সেতুর সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা: বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না তানজিলের

তানজিল
নিহত তানজিল। ছবি: সংগৃহীত

রোববার ছিল তানজিলের গায়ে হলুদ। আর আগামীকাল সোমবার ছিল তার বিয়ে। কিন্তু একটি লঞ্চ দুর্ঘটনা তার জীবন কেড়ে নিয়েছে। হাতে মেহেদী দিয়ে গায়ে হলুদে বসা হলো না তার। 

তানজিলের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলায়। বাবা-মা ও ছোট ভাইসহ থাকতেন গাজীপুরে। সেখানে তার বাবা শাহ আলী স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

তানজিলও একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। পাশাপাশি গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়তেন। 

সম্প্রতি তার নিজ গ্রাম ডামুড্যায় এক মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। বড়িতে বিয়ের আয়োজনে আনন্দ করার কথা ছিল সবার। কিন্তু এই হৈ-হুল্লোড়ের আয়োজন বিষাদে পরিণত হয়েছে। 

রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গোসাইরহাট উপজেলার সাইক্ষায় জয়ন্তিয়া নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ স্বর্ণদীপ একটি সেতুর সঙ্গে ধাক্কা খেলে ঘটনাস্থলেই লঞ্চে থাকা তানজিল ও তার ২ বন্ধু মারা যান এবং আরও ২ জন আহত হন।

তানজিলের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার ডামুড্যায় তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আর রোববার সন্ধ্যায় ছিল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বিয়ের বাজার করে কিছু সামগ্রী আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। শনিবার রাতে বিয়ের বাকি সামগ্রী নিয়ে মা-ভাই ও ৩ বন্ধুকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ডামুড্যাতে যাচ্ছিলেন তানজিল।

তানজিলের মা ও ছোট ভাই লঞ্চের ২ তলায় ছিলেন। তিন বন্ধুকে নিয়ে লঞ্চের ছাদে ঘুমিয়ে ছিলেন তানজিল। 

লঞ্চটি গোসাইরহাট উপজেলার সাইক্ষায় জয়ন্তিয়া নদীতে পৌঁছালে স্থানীয় একটি সেতুর সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই তানজিল ও তার ২ বন্ধু শাকিল (২৩) ও সাগর (২৩) মারা যান। এ সময় আরেক লঞ্চ যাত্রীসহ তানজিলের আরেক বন্ধু হিরা (২৩) আহত হন।

গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম সিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান,  নিহত তানজিলের দুই বন্ধুর মধ্যে সাগর আলীর বাড়ি জামালপুর ও শাকিল আহমেদের বাড়ি টাঙ্গাইল। 

আহত বন্ধু হীরার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। 

ওসি আসলাম সিকদার বলেন, 'নিহত ৩ জন বন্ধু ছিলেন। তারা গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আর তানজিল পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সোমবার ছিল তানজিলের বিয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার সঙ্গে তার ৩ বন্ধু যাচ্ছিলেন।'  

তিনি বলেন, 'শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে স্বর্ণদ্বীপ লঞ্চটি শরীয়তপুরের ডামুড্যার উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ভোরের দিকে মেঘনা থেকে লঞ্চটি জয়ন্তিয়া নদীতে প্রবেশ করে। এই নদীতে একটি সেতুর সঙ্গে লঞ্চের তৃতীয় তলায় থাকা পানির ট্যাংকের ধাক্কা লাগে। এতে পানির ট্যাংক ছিটকে গিয়ে ঘুমন্ত যাত্রীদের ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই ৩ বন্ধু নিহত হন ও ২ জন আহত হন।'

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় লঞ্চের চালক এমরান হোসেন নান্নু ব্যাপারী ও মাস্টার মো. নুরুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Comments

The Daily Star  | English

Local mechanics rev up the road, now govt needs to catch up

Amid the worldwide development of electric vehicles, which is changing the traffic landscape away from fossil fuels, Bangladeshi mechanics brought their humble version of an e-vehicle to the road: a battery-run rickshaw -- awkwardly wired, with visible battery units slinging on the back.

14h ago