মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ

‘অল্পের জন্য বেঁচে গেছি’

সংঘর্ষে উভয় লঞ্চের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চাঁদপুরের হরিণা নামক স্থানে মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় দুই লঞ্চের অন্তত ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন।

লঞ্চ দুটি হলো এমভি কীর্তনখোলা-১০ ও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০।

রোববার ভোররাতে ঘন কুয়াশার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তারা।

বরিশাল নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্ঘটনায় দুটি লঞ্চের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে দুটি লঞ্চই ঢাকায় রয়েছে। এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ এর যাত্রীদের বিশেষ ব্যবস্থায় এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চের মাধ্যমে বরিশাল নদীবন্দরে নিয়ে আসা হয়। 

বরিশালে বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক ও নদীবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'মেঘনা নদীর চাঁদপুরের হরিণা নামক অংশে দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। আমার জানামতে গুরুতর কেউ আহত হয়নি। ঘন কুয়াশার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় দুটি লঞ্চের মাস্টারকে শোকজ করা হয়েছে। তারা জবাব দিলে বিস্তারিত জানতে পারব। বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই, উভয় লঞ্চের সামনের অংশে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।'

যাত্রীরা জানান, রোববার ভোররাত আড়াইটা থেকে পৌনে ৩টার মধ্যে বিকট শব্দে দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রবল চিৎকার, চেঁচামেচি দেখা দেয়। ঘন কুয়াশার মধ্যে কেউই অবস্থান নির্ণয় করতে পারছিল না, ভয়-আতঙ্কে তাদের মধ্যে প্যানিকড অবস্থার সৃষ্টি হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমুল আলম নবীন বলেন, 'আমি কীর্তনখোলা-১০ এর ৩৩৪ নম্বর কেবিনে ছিলাম। আচমকা বিকট আওয়াজে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি। কেবিনের ফ্যান আমার স্ত্রীর ওপর পড়ে, সে কিছুটা আহত হয়। আশপাশের অন্য কেবিনে স্বজনদের কারও পা কেটে গেছে, কেউ ধাক্কায় আহত হয়েছে। আমার আতঙ্ক ছিল, লঞ্চের তলা ফেটে যায় কি না। যদি তলা ফেটে যেত তাহলে আমাদের মেঘনা নদীতে সলিল সমাধি হতো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।'

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্মপরিচালক ইসমাইল হোসেন জানান, এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি সকালে যাত্রীদের নিয়ে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছেছে। দুর্ঘটনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লঞ্চটি কিছুটা দেরিতে ঢাকায় পৌঁছে।  

এ ছাড়া, এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের ৫৮০ যাত্রীকে শুভরাজ-৯ লঞ্চে করে বরিশাল নদীবন্দরে নিয়ে আসা হয়।

এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের যাত্রী মনির হোসেন জানান, রাত সোয়া ২টা থেকে আড়াইটার দিকে তাদের বহনকারী লঞ্চটি মেঘনা নদী দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। সেসময় নদীতে এত ঘন কুয়াশা ছিল যে, একহাত সামনেও দেখা যাচ্ছিল না।  

তিনি বলেন, 'এর মাঝেই হঠাৎ বরিশালগামী এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের সঙ্গে আমাদের বহনকারী এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের  সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় লঞ্চের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।'

মনির হোসেন আরও বলেন, 'সংঘর্ষে এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের শুধু সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, লঞ্চটির সামনে রাখা যাত্রীদের ২০টির বেশি মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'  

ফগ লাইট, রাডার, ইকো সাউন্ডার ও ভিএইচএফসহ আধুনিক নৌ সরঞ্জাম দুটি লঞ্চে থাকার পরও কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। 

তারা আরও জানান, লঞ্চের তলা ফেটে গেলে মেঘনা নদীতে সলিল সমাধি হতো হাজার হাজার যাত্রীর। 

বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, উভয় লঞ্চ মিলিয়ে এক হাজার দুইশ'র বেশি যাত্রী ছিল।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago