোহল এই কাজটি ভালোভাবে করে। সেই সঙ্গে ত্বক ভালো রাখতে, ত্বক পরিষ্কার রাখতেও ভালো কাজ করে।

শীতকালের ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায় বলে ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়ে। গ্লিসারিন সেই কাজ খুব দ্রুত করতে পারে। তাই টোনার থেকে ময়েশ্চারাইজার, সবকিছুতেই মিশিয়ে নিতে পারেন গ্লিসারিন।

টোনার

১-৪ কাপ গ্লিসারিন এবং ১-২ কাপ গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে এই মিশ্রণ কয়েকদিন রেখে দেওয়া যায়। এতে তুলো ভিজিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা বা স্প্রে বোতলে রেখে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

ময়েশ্চারাইজার

গ্লিসারিন ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। স্কিন ওয়েল বা বাদামের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও একটি বাটিতে ২৫০ মিলি গ্লিসারিন নিয়ে এতে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে বোতলে ভরে রেখে দিয়ে প্রতিদিন রাতে এই মিশ্রণ মুখে, হাতে-পায়ে লাগানো যাবে। বিছানায় যাওয়ার আগে যেন ত্বক এই মিশ্রণ পুরোপুরি শুষে নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছুদিন ব্যবহার করলেই ত্বকের রুক্ষতা কেটে গিয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং নরম হয়ে উঠবে।

শুষ্ক ত্বকের জন্য

শীতকালে সবথেকে বেশি সমস্যা শুষ্ক ত্বকেই দেখা যায়। ত্বকের ধরন যেমনই হোক শীতকালে স্বাভাবিকভাবে তা শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে। আর যাদের ত্বক সারাবছরই শুষ্ক থাকে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও প্রকট। শীতের এই রুক্ষ, শুষ্ক, মলিন আবহাওয়ার অত্যাচার থেকে ত্বককে বাঁচাতে গ্লিসারিনের কোনো বিকল্প নেই।

প্রতিদিন সকালে কোনো ক্রিমবেসড বা জেন্টেল ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করার পর, ত্বক ভেজা থাকা অবস্থাতেই তুলোয় করে অল্প গ্লিসারিন মুখে লাগানো যায়।

ক্লিনজার হিসেবে

গ্লিসারিন ক্লিনজিং এর একটি দুর্দান্ত উপাদান। এটি ত্বকের আর্দ্রতা স্তর বজায় রাখার সময় বাহ্যিক ত্বকের স্তরের সুরক্ষায় কোনো ক্ষতি না করে তেল এবং ময়লা দূর করতে সহায়তা করে। মেকাপ তুলতেও এটি দ্রুত এবং কার্যকরী সহায়ক।

ত্বকের জৌলুস ফেরাতে

ত্বক খুব বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়লে গ্লিসারিনের সঙ্গে অ্যালোভেরা মাস্ক লাগানো যায়। ২ থেকে ৩টি সতেজ অ্যালোভেরা পাতার জেলের সঙ্গে ২ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে।

অ্যান্টি এজিং রোধে

পাত্রে একটি ডিম নিয়ে এতে ১ চা-চামচ মধু এবং ১ চা-চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে নিতে হবে। ভালভাবে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বকের দৃঢ়তা বাড়বে। বলিরেখা, ফাইন লাইনসসহ বয়সজনিত সমস্যাও কমবে।

ফাটা ঠোঁটের যত্নে

রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে গ্লিসারিনও লাগানো যায়। ঠোঁট ফাটা দূর করতে রাতে ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে উঠে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে হবে।

এছাড়া স্ক্রাবিং এর জন্য গ্লিসারিন খুবই কার্যকরী। মৃত কোষ সরিয়ে ঠোঁটের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চিনির দানার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করলে ঠোঁট ফাটা দূর হবে, কালো দাগ কমে যাবে। সেই সঙ্গে ঠোঁট হবে মসৃণ এবং কোমল।

কন্ডিশনার হিসেবে

শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে গ্লিসারিন। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনারের পরিবর্তে চুলে গ্লিসারিন লাগানো যায়। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিতে হবে। চুল শুকিয়ে গেলে তা কতটা নরম এবং সিল্কি ও মোলায়েম হয়েছে বোঝা যায়। আবার চাইলে না ধুয়েও চুলে রেখে দেওয়া যায়।

স্ক্যাল্পের চুলকানো কমাতে

এর প্রধান কারণও শুষ্কতা। অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে আবার দেখা দেয় খুশকি। চুলকানো বা খুশকি উভয় সমস্যাতেই সমাধান হতে পারে একই। অল্প গ্লিসারিন হাতে নিয়ে হালকা হাতে স্ক্যাল্পে মাসাজ করা যায়। তবে জোরে ঘষা যাবে না। কারণ গ্লিসারিন চুলের গোড়া নরম করে দেয়। ফলে চুল পড়া বাড়তে পারে।

গোড়ালি ফাটা কমাতে

শীতকালে পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। এক্ষেত্রেও কাজে লাগে গ্লিসারিন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে পা ভালভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে এরপর তুলার সাহায্যে খানিকটা গোলাপজল নিয়ে পা ভালভাবে মুছে পেট্রোলিয়াম জেলি এবং গ্লিসারিন মিশিয়ে লাগানো যায়। পুরু করে এই মিশ্রণ লাগিয়ে মোজা পরে শুতে হবে।

বিউটি ওয়ার্ল্ডে গ্লিসারিনের জনপ্রিয়তার কারণ এমনিই হয়নি। গ্রহণযোগ্যতা আর উপযোগিতায় বেশ কার্যকরী এই গ্লিসারিন এর অতিরিক্ত ঘনত্ব, চিটচিটে ভাব অনেকেরই অপছন্দ। সেক্ষেত্রে প্রতিবার ব্যবহারের সময় সামান্য পানি মিশিয়ে ঘনত্ব কমিয়ে নেওয়া যায়। শীতের রুক্ষতাও উপভোগ্য হোক গ্লিসারিনের আর্দ্রতায়।

Comments