শ্রেণিকক্ষে যুবলীগ নেতার নির্মাণসামগ্রী, পাঠদান বিঘ্নিত

মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে সেতুর নির্মাণসামগ্রী। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের মার্চের শেষদিকে পটুয়াখালীর বাউফলে একটি সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেই সেতুর নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে একটি মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে। এতে মাদ্রাসার অন্তত ২ শ্রেণিতে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ দিকে, যাতায়াতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় লোহার বিমের ওপর দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত সেপ্টেম্বরে আবার সেতুটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সুলতানাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পাশে খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুকে ঘিরে।

সেতু নির্মাণ শুরুর পর থেকে গত প্রায় ৭ মাস শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, রিকশাচালকসহ এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে আছেন।

দরপত্র অনুযায়ী নির্মাণ কাজ না করার অভিযোগও আছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় সুলতানাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পাশের খালের ওপর ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মিত হচ্ছে।

ঠিকাদার মো. জামাল হোসেন এ কাজটি পেলেও নির্মাণকাজটি করছেন বাউফল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ।

সেতু নির্মাণকাজ চলাকালে বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও, তা হয়নি। স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য লোহার বিম দেওয়া হয়েছে খালের ওপর। ঝুঁকি নিয়েই তারা চলাচল করছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ ওই বিমের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়েও পার হতে দেখা গেছে।

সুলতানাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. মোশারফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো অনুমতি ছাড়াই মাদ্রাসার ২ শ্রেণিকক্ষ দখল করে সেতুর নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে।'

শ্রেণিকক্ষে নির্মাণশ্রমিকরা থাকায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রেদোয়ান ঝুঁকিপূর্ণ লোহার বিমের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় খালে পড়ে আহত হয়।'

এর আগে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী খালে পড়ে আহত হয়েছে বলেও জানান মাদ্রাসা সুপার।

স্থানীয় রিকশাচালক সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৭ মাস ধরে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এ কারণে ২ কিলোমিটার পথ ঘুরে বাড়ি ফিরতে হয়।'

'যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রী নিয়ে চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

সুমন জানান, আগে প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করতেন। এখন ২০০ বা ২৫০ টাকার বেশি আয় করতে পারছেন না।

শ্রেণিকক্ষে নির্মাণসামগ্রী রাখার বিষয়ে যুবলীগ নেতা শাহজাহান সিরাজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাঠদানের কক্ষে মালপত্র রেখেছি। আশা করছি, খুব কম সময়ের মধ্যে ঢালাই দিতে পারব। ঢালাই হয়ে গেলেই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।'

বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, 'যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তা ভেঙে যাওয়ায় আবার করে দেওয়া হয়েছে।'

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সঠিকভাবে লোহার প্লেট ও লোহার খুঁটির সাটারিং করার পর ঢালাই দিতে বলায় ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। আশা করছি, খুব শিগগির দরপত্র অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।'

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রেণিকক্ষে নির্মাণসামগ্রী রাখার সুযোগ নাই। অবশ্যই বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

World approves $300 bn for poor nations in climate deal

Nearly 200 nations approved Sunday a climate deal that raises to at least $300 billion a year the amount wealthy historic polluters pay poorer countries to take action against global warming

57m ago